জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি দুর্বল হলে দেশের রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। দু’টি দলের বাইরে এ দলটি নিজস্ব সত্ত্বায় জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্ট করে। এ দলটি যদি কোনোক্রমে নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় তাহলে দেশের রাজনীতির ভারসাম্যও দুর্বল হয়ে পড়বে।
শনিবার ধানমন্ডির বাসভবনে বিবার্তা ২৪.নেটের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
কাজী ফিরোজ রশিদ ১৯৪৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মহাকুমায় সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম কাজী মোজাফফর হোসেন। মা মরহুমা সুফিয়া খাতুন। কাজী মোজাফফর হোসেন গোলালগঞ্জ মহকুমার প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্যদিয়ে কাজী ফিরোজ রশিদ রাজনীতিতে পদার্পন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন।ছাত্র রাজনীতি করা অবস্থায় তিনি তিনবার কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা মহানগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে নিহত হবার পর তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৬ সালে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
পর্যায়ক্রমে তিনি যুব ও ক্রিড়া, ত্রাণ ও পূর্নবাসন, শিল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চের সাবেক সভাপতি। কাজী ফিরোজ রশিদ একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সকলের কাছে একটি পরিচিত মুখ।
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ দূত হওয়ায় জনগণের কাছে নানান প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। আমি বিভিন্ন টিভি টকশোতে গেলেও এনিয়ে নানান প্রশ্নে আমিসহ পার্টির অনেক নেতাকেই বিব্রত হতে হচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় পার্টিতে তিনজন মন্ত্রী থাকায় সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে আমাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সে কারণে জাতীয় পার্টিকে এ সকল মৌলিক বিষয়গুলো সমাধান করে জনগণের সামনে আসতে হবে। জনগণ কোনো সময় এক মাঠে খেলা দেখে না তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন খেলা দেখতে পছন্দ করে।’
দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দেশে যেভাবে আইন-শৃংখলা পরিস্থির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো সরকার এবং আইন-শৃংখলা বাহিনী যেভাবে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিলো সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।তবে সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে দেশী-বিদেশী অনেক চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরোপ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
আসন্ন পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যেভাবে হয়েছে এবারও এভাবেই হবে। এ নির্বাচনকে যদি সরকার বির্তকের উর্ধ্বে রাখতে পারে তাহলে সরকার বিরোধী চক্রান্তকারীরাও হোচট খাবে।’
বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলেও সরকার কঠিন হস্তে দমন করায় বর্তমানে এর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না ‘
বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দুঃখজনক হলেও সত্য কেন্দ্রে থেকে কোনো কর্মসূচি দেয়া হলে বিএনপির নীতি নির্ধারকতো দূরের কথা দলের মধ্য সারির নেতাদের দেখা যায় না। এ অবস্থায় বিএনপি আর খুব সহজে দাঁড়াতে পারবে না বলে আমার মনে হয় না।
জাতীয় পার্টিতে এরশাদ এবং রওশনের মাঝে এখনও দূরত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আমি তাদের মাঝে কখনই দূরত্ব দেখিনি, পানি কাটলে যেমন দু’ভাগ করা যায় না তেমনি এরশাদ রওশনকে কখনও আলাদা করা যাবে না। যারা মনে করেন এরশাদ ও রওশনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তবে হ্যা আমাদের মাঝে কেউ কেউ তাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এনিয়ে কোনো লাভ হয়নি বরং যারা চেষ্টা করেছেন তারা উভয়ের কাছে চিহ্নিত হয়েছেন।’