নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না : টেপা

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না : টেপা
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:১৮:০৯
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না : টেপা
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা বলেছেন, ‘দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। এখন যেমনি ঘর থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার কোনো নিশ্চয়তা নেই, তেমনি ঘরের ভিতরেও নিশ্চয়তা নেই।’ পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সন্দেহ পোষণ করে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না।’


শুক্রবার বিজয়নগরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান টেপা কমপ্লেক্সে বিবার্তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা প্রতিবেদক জাহিদ হোসেন বিপ্লব।


আসন্ন পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা জানতে চাইলে টেপা বলেন, এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ  সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়। আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার করতে পারছে না। বাসায়ও থাকতে পারছে না। প্রার্থীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।  মিথ্যা মামলায় জেলে নেওয়া হচ্ছে। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।  


বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বুঝা যায় নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারবে না। জাতীয় পার্টি মনে করে এই দেশ পরিচালনা করতে হলে সঠিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করতে হবে। আর এ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রত্যেকটা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে।


বিএনপি প্রসঙ্গে টেপা বলেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই তারা আজ বিদেশি শক্তির কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। আমাদের দেশ আমরা পরিচালনা করবো, আমাদের সমস্যা আমরা সমাধান করবো। বিদেশিদের হস্তক্ষেপ দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে।


জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, জঙ্গিবাদ আমাদের দেশে আশংকাজনক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে রাজনৈতিভাবে বিবেচনা না করে সত্যিকারের দেশদ্রোহী এবং জঙ্গিবাদীদের স্বমূলে নির্মুল না করা হলে এ দেশ এবং এ জাতিকে খেসারত দিতে হবে। এদেরকে গ্রেফতার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


বর্তমান শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে কোন গণতন্ত্র নেই। এমনকি বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। আজ আমাদের কথা বলার অধিকার নেই, মত প্রকাশের ক্ষমতা নেই, বাক স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমও আজ স্বাধীন নয়। সর্বপরি দেশের জনগণ আজ অসহায়। চারিদিকে শুধু হাহাকার, মানুষের মাঝে সবসময় অজানা এক আতংক বিরাজ করছে। মানুষ আজ এ দুর্দশা থেকে মুক্তি চায়।


নিজ দল সম্পর্কে জানতে চাইলে টেপা বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল। কিন্তু দুঃখের সহিত বলতে হয় আজ বিরোধীদল বলতে বুঝায় সংসদে না যাওয়া, কথায় কথায় ওয়াক আউট করা,  রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা! জাতীয় পার্টি সে রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা সংসদে যাবো এবং আমাদের কথা আমরা বলবো। সরকার আমাদের কথা শুনুক বা না শুনুক এটা তাদের ব্যাপার।

সরকারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী থাকা প্রঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে বিরোধীদল থেকে মন্ত্রী হওয়ার নমূনা আছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা মন্ত্রী আছেন তারা নিজ দলের বাইরে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। আমরা সকলেই এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।


পৌর নির্বাচনে প্রার্থীতা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে পার্টিকে শক্তিশালী করতে পারি নাই।


সরকারের দায়ভার আপনারা নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না।  কেননা বর্তমান সরকার কোন জাতীয় বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে একবারও আমাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।


আপনার চেয়ারম্যান বলেছেন আপনারা তাকে সেভাবে সহযোগিতা করছেন না এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? জবাবে টেপা বলেন, উনার কথা এক’শ ভাগ সঠিক। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকি। আমরা যদি সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতাম তাহলে সারাদেশে জাতীয় পার্টি আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হতো।


সাইদুর রহমান টেপা ১৯৫০ সালের ৫ই মে গোপালগঞ্জ জেলায় সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ৮ ভাই ৫ বোন। পিতা ডা. ফজলুল হক মিয়া গোপালগঞ্জ মহাকুমার মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন এবং গোপালগঞ্জ হরিদাষপুর ইউনিয়নের ৩৩ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন।


ভাই কমরেড ওয়ালিলুর রহমান লেবু মিয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ ও ৯ নং সেক্টরের যৌথ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। লেবু মিয়া কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোরও সদস্য ছিলেন।

১৯৭৩সালে হেমায়েত বাহিনী তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অপর এক ভাই আজিজুর রহমান লাবি গোপালগঞ্জ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ছিলেন। আরেক ভাই জাহিদুর রহমান হরপ ১৯৭২ সালে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজের ভিপি ছিলেন। আর এক ভাই আতাউর রহমান বর্তমানে আমেরিকার লস এঞ্জেলস-এ একটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।


সাইদুর রহমান টেপা ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় কৃষক পার্টিরও সভাপতি।


বিবার্তা/বিপ্লব/মহসিন
 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com