রাজধানীর মগবাজারে বেড়ে ওঠা অজান্তা রিজওয়ানা মির্জা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। দুই বোনের মধ্যে বড় তিনি। ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই। গ্র্যাজুয়েশন শেষের পর বছর দেড়েক কাজ করেন একটি এনজিওতে। তবে মন পড়েছিল স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার দিকে। সেই আগ্রহ থেকেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।
২০১২ সালে অ্যাকাউন্ট খোলেন ওডেক্সে। শুরুটা ছিল ট্রান্সক্রিপশনের কাজ দিয়ে। পরে ধীরে ধীরে রাইটিংও শুরু করেন। এসব কাজের মাঝে ই-বুক, ব্যবসায়িক কনটেন্ট ও আর্টিকাল লেখার কাজও করতে থাকেন। এ ছাড়াও রাইটিং নিয়ে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করে থাকেন দেশ সেরা এ ফ্রিল্যান্সার।
তিনি এবছর বেসিস আউটসোর্সিং অ্যায়ার্ড-২০১৫ এবং ফিমেল আউটসোর্সিং প্রফেশনাল হিসেবে ফ্রিল্যান্সার মিট এ্যাওয়ার্ড পান।
মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার নিজ বাসায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং-এ পাওয়া পুরস্কারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। আলোচনায় ফ্রিল্যান্সিং জগত নিয়ে নানা গঠনমূলক বিষয়ে উঠে আসে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্র্রতিবেদক- উজ্জ্বল এ গমেজ
বিবার্তা২৪.নেট: বেসিস আউটসোর্সিং অ্যায়ার্ড-২০১৫ হাতে পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
রিজওনা মির্জা: বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডটি আমাকে খুব অবাক করেছিল। আমি ভাবিনি এ বছরের অ্যাওয়ার্ডটা আমি পাবো, কারণ আমি এই পেশায় একদম নতুন। এই পুরস্কার দিয়ে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য বেসিসের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই পুরস্কারটা আমাকে সাহায্য করবে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে। আমি মনে করি এই পুরস্কারটা আমার যাত্রার শুরু মাত্র। আমি নিজেকে আরো অনেক দূরে নিয়ে যেতে চাই।
বিবার্তা২৪.নেট: এর পরে আর কি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন?
রিজওনা মির্জা: ফিমেল আউটসোর্সিং প্রফেশনাল হিসেবে ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তে আমি ফ্রিলান্সার মিট অ্যাওয়ার্ডটি পাই। এটি দিয়েছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি, বাংলাদেশি অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিলেন্সার এবং ট্রান্সপে।
বিবার্তা২৪.নেট: আপনার কাছে সফলতার অর্থ কি?
রিজওনা মির্জা: আমার কাছে সফলতার অর্থ নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেখান থেকে আমি আমার দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে নিজেকে তুলে ধরতে পারব। আমি শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো পৃথিবীর ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে অন্যতম হতে চাই। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আন্তর্জাতিক মার্কেটে বেশ কিছু দুর্নাম আছে, যা শুনলে খুব খারাপ লাগে। আমি চাই আমি কিছুটা হলেও যেন বাংলাদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেই দুর্নামগুলো কমাতে পারি।
বিবার্তা২৪.নেট: আপনার ফ্রিল্যান্সিং কাজের বিষয়ে জানতে চাই।
রিজওনা মির্জা: আমি ২০১৩ ডিসেম্বর মাসে ওডেস্কে একাউন্ট খুলি। প্রথম কাজটি পেতে আমার মাত্র ৭ দিন সময় লেগেছিল। সেটি ছিল একটি transcription এর কাজ। ৫ ডলার এর বিনিময়ে একটি ২৫ মিনিটের অডিও transcribe করে দেই। প্রথম কাজে আমি ভালো একটা feedback পাই। একজন বাংলাদেশি, non-native ইংলিশ স্পিকার হিসেবে আমার কাজের রেট বাড়াতে অনেক সময় লেগেছে। প্রথমে আমি ১০০ শব্দের জন্য .৫০$ নিতাম, তারপর ধীরে ধীরে বাড়িয়ে এখন ১০০ শব্দের জন্য ৩ ডলার পাই, অর্থাৎ ২২০টাকার মতো। আমি মুলত একজন লেখক, সম্পাদক ও transcriber। আমি ৫০০০, ১০০০০, ১২০০০, ২০০০০ বা ৩০০০০ শব্দের ই-বুক লিখি; আর্টিকেল লিখি, ব্লগ, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট বা নিউজ লেটার লিখি। আমি এতদিন একাই কাজ করতাম, individual contractor হিসেবে। সম্প্রতি লাস ভেগাসের একটি এসইও কোম্পানি আমাকে হায়ার করেছে তাদের মেইন লেখক হিসেবে। BIZSITENOW নামে এই কোম্পানিতে আমি আছি Writing manager হিসেবে।
বিবার্তা২৪.নেট: প্রায়ই শোনা যায় ফ্রিল্যান্সিং মানে সারা রাত জেগে কাজ করা-এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
রিজওনা মির্জা: অনেকেই মনে করতে পারেন যে ফ্রিল্যান্সিং মানে সারা রাত জেগে কাজ করা, যেটা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়, ফ্রিল্যান্সিং করলেই যে সারা রাত জাগতে হবে এমন কোন বাধ্যতা নেই। শুরুতে আপনাকে হয়ত অনেক বেশি কষ্ট করতে হবে, অল্প কিছু এমাউন্টের জন্য। কিন্তু পরে এই কষ্টটা অনেক কমে আসবে।
বিবার্তা২৪.নেট: ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং কতটা সময়োপযোগী বলে মনে করেন?
রিজওনা মির্জা: ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং দুটোই এখন শুধু সময়োপযোগী নয়, সময়ের দাবি। যদি আউটসোর্সিং-এর কথা বলি- যেখানে ইন্টারনেটের সাহায্যে আমার সামনে পুরো পৃথিবী উন্মুক্ত, সেখানে আমি নিজেকে কেন শুধু নিজের দেশের গণ্ডীর মধ্যে আটকে রাখবো? আমার কর্মস্থল এখন যেমন শুধু নিজের ঘর নয়, পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত। দেখলে মনে হবে যে আমি নিজের বাসায় বসে কাজ করছি, কিন্তু আমার ক্লায়েন্ট কিন্তু ইউএস আর অস্ট্রেলিয়াতে বসে আছেন। তাছাড়া, আমি কাজ করে দেশের জন্য বিদেশি মুদ্রা আনতে পারছি, তা যতটুকুই হোক, সেটা আমার জন্য গর্বের।
তাছাড়া, আমি মনে করি, যাদের পক্ষে সাধারণ ৯টা-৫টা (আসলে, ৮টা-১০টা) চাকরি করা সম্ভব নয়, তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটা খুবই ভালো সুযোগ। বিশেষ করে, একটু রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা, বা যাদের ছোট বাচ্চা আছে, অথবা যারা কোন অফিসে কাজ করতে চায় না, তাদের জন্য। বাংলাদেশে যাতায়াত অনেক কষ্ট, রাস্তায় অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, বা আরও অনেক সমস্যা আছে বাইরে কাজ করার। সেইসব মানুষরা, চাইলেই, বাসায় বসে নিজেদের পছন্দের কাজ করতে পারেন, নিজেদের সময় বুঝে। বিশেষ করে, নতুন মা-দের জন্য এই কাজটা খুব ভালো হবে; তারা এইসঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং নিজের বাচ্চাকে সময় দিতে পারবেন, যেটা একটা ছোট বাচ্চার জন্য খুবই প্রয়োজন।
বিবার্তা২৪.নেট: সময় দেয়ার জন্য বিবার্তা২৪.নেটের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রিজওনা মির্জা: আমার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য আপনার মাধ্যমে সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/মহসিন