বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তাদের লাশ দাফনের জন্য কাঁদে করে নিয়ে যায় আদরের সন্তান। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। আমি আমার সন্তানের লাশ কাঁদে করে নিয়ে গেছি। এটা যে কতটা কষ্টের কাউকে বুঝানো যাবে না। শুধু তারাই বুঝবেন যারা সন্তান হারা হয়েছেন। তাই সরকারের কাছে আমার দাবি ‘আমি সন্তান হারা হয়েছি। আর কাউকে যেন সন্তান হারা হতে না হয়’।
বুধবার সকালে রাজধানীর শ্যামপুরের পালপাড়ার বাড়িতে ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া ইসমাইল হোসেন নীরবের (৬) বাবা রেজাউল করিমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল বলেন, আমার সন্তানের মতো আর যেন কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি না হয়। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ম্যানহোলগুলো আর যেন খোলা না থাকে। যেগুলো খোলা আছে সেগুলো দ্রুত ঢাকনা দিয়ে আটকে দেয়ার দাবি করছি।
নিহত নীরবের বাবা রেজাউল বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার পশ্চিম বনগাঁও এলাকায় আমার সন্তানকে দাফন করেছি। আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। সে বেশি কথা বলতো না। খাবার সময় বাদে বাকি সময় লেখা-পড়া করতো।
আমার সপ্ন ছিল ওকে চিকিৎসক বানাবো। ও গরীব- অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে সেবা দেবে। কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আমার ছেলে অল্প বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন। ছেলের সঙ্গে ওর বাবা-মায়ের যেন জান্নাতে দেখা হয়।
তিনি আরো বলেন, নীরবের মৃত্যুর ঘটনায় কোন মামলা করবো না। আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে দায়ী করছি না।
উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে খেলা করার সময় শিশুটি রাজধানীর কদমতলী থানার শ্যামপুরে ম্যানহোলে পড়ে যায়। ম্যানহোলের মধ্যে শিশু পড়ে যাওয়ার খবরে আশপাশের হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট।
স্লুইস গেটে স্যুয়্যারেজ লাইনের যে অংশটি বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মিশেছে সেখান থেকে রাতে নীরবকে উদ্ধার করা হয়। তারা নীরবকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার পর রাত ৯টা ১২ মিনিটে চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়।
বিবার্তা/আসাদ/মহসিন