কেমন আছে দুটি ভাইয়ের একটি বোন

কেমন আছে দুটি ভাইয়ের একটি বোন
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৯:১৬:০৪
কেমন আছে দুটি ভাইয়ের একটি বোন
প্রিন্ট অ-অ+
কার না মনে আছে বাংলা ছায়াছবি ‘ভাই আমার ভাই’র কথা। ৮০’র দশকে মুক্তি পাওয়া ছবিটি যেমন দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলো তেমনি এর গানগুলোও ছিলো শ্রুতিমধুর। স্রোতারা যে গান গুনগুন করে গাইত মনের অজান্তে। 
 
সেই সময় একটি গান মুখে মুখে ফিরেছে তা হচ্ছে- ভাই আমার ভাই তুমি আমার ছোট ভাই, দুটো ভাইয়ের একটি বোন যেন চাঁদেরই মতন। ছবিতে চাঁদের মতো সেই বোনটির অভিনয় দেখে নিরবে চোখের জল ফেলেছে দর্শক।
 
শুধু ভাই আমার কেন- ঝড়ের পাখি, আবার তোরা মানুষ হ, চম্পা চামেলী, রাজ কুমারী চন্দ্রবান এ রকম অসংখ্য জনপ্রিয় ছবির নায়িকা নার্গিস আক্তার। নানা কারণে এক সময়ের রুপালী পর্দার সেই নায়িকা এখন অনেকটাই আড়ালে।
 
নিয়মিত নাটকে কাজ করলেও তাকে আর চলচ্চিত্রে দেখা যায় না।  ভালো গল্প, ভালো নির্মাতা, কিংবা ভালো চরিত্র না পাওয়া সেই সঙ্গে পরিবেশের কারণে দূরে সরে আছেন এ জগৎ থেকে। জনপ্রিয় এই নায়িকা সঙ্গে তার রামপুরার বাসায় বর্তমান এবং অতীত নিয়ে আলাপ চারিতা হয় বিবার্তার প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের সঙ্গে। দর্শকের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
 
রামপুরায় যখন তার বাসায় পৌঁছায় তখন প্রায় দুপুর। নিজেই এসে দরজা খুললেন নার্গিস আক্তার। একগাল হেসে বললেন কেমন আছো। তারপর ভেতরে চলে গেলেন। ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। মুখে হাসি লেগেই আছে। কিছু বলার আগেই তিনি বললেন, সরি একটু দেরি হয়ে গেলো কিছু মনে করো না। তারপর বল কি খবর? জি ভালো। এবার তার কুশালাদি জানতে চাইলাম?
কেমন আছে দুটি ভাইয়ের একটি বোন
উত্তরে বললেন, চলে যাচ্ছে। জীবনের নিয়মেই চলছে জীবন। কিছুই তো থেমে থাকার নয়। চলে যাচ্ছে এক রকম। কাজের প্রসঙ্গ আসতে হতাশার স্বর, এখন শুধু নাটকে কাজ করছি। চলচ্চিত্রের সেই সোনালী দিন আর নেই। নেই ভালো গল্প, ভালো পরিচালক, কমে গেছে ছবির বাজেট, আর যোগ্য লোকের বড়ই অভাব। তা ছাড়া এখন বেশিরভাগ গল্প নায়ক নায়িকা নির্ভর। ফলে আমাদের কাজের সুযোগ কমে গেছে। সেই জন্য অনেক অফার ফিরিয়ে দিতে হয়। কিছুদিন আগেও একটা ছবির অফার ফিরিয়ে দিয়েছি।
 
আপনি রুপালী জগতের মানুষ। এক সময় নিয়মিত এখানে কাজ করতেন। সেইসব দিন মিস করেন না? একটু সময় নিলেন নার্গিস আক্তার। বললেন, মিস তো অবশ্যই করি। এখনও ভালো কাজের অপেক্ষায় থাকি। ভালো কাজের অফার পেলে অবশ্যই আবার চলচ্চিত্রে কাজ করব। মন পড়ে থাকে এফডিসিতে। কিন্তু কে কার খোঁজ রাখে বলো। আপনাদের  সময় যারা কাজ করতেন তাদেল সঙ্গে যোগাযোগ হয় না ? এমন প্রশ্নে যেন স্মৃতি হাতড়াতে বসলেন নার্গিস আক্তার।  দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, হ্যা কেউ কেউ মনে রাখে এ কথা ঠিক। অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। কিছুদিন আগে সুচরিতা আপার বাসায় গিয়েছিলাম, দিলআরা আপা ফোন করে সে দিন খবর নিলেন।  এছাড়া নাটকের সেটে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে হঠাৎ কারো কারো সঙ্গে দেখা হয়। এই তো এইভাবেই যোগাযোগ।
 
আপনার বোনও (আনোয়ারা) স্বনাম ধন্য অভিনেত্রী। তার হাত ধরেই কি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন? হেসে উত্তর দিলেন নার্গিস আক্তার, আসলে ব্যাপারটি তা নয়। তবে অনেকেই এটা ভাবেন। আতাউর ভাই ( খান আতাউর রহমান) আপার সিডিউল নিতে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। সে দিনই উনি প্রথম আমাকে দেখেন। আমি তখন সেভেন কি এইটে পড়ি। আতাউর ভাই আমাকে তার ছবির জন্য পছন্দ করলেন। কিন্তু বেঁকে বসলেন বাবা। তিনি তখনি আমায় অভিনয়ে দিতে রাজি নয়। পরে আতাউর ভাইয়ের অনুরোধেই অভিনয়ে আসা। সে ছবিটি ছিলো ঝড়ের পাখি। সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ছবিটি। তারপর এক এক করে নোলক, রাজকুমারী চন্দ্রবান, মনের মানুষ, আবার তোরা মানুষ হ, ভাই আমার ভাই এমন সব ছবিতে অভিনয় করে ফেললাম। ঝড়ের পাখি আমার পরিচিতি এনে দেয়। এতক্ষণে চা চলে এলো। চায়ে চুমুক দিয়ে জানতে চাইলাম, অভিনয় করতে গিয়ে কোন এমন বিশেষ মুহূর্ত মনে পড়ে। যা মনে করতেই হাসি অথবা কান্না পায় ?
 
তিনিও চায়ে চুমুক দিলেন, বললেন হাসির স্মৃতিতে অনেক আছে। তার চেয়ে বরং একটা ভয়ের কথা বলি। একবার একটা গানের দৃশ্য ধারণ করার জন্য পাহাড়ে ওঠতে হয়েছিলো। তো আমাকে একটু দূর থেকে দৌড়ে আসতে হবে।  আমি দূরে যেতে যেতে এমন স্থানে চলে গেছি যে আর দু পা পেছনে সরলেই পাহাড় থেকে পড়ে যেতাম। আমার ভাই সঙ্গে ছিলেন। বিষয়টি উনি লক্ষ্য করে চেচেয়ে ওঠলেন- নার্গিস সামনের দিকে যা নার্গিস। ভাই না থাকলে সেদিন যে কি হতো ভাবলেই শরীর শিওরে ওঠে।
 
এখন তো ধারাবাহিক নাটকে আপনাকে বেশি দেখা যায় তো আমাদের দেশে যে ধারাবাহিকগুলো হচ্ছে এগুলো কি আসলেই ধারবাহিক নাটক। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
একটু সময় নিলেন নার্গিস আক্তার কিছু ভেবে বললেন- ধারাবাহিক নাটকে একটা সুন্দর গল্প থাকা চাই। বেশির ভাগ নাটকেই তা দেখি না। আমার মতে এগুলোকে ধারাবাহিক বলা যায় না। যার ধারাবাহিকতা নেই সেটা কি করে ধারাবাহিক হবে তুমিই বল? (হাসি)। আবার এমন অনেক ধারাবাহিক আছে গল্প ভালো কিন্তু মাঝপথে এসে কোন কারণে থামিয়ে দিতে হচ্ছে। শেযারবাজার ডটকম নামে একটি নাটকে আমি নায়কের মা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ভালো গল্প নিয়ে নাটকটি এগোচ্ছিলো। কিন্তু মাঝ পথেই নাটকটি শেষ হয়ে যায়। অনেক নাটকে এমন হচ্ছে।
 
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। গোধূলী বেলায় এসে কাকে সবচেয়ে বেশি মিস করেন জানতে চাইলে হাসি বিলীন হলো তার। স্বর নরম করে বললেন। আমাদের সময় একটি ইউনিট ছিলো একটা পরিবারের মতো। সবার সঙ্গে ভালো সর্ম্পক হয়ে যেতে। অনেকের কথা মনে পড়ে আনু ভাই (আনোয়ার হোসেন), মোস্তফা ভাই, জসীম ভাই, জাফর ইকবাল, দিলদার ভাই, রোজি আরো কত মুখ! তবে সবচেয়ে বেশি মিস করি আতাউর ভাইকে। মাটির মানুষ ছিলেন।
 
অভিনয় আর কতোদিন, আপনার সমসাময়িক অনেকেই তো পর্দার আড়ালে চলে গেছেন। এমন কথা শুনে আর সময় নিলেন না নার্গিস আক্তার। বললেন আমি অভিনয় ছাড়া থাকতে পারব না। রক্তে অভিনয় মিশে গেছে আমার। তাই নতুন রাইটারদের জন্য বলব। আমাদের  জন্য ভালো চরিত্র তৈরি করতে। আর পরিচালকদের অনুরোধ করব সব কিছু যেন নায়ক নায়িকা নির্ভর না হয়ে যায়। নতুন প্রজন্মেও কথা আসতেই আফসোস করে বললেন এদের মধ্যে মেধা আছে তবে বেশির ভাগই রাতারাতি স্টার হতে চায়। অনেকই সিনিয়রদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয় না। এটা ঠিক নয়। তোমরাও একদিন সিনিয়র হবে তাই না। আর প্রাপ্য সম্মানটুকু সবারই পাওয়া উচিত। বিদায় বেলা বিবার্তার জন্য শুভ কামনা জানিয়ে বললেন এখন অনলাইনের যুগ। সবকিছুই ইলেকট্রনিক হয়ে যাচ্ছে। আশা করি ভালো করবে বিবার্তা।
 
বিবার্তা//নাহিদ//মাজহার
 
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com