শতাব্দী প্রাচীন পৌরসভা যশোর। এ নগর পত্তনের পর ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা ঐতিহ্যবাহী এ পৌরসভার। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এ পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হলেন নতুন প্রজন্মের তরুণ প্রতিনিধি।
স্থানীয় এ নির্বাচনটিও হয়েছে নতুন ধারায়। দেশে এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হলো। নতুন ধারার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নতুন প্রজন্মের মেয়র হয়েছেন জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু।
যশোরে যে কয়েকজন তরুণ রাজনীতি ও ব্যবসায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাভাবিকভাবেই এমন ধারার নব নির্বাচিত পৌরপিতার কাছে নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষা অনেক।
তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, দলমত নির্বিশেষে পৌরবাসী আমাকে মেয়র নির্বাচিত করায় আমি তাদের প্রতি কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করি তারা যে স্বপ্ন নিয়ে আমাকে মেয়রের চেয়ারে বসিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করবো। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও একজন মেয়র পৌরসভার সব দল, সব শ্রেণীর ভোটেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সেই নির্দলীয় মনোভাব আমার আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও মেয়র নির্বাচিত হবার পর আমি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে গেছি। দল-মতের ঊর্ব্ধে থেকে মন দিয়ে পৌরবাসীর সেবা দেবার চেষ্টা করব। কিভাবে আরও আধুনিক পৌরসভা গড়া যায় তা সবার মতামতের ভিত্তিতে করব। পৌরবাসীর সেবাই হবে আমার প্রথম কাজ।
তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বলেন, আমি শপথ নেয়ার পর একশ’ দিনের একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নেব। এরমধ্যে থাকবে যশোর পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করা। ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা। এলইডি বাতি রাস্তায় দেয়া হবে।
পৌরসভা থেকে নাগরিকরা যাতে সব সেবা সহজে পান সেজন্য পৌরসভায় অনলাইন ব্যবস্থা চালু করবো। আর্সেনিক, আয়রনমুক্ত পানি সরবরাহ করবে পৌরসভা। যশোরের একমাত্র পৌর পার্কটিকে নান্দনিকভাবে গড়ে তুলে নাগরিকদের বিনোদন উপযোগী করা হবে।
রেন্টু বলেন, একাত্তরের প্রথম শহীদ চারুকলা করের স্মৃতি সংরক্ষণ, টাউন হলের প্রথম বিজয় সমাবেশ স্থল উন্মুক্ত মঞ্চ সংস্কার, শংকরপুরের বধ্যভুমি সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলার স্মারক নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন- যশোরের সব অবৈধ যানবাহন চলাচল রোধ করে শহরকে যানজটমুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা আমি করব। অবৈধ ফুটপাত দখল মুক্ত করা হবে। এছাড়া শহরের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করব।
তিনি পৌর কর বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন- সব পৌরসভার উন্নয়নের প্রধান শর্তই হলো নিয়মিত কর আদায়। তবে কর বাড়ানো নিয়ে বৈষম্য থেকে গেছে। গরিব মানুষদের কর বাড়লেও ধনী শ্রেণীর বাড়েনি। এ বৈষম্য দূর করা হবে। নতুন করে কর বাড়ানোর কোনো চিন্তা নেই। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর মওকুফ থাকবে। একই সাথে পৌরসভায় যদি কোনো অবৈধ লোক নিয়োগ হয়ে থাকে তা বাতিল করব।
জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি রক্ষার বিষয়ে বলেন- দীঘিটি পুনর্খনন করে এর সৌন্দর্ষ বাড়ানো হবে। মানুষ যাতে সেখানে গিয়ে বিনোদন খুঁজে পায় তারও ব্যবস্থা নেবো। একই সাথে পুকুরটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পূজা উৎসবে প্রতিমা বিসর্জন দেবার সুব্যবস্থা থাকবে।
যশোর পৌরবাসীর কাছে নতুন মেয়রের প্রত্যাশা- পৌরবাসী সব সময় তার পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন। ভুল-ত্রুটি শুধরে দেবেন।
বিবার্তা/তুহিন/কাফী