নাজমুন নাহার নাজ। চট্টগ্রাম কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। শুরু থেকেই বিজনেস করার পরিকল্পনা ছিল। আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর ই-কমার্স বিজনেস অর্থাৎ অনলাইন মার্কেট প্লেসের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে ই-মার্কেটিং এর ওপরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রথমে শখের বশেই তিনি শুরু করেন ই-কমার্স বিজনেস। মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়ে শুরু করেন অনলাইন শপ-
অনলাইনে প্রযুক্তিনির্ভর ই-কমার্স বিজনেস ক্যারিয়ারের গল্প নিয়ে তিনি কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্রতিবেদক- উজ্জ্বল গমেজ।
বিবার্তা২৪.নেটঃ ই-কমার্স বিজনেস ক্যারিয়ার শুরু করলেন কীভাবে?
নাজমুন নাহারঃ আমার আগে থেকেই ফ্যাশন রিলেটেড কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। এটাকে শখও বলতে পারেন। ৩/৪ বছর আগে থেকেই আমি এই বিজনেসের সাথে জড়িত। শুরুতে অবশ্য আমার কোনো অনলাইন শপ ছিল না। শুধু ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের আর রিলেটিভদের জন্য প্রডাক্ট তৈরি করতাম। নিজের একটা আত্মপরিচয়ের লক্ষ্যে মনে মনে বিজনেস করার সপ্ন দেখতাম। একটা সময় অবশ্য আমি নিজেও চাকুরি খুঁজেছি। ভাল সুযোগ থাকার পরও বিভিন্ন কারণে তখন আর করা হয়ে উঠেনি। যাই হোক, সেই সময় আমি নিজেই অনলাইন কাস্টমার ছিলাম। এফবিতে যখন অন্যদের অনলাইন শপ দেখতাম তখন ভাবতাম ইস! আমার যদি এরকম একটা অনলাইন শপ থাকত! ভাবতে ভাবতে একদিন সাহস করে খুলে ফেললাম আমার সপ্নের শপ। ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকেই শুরু হলো অফিশিয়ালভাবে আমার নতুনভাবে পথ চলা।
বিবার্তা২৪.নেটঃ আপনার অনলাইন শপের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাই।
নাজমুন নাহারঃ আমি বেসিক্যালি জুয়েলারি নিয়ে কাজ করি। আমাদের নিজস্ব ডিজাইন এবং কারিগর দিয়ে তৈরি। নারীরাই মূলত প্রধান ক্রেতা। আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে রকমারি ডিজাইনের গহনার পাশাপাশি পোশাক, বেড কভারও তৈরি করছি। আমরা cash on delivery in Dhaka city & condition delivery in all over বাংলাদেশে করে থাকি। দেশের বাইরের ক্রেতারা Western Union/Money gram/ASAP এর মাধ্যম এ পেমেন্ট দেন এবং FedEx এর মাধ্যমে আমরা product পাঠিয়ে থাকি। দেশের বাইরে থেকে। বর্তমানে USA, UK, SYDNEY, CANADA, GERMANY তে নিয়মিত প্রডাক্ট পাঠাচ্ছি। আবার অনেকে আমার কাছ থেকে হোল সেলে নিয়ে বাইরে নিজেরাই বিজনেস করছেন ।
বিবার্তা২৪.নেটঃ অনলাইন শপে বিজনেসের পুরো প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে বলুন।
নাজমুন নাহারঃ অনলাইন শপে বিজনেসের পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। প্রথমে আপনাকে পছন্দসই একটা নাম দিয়ে পেজ ওপেন করতে হবে। নির্দিষ্ট অনলাইনে বিক্রির জন্য প্রডাক্টগুলো ছবি দিতে হবে। প্রডাক্টের স্যাম্পল দেখে একজন ক্রেতা শপের সঙ্গে যোগাযোগ করে দরদাম ঠিক করে কতগুলো প্রয়োজন আর কত দিনের মধ্যে দিতে হবে তার সব কথা বলে অর্ডার দেন। কী মডেলের, কেমন হবে সব বুঝিয়ে দেন। আগে কিছু অ্যাডভান্স করবেন ক্রেতা। তারপরে সব কাজ বুঝে নেয়ার সময় বাকি সব টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে প্রডাক্ট গ্রহণ করেন। এটা দেশের বাইরে বা ভেতরে সবার জন্য একই কথা। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ক্রেতাদের ঠকানো যাবে না। একবার কোন ক্রেতা পণ্য নিয়ে প্রতারিত হলে আর দ্বিতীয়বার ফিরে আসে না। ক্রেতাদের চাহিদামত মানসম্পন্ন পণ্য দিতে হবে।
বিবার্তা২৪.নেটঃ ই-কর্মাস বিজনেস শুরু করতে গিয়ে আপনি কী ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?
নাজমুন নাহারঃ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে গিয়ে আমি অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। প্রথমে পরিবারের কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই। আমার নিজের উদ্যোগে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই বিজনেস শুরু করি। আমার বন্ধুরা আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। ট্রেড লাইসেন্স নিজেই করি। শপের যত ম্যানেজমেন্টের কাজ সবই একা করেছি। এখন মোটামুটি সবাই আমার কাজের সমর্থন দিচ্ছে। তবুও নানা ধরণের সমস্যা তো আছেই। সংসার সামলানোর পর এক হাতে সব পরিচালনা করা কঠিন কাজ। তারপরও সাধ্যমত সামনের দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছি।
বিবার্তা২৪.নেটঃ ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করতে প্রতিদিন কী ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়?
নাজমুন নাহারঃ প্রতিদিন সংসারের পাশাপাশি বিজনেসে সময় দেয়া, নতুন অর্ডার নেয়া, পুরানো অর্ডারগুলোর কাজ মনিটরিং করা, আবার অর্ডারগুলোর কাজ কারিগরকে গিয়ে বুঝিয়ে দেয়া ইত্যাদি। এছাড়া আমরা যারা অনলাইন বিজনেস করে তাদের আবার ফটোগ্রাফিও করতে হয়। নতুন প্রডাক্টস এর ছবি তুলে এডিট করা, তারপর প্রডাক্ট যেন কপিরাইট না হয় সেজন্য ছবিতে নাম টেগ করা। সাথে প্রডাক্ট ডিটেলসও দিতে হয়। এছাড়া নোটিফিকেশন চেক, মেসেজ রিপ্লাই, কাস্টমার কনভারসেশন তো আছেই।
বিবার্তা২৪.নেটঃ ক্যারিয়ার হিসেবে ই-কমার্স বিজনেসে নারীদের সম্ভাবনা কতটুকু?
নাজমুন নাহারঃ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। দেশের মূল উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীরা এখন পুরুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের মতোই সফল হচ্ছেন। আর আমি মনে করি অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নারীদের জন্য ই-কমার্স আশীর্বাদস্বরূপ হবে। কারণ ই-কমার্সের মাধ্যমে তারা ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এ সেক্টরে নারীরা সংসার সামলানোর সাথে সাথে ঘরে বসেই আয় করার সুযোগ পাবেন। এতে করে নারীরা যেমন নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবেন তেমনি তারা অবদান রাখতে পারবেন দেশের অর্থনীতিতে।
বিবার্তা২৪.নেটঃ দেশের ই- কমার্স বিজনেসকে নিয়ে আপনার ভবিষৎ স্বপ্ন কি?
নাজমুন নাহারঃ আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক বড়। আমাদের দেশীয় বিভিন্ন প্রডাক্টস নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশীয় বেকার নারীদের ফ্যাশান ডিজাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ করে দিতে চাই। ধীরে ধীরে আমার প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হবে। এখানে অনেক নারীরা কাজ করবে। স্বপ্ন দেখি আমার এই "NAAZ Fashion House" একদিন দেশীয় ব্র্যান্ডের নামের সারিতে যোগ হবে। আমার নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টস পরে রাস্তার পাশে বিল বোর্ডে নামিদামি মডেলরা বিজ্ঞাপন দিবে। সারাদেশে/দেশের বাইরে এর সুনাম ছড়াবে।
বিবার্তা২৪.নেটঃ নতুন যারা এই ক্যারিয়ার শুরু করতে চায় তাদেরকে কিছু বলুন।
নাজমুন নাহারঃ যারা ই-কমার্স সেক্টরে কিছু করার কথা ভাবছেন তাদের জন্য বলছি, প্লিজ আর সময় নষ্ট না করে এখনি শুরু করুন, নিজের সপ্নের সাথে পথ চলা। কারণ এই সেক্টরে আগামীদিনে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কারণ আমি নামমাত্র পুঁজি নিয়ে আমার বিজনেস শুরু করেছিলাম। এখন মোটামুটি ভাল একটা অবস্থানের দিকে এগুচ্ছি। ইনশাল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আরো ভাল কিছু করব আশা করছি।
বিবার্তা২৪.নেটঃ আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আমাদের বিবার্তা২৪.নেট পরিবার এবং সকল পাঠকদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
নাজমুন নাহারঃ আপনাদের অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে আমার জীবনের গল্প পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্য আপনাদের সকলকে জানাই অনেক ধন্যবাদ ।
বিবার্তা/উজ্জল/এমহোসেন