’গণতন্ত্রের স্বার্থে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে ফেনী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতেই দেয়া হয়নি। আমরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতাম, তাহলে এসব কি দেশবাসী দেখতে পেত? ২০ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দেশবাসী সরকারের আরও কত অনৈতিক খেলা দেখতে পাবে?’
বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের নিজ কার্যালয়ে বিবার্তা২৪.নেট এর ডেপুটি চিফ রিপোর্টার রাজকুমার নন্দীকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি জোটের শরিক জামায়াতের রাজনীতি, পৌর নির্বাচনসহ সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
বিবার্তা২৪.নেট : ২০ দলীয় জোট বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে তাদের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু দেখা গেল, জোট সিটি করপোরেশনসহ পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তাহলে ব্যাপারটি জোটের জন্য স্ববিরোধী হয়ে গেল কি-না?
আহসান হাবিব লিংকন : এখানে কন্ট্রাডিকটরির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের পরিবর্তন হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেটা সম্ভব নয়। পৌর নির্বাচন তথা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দিয়ে জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এখন বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে? আওয়ামী লীগের প্রতিটি মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ২০ দলীয় জোট প্রার্থিরা নির্বাচনে জয়লাভ করলেও প্রশাসনের পক্ষে কি নৌকার প্রার্থিদের বাদ দিয়ে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা সম্ভব হবে? যদি না হয়, তাহলে গণতন্ত্র হোঁচট খাবে, দেশে অশান্তি নেমে আসবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে অবিলম্বে ২০ দলীয় জোট নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি দিতে হবে।
বিবার্তা২৪.নেট : শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং সেটা ২০ দলসহ সবাই জানেন। তাহলে এটা জেনেও আপনারা কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন?
আহসান হাবিব লিংকন : ফেনী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ দলের প্রার্থিদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতেই দেয়া হয়নি। আমরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতাম, তাহলে এটি কি দেশবাসী দেখতে পেত? ফেনী বেগম খালেদা জিয়ার জেলা। সুতরাং সেখানকার ভোটাররা কী রায় দিত, তা সহজেই অনুমেয়। বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় ঠেকাতেই সেখানে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেয়া হয়নি। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, দেশবাসী সরকারের আরও কত অনৈতিক খেলা দেখতে পাবে? দেশবাসী ও বিশ্ববাসী যাতে বলতে না পারে, আমরা গণতন্ত্রের রীতি-নীতি বর্হিভূত কোনো দল বা জোট। আমরা গণতান্ত্রিক এবং আইন মান্যকারী দল ও জোট হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। সরকারের প্রকৃত চেহারা বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচন করার জন্যই আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
বিবার্তা২৪.নেট : নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে ২০ দলীয় জোট কি তাহলে মোটেই আশাবাদী না?
আহসান হাবিব লিংকন : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ যাদের ভোট দিয়ে চেয়ারে বসিয়েছিলেন তারা কি চেয়ারে আছেন? তারা কি এতদিন পরে সব আগুন সন্ত্রাসী? জনগণ ভোট দিলেও তো তাদের চেয়ারে বসতে দেয়া হচ্ছে না। বেগম খালেদা জিয়া কি এটা জানেন না? জনগণ যদি রায় দিয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থিদের বিজয়ী করেও তাহলেও কি তারা চেয়ারে বসতে পারবেন? তারা যে গাড়ি পোড়ানো মামলার আসামি হবেন না, তা কি বলা যাবে? কিন্তু ২০ দলীয় জোট দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী সেনানী হিসেবে কাজ করতে চায়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট ও ভাতের অধিকারের কথা বলেছেন। তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। জাতির জনকের কন্যার সরকারের দ্বারা যদি এসব হয়, তাহলে মানুষ কার কাছে যাবে?
বিবার্তা২৪.নেট : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের একটি ‘বিতর্কিত’ ভূমিকা ছিল। কিন্তু দল হিসেবে জামায়াত আজ পর্যন্ত সেজন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ভুল স্বীকার কিংবা কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এরপরেও স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে কি?
আহসান হাবিব লিংকন : জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পরে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে সম্ভবত ১৯৮৪-৮৫ সালে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন-এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর পার্লামেন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সেই পার্লামেন্টগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারি দলেও ছিল, বিরোধী দলেও ছিল। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন পার্লামেন্টে তাদের সঙ্গে জামায়াতও ছিল।
আমরা যদি সংসদকে দেশের সর্বোচ্চ ফোরাম ধরি, তাহলে সেই ফোরামে আওয়ামী লীগও জামায়াতের সাথে বসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো বলেনি, জামায়াতের এমপি পার্লামেন্টে থাকলে আমরা বসব না। জামায়াত বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতেও ছিল। ভাবখানা এমন, শুধু বিএনপিই জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। এটি ঠিক নয়। শুধু বিএনপিই জামায়াতকে মেনে নেয়নি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিরও পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব ছিল। তখন তারা কি জামায়াতের সাথে পার্লামেন্টে একসঙ্গে বসেনি?
সর্বোচ্চ ফোরামে বসলে অপরাধ না, রাজনীতির ময়দানে এসে পাশাপাশি বসলে অপরাধ-এটি দ্বিচারিতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাহেব সম্প্রতি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। এজন্য তারা অপেক্ষা করছে। জামায়াতের রাজনীতি করতে পারা না পারার প্রসঙ্গটি এখন আলোচনায় এসেছে, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দেশের আইন মান্যকারী একজন নাগরিক এবং আইন মান্যকারী একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে আমরা তো কোনো নিষিদ্ধ দলের সাথে থাকব না। সরকার যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি নিষিদ্ধ দল হবে। আর সেই নিষিদ্ধ দলের সাথে ঐক্য তো দূরের কথা, সংশ্রবও রাখব না।
জামায়াত ’৯৬ সালে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করে দিয়েছে। এখন সেই আওয়ামী লীগই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচার করছে।
বিবার্তা২৪.নেট : জাতীয় পার্টি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল। অন্যদিকে, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল। দু’টি দলই ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির আদর্শ বাস্তবায়নে জামায়াত কোনো প্রতিবন্ধকতা কি-না?
আহসান হাবিব লিংকন : আওয়ামী লীগ ও জাসদ পরস্পরবিরোধী দুটি রাজনৈতিক দল। এমনকি দল দুটি বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত পরস্পরের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে হত্যাও করেছে। অথচ এখন তারা জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে সমস্যা হয় নাই। অন্যদিকে, জামায়াত-বিএনপি-জাতীয় পার্টিও (জাফর) একসঙ্গে ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। সুতরাং বৈপরিত্য থাকতেই পারে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো বলেছেন, নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে আমাদের এই জোট। জামায়াত দলগতভাবে তাদের আদর্শ প্রচার করছে, বিএনপিও তাদের আদর্শ প্রচার করছে। প্রত্যেকের নীতি, আদর্শ ও লক্ষ্য ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী সরকারের অন্যায়, অনাচার ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।
আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় আসার জন্য কৌশলগত কারণে ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে ব্যবহার করেছে। আবার সেই আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসে আজকে জামায়াত নেতাদের বিচার করছে। আগামীকাল যদি জামায়াত বিএনপি জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে, তাহলে রাজনৈতিক কৌশল আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে। এখানে নীতি-আদর্শের কোনো ব্যাপার নেই।
বিবার্তা২৪.নেট : জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে। অথচ, বাংলাদেশে সব ধর্মের লোক বসবাস করে। সেক্ষেত্রে এখানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা?
আহসান হাবিব লিংকন : দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই মনে করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবেই। সুতরাং খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশে যেমন খ্রিস্টানভিত্তিক দল থাকবে, তেমনি ইহুদী অধ্যুষিত দেশে ইহুদিকেন্দ্রিক দল, বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশে বৌদ্ধভিত্তিক দল এবং যে দেশে হিন্দু বেশি সেখানে হিন্দুত্ববাদী দল থাকাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলমান। তাই এখানে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দল থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যে জামায়াতের অবস্থান ছিলো, সেটি নিয়ে কারো মনে কোনো দ্বিধা ও প্রশ্ন নেই, আমার মনে হয়-জামায়াতেরও নেই। অনেকে মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াত যদি থাকে এবং তারা যদি গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাহলে তাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
একটি দলের মধ্যে উগ্রবাদী, শান্তিবাদী, মধ্যপন্থী- বিভিন্ন শ্রেণির লোক থাকে। অনেকে মনে করেন, জামায়াতে যদি উগ্রপন্থী কেউ থেকে থাকে, তাহলে দল তাদেরকে গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনীতির পক্ষে জামায়াতের অবস্থান। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই তারা রাজনীতি করছে। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী মারা গেলে জামায়াত ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে আনুষ্ঠানিক শোক জ্ঞাপন করেছে। এর মধ্য দিয়ে ভূ-রাজনীতিতে তারা নতুন কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে বাহ্যিকদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। আরও প্রতীয়মান হচ্ছে, তারাও অনেক কিছু রিয়েলাইজ করছে এবং তারা তাদের নীতি থেকে অনেক কিছু পরিবর্তন করার কৌশল গ্রহণ করছে।
বিবার্তা২৪.নেট : মন্ত্রী-এমপিরা বলছেন, বিএনপি জোটের বিগত আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিচার হবে। জোটের একজন নেতা হিসেবে বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
আহসান হাবিব লিংকন : বাংলাদেশে ১৯৭০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে অনেক আন্দোলন হয়েছে। বিএনপি জোটের বিগত ৯২ দিনের আন্দোলনও এরই ধারাবাহিকতার অংশ। আওয়ামী লীগ এ ধরনের আন্দোলনের পথ প্রদর্শক। আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু সরকারের ছত্রছায়ায় তৃতীয় কোনো পক্ষ সেখানে নাশকতা করেছে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বহু নেতা-কর্মী বোমাসহ ধরা পড়েছে। আমি মনে করি, সরকারি দলের মধ্যেও সরকার আছে। তবে এ ক্ষেত্রে আমি বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করব না। কারণ, তারা এ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারেন।
তবে আওয়ামী লীগ, তাদের জোট ও সরকারের মধ্যে কেউ না কেউ আছে, যারা এই জ্বালাও-পোড়াও করে তার দায়-দায়িত্ব বিরোধী দলের ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশলের সুযোগ গ্রহণ করেছে। অনুরূপভাবে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সবাই যে ভাল সেটাও ঠিক নয়। জোটের মধ্যেও তৃতীয় শক্তির পক্ষে কাজ করার লোক থাকতে পারে। তারাও এটা করে থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ জোটের সকল দলই আইন মান্যকারী এবং দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, জাতীয় পার্টিও ক্ষমতায় ছিল। দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান রয়েছে। সুতরাং যে দেশ তারা গড়েছে, সেই দেশ ও দেশের সম্পদ ধ্বংসের জন্য এই দলগুলো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে না।
ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারে এমন দলও আছে যারা সন্ত্রাসবাদ, আতঙ্কবাদের জনক। জাসদসহ আরো কিছু দল রয়েছে, যারা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখতেন। আমি জানি না, এইসব গাড়ি পোড়ানো ও সন্ত্রাসের সঙ্গে তারা জড়িত কিনা? দুই নেত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বাধানোর উদ্দেশ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষ এটা করেছে কিনা, তা-ও জানি না। বিচার বিভাগীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছেন।
বিবার্তা২৪.নেট : জঙ্গিবাদের প্রসঙ্গটি সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে আলোচনায় এসেছে। তবে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপীও এ প্রসঙ্গটি আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আহসান হাবিব লিংকন : সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সমস্যা উত্তোরণের জন্য নানামুখি প্রচেষ্টাও চলছে। আমাদের মাতৃভূমিকে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ মুক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুতে যদি জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করেন, আমার বিশ্বাস-বেগম খালেদা জিয়া তাতে সাড়া দেবেন। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তির আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে পারব।
বিবার্তা/নন্দী/এমহোসেন.