চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন সোমবার পদত্যাগ করেছেন|সিএসই বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কিছু কর্তাব্যক্তির সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় অনেকটা অভিমান করেই তিনি এ পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।তার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়াসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবার্তা প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের সঙ্গে তার একান্ত আলাপচারিতা হয়। যার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বিবার্তা২৪.নেট: হঠাৎ করেই বড় একটি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, এর বিশেষ কারণ কি?
মারুফ: দেখুন পৃথিবীর প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটা কারণ থাকে। সে জন্য বলব না যে, কোনো কারণ নেই। তবে হঠাৎ করেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি এটা ঠিক নয়।আমি এখানে যে ভাবে দায়িত্ব পালন করছি সেটা আসলে আর নিতে পারছিলাম না। মেধা কে যদি কাজে না লাগতে পারি তবে শুধু শুধু পদ ধরে রেখে লাভ কি? এটা সবাই পারে না।
বিবার্তা২৪.নেট: শোনা যাচ্ছে বোর্ডের কিছু লোক আপনার কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে।ফলে আপনার ইচ্ছে মতো কাজ করার সুযোগ কমে যাচ্ছিল।তাই কি আপনাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে?
মারুফ মতিন: কথাটি একেবারে অমূলক নয়।বোর্ডে বা এর বাইরে যারা রয়েছেন আমি মনে করি তারাও ক্যাপিটাল মার্কেটের ভালো চায়। কিন্তু তার অর্থ এ হতে পারে না যে কিছু লোকের ইচ্ছা অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেবে। তাহলে বোর্ডের দরকার কি?
বিবার্তা২৪.নেট: তার মানে কি আমরা ধরে নিতে পারি আপনার ওপর কিছু বিষয় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছিল ?
মারুফ মতিন: (নিরব থেকে) আমি ঠিক ওই ভাবে বলতে চাই না। তবে একটা কথা পরিষ্কার বলতে চাই আমি পুতুল হতে চাই না। একজন চাবি দিয়ে দেবে আর পুতুল নাচ চলবে এমন তো হতে পারে না।
বিবার্তা২৪.নেট: পদ ত্যাগের যদি নির্দিষ্ট কারণ জানতে চাই তা হলে কি বলবেন ?
মারুফ মতিন : পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রধান কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। সেটা আমি করতে পারছি না। এই মার্কেটের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করছে। অথচ তাদের কথা তেমন ভাবা হচ্ছে কই? আপনারা জানেন সুশাসন রক্ষা করার জন্য ডিএসই ও সিএসইতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সুশাসন এখনো প্রতিষ্ঠত হয়নি।বিনিযিাগকারীদের অনেক অভিযোগ জমে আছে যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। পদত্যাগের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে অযাচিত হস্তক্ষেপ। সেটা কোনো শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্ববান মানুষ কখনওই মেনে নেবেন না।
বিবার্তা২৪.নেট: ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের কারণে যারা ডিএসই বা সিএসইর প্রেসিডেন্টসহ বড়বড় পদে ছিলেন তারা এখন নীতিনির্ধারক নেই, অনেকে বলে থাকেন ওইসব লোক এখনো বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন?
মারুফ মতিন: কে কি করছে সে বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু বোর্ডে বসে সিদ্ধান্ত কি হবে তা যদি আগেই ঠিক থাকে বা মাইন্ড সেটআপ হয়ে যায় তবে এটা দুঃখজনক।বলতে দ্বিধা নেই এটা হচ্ছে।
বিবার্তা২৪.নেট: সব সময় একটা কথা শোনা যায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে।এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
মারুফ মতিন: শুধু পুঁজিবাজার নয়, আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেই অযোগ্য লোকের অভাব নেই।তবে দেশে কিন্তু যোগ্য লোক অনেক রয়েছেন, যাদের সঠিক জায়গায় বসানো হচ্ছে না। পুঁজিবাজার স্পর্শকাতর সেক্টর।এখানে অবশ্যই যোগ্য লোককে বসাতে হবে।সব কিছু যেন নষ্টদের অধিকারে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বিবার্তা২৪.নেট: সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য কি করা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
মারুফ মতিন: সম্মিলিত প্রচেষ্টা্ এবং কমিটিগুলোর সঠিক সিদ্ধান্তই পুঁজিবাজারকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন হতে হবে।পুঁজি তাদের সুতরাং তাকেই এর নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।
বিবার্তা২৪.নেট: বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মারুফ মতিন : বিবার্তা পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
বিবার্তা/নাহিদ/জাহিদ