একজন সফল আর্টিকেল লেখক, সম্পাদক ও transcriber ফ্রিল্যান্সার অজান্তা রিজওয়ানা মির্জা। ২০১২ সালে অ্যাকাউন্ট খোলেন ওডেক্সে। শুরুটা ছিল ট্রান্সক্রিপশনের কাজ দিয়ে। পরে ধীরে ধীরে রাইটিংও শুরু করেন। এসব কাজের মাঝে ই-বুক, ব্যবসায়িক কনটেন্ট ও আর্টিকেল লেখার কাজও করতে থাকেন। এ ছাড়াও রাইটিং নিয়ে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করে থাকেন এ সফল ফ্রিল্যান্সার।
বর্তমানে বিশ্বের মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল লিখে সফলভাবে আউটসোর্সিং কাজ করছেন রিজওয়ানা মির্জা। ঘরে বসে আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আর্টিকেল লেখার নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেটের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি লিখেছেন প্রতিবেদক-উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা২৪.নেট: আপনি তো একজন সফল আর্টিকেল লেখক, সম্পাদক ও transcriber. আউটসোর্সিং কাজে কি ধরনের আর্টিকেল লিখেন?
রিজওয়ানা মির্জা: আমি মূলত নিজেকে ই-বুক লেখক মনে করি। আমার কাজ প্রধানত ই-বুক লেখা। তারপর আর্টিকেল, ব্লগ ও ওয়েবসাইট কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করি। গত দুই বছরে আমার প্রায় ১২০টার মতো ই-বুক লেখা হয়েছে। আপাতত হাতে আরো দুটো আছে। ই-বুকগুলো ৩ হাজার ৫০০ শব্দ থেকে শুরু করে ২৫ হাজার শব্দ পর্যন্ত হয়। আর্টিকেল লিখেছি প্রায় ২৫০টার মতো। এগুলো অনেক রকমের হতে পারে। যেমন- আমার এক ক্লায়েন্ট ছিল ইংল্যান্ডের, যার একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ছিল। তার ব্লগের জন্য আমি প্রতি সপ্তাহে তিনটি আর্টিকেল লিখে দিতাম বিভিন্ন বিষয়ে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত। আবার এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত এক ক্লায়েন্টকে আমি প্রতি মাসে ২০টা আর্টিকেল জমা দেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে। এগুলো আমার প্রতিদিনের কাজ। তাছাড়া প্রায়ই অনেক কাজের জন্য ইনভাইট পাই যাদের ৫০/৬০টা আর্টিকেল লাগে এক মাসের জন্য। কিন্তু আর্টিকেল লিখতে আমার খুব একটা ভালো লাগে না। আমার ই-বুক লিখতে বেশি ভালো লাগে।
বিবার্তা২৪.নেট: এই আর্টিকেলগুলো কীভাবে তৈরি করেন? তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটা সংক্ষেপে বলুন।
রিজওয়ানা মির্জা: কিছু ক্লায়েন্ট পুরোপুরি জানিয়ে দেয় কি ধরনের কন্টেন্ট তারা চায়। ই-বুকের চ্যাপ্টার ভাগ করে দেয় বা কিছু একটা টাইপের আর্টিকেলের লিঙ্ক দিয়ে দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট শুধু ই-বুক/আর্টিকেলের নামটা দিয়ে দেয় এবং কতো শব্দের হবে তা বলে দেয়। বাকি সব রিসার্চ ও লেখা আমার দায়িত্ব।
তৈরির বিষয়টা একেকজন একেকভাবে করে থাকে। আমি ই-বুক বা বড় আর্টিকেলগুলোকে ভাগ করে নেই। চ্যাপ্টার সাজিয়ে নেই। প্রতিটা বিষয়ে রিসার্চ করি ও লিখে ফেলি। আমি দিনে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার শব্দ লিখতে পারি।
বিবার্তা২৪.নেট: একজন নতুন ফ্রিরল্যান্সার কীভাবে এই কাজ খুঁজে পাবে?
রিজওয়ানা মির্জা: দেখুন, বিশ্বের মার্কেটপ্লেসে আর্টিকেল লেখার কাজ অনেক আছে কিন্তু বাংলাদেশিদের জন্য এই কাজ পাওয়া একটু কঠিন। অনেক ক্লায়েন্ট লেখালেখির কাজের জন্য নেটিভ স্পিকার চায়। কিন্তু কেউ যদি আসলেই ভালো লিখে, একটু কষ্ট করে হলেও সে কাজ পাবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা বাংলাদেশি হবার কারণে কিন্তু একজন আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান লেখকের চেয়ে একটু কম পারিশ্রমিক পাই। তবুও এই জায়গায় আসতে আমার এক বছর লেগেছে। এখন আমি চাইলে একজন নেটিভ ম্পিকার থেকে 'একটু' কম পাব, কিন্ত 'বেশি' কম পাব না। তাই ইচ্ছা থাকলে একজন লেখক হিসেবে মার্কেটপ্লেসে সফল হওয়া সম্ভব।
বিবার্তা২৪.নেট: নতুন ফ্রিল্যান্সারকে এই প্রজেক্ট পেতে হলে কি করতে হবে?
রিজওয়ানা মির্জা: লেখালেখির আসলে কয়েকটি ধাপ আছে। প্রথমত, ইউনিক কন্টেন্ট বা সম্পূর্ণ নিজের লেখা। ইন্টারনেট থেকে রিসার্চ করে নিজের মতো করে বানিয়ে লেখা, যেটা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। এই কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ইউনিক কন্টেন্ট লিখতে হলে আসলেই একজন ভালো লেখক হতে হয়। তারপর আছে আর্টিকেল রি-রাইটিং বা একটি আর্টিকেলকে পরিবর্তন করে অন্য শব্দে লেখা। এটা একটু সহজ কাজ কিন্তু এখানেও ভালো ইংলিশ জানতে হয়। এছাড়াও আছে আর্টিকেল স্পিনিং, প্রোডাক্ট রিভিউ, ব্লগে বা ইউটিউবে কমেন্ট করা ইত্যাদি। এগুলো রেট অনেক কম কিন্তু খুব ভালো ইংলিশ লিখতে হয় না। ইউনিক কন্টেন্টের মধ্যেও অনেক ভাগ আছে। ক্লায়েন্ট তার বাজেট অনুযায়ী আর্টিকেল পায়। কম বাজেট থাকলে মাঝারি ধরনের আর্টিকেল আর বাজেট ভালো হলে কোয়ালিটিসম্পন্ন আর্টিকেল। অবশ্য, সবচেয়ে বেশি রেট ফিকশন বা গল্পের বইয়ে পাওয়া যায়।
একজন নতুন ফ্রিলেন্সারকে দেখতে হবে সে আসলে কতো ভালো লিখে। সেএগুলোর মধ্যে কোন কাজটা ভালো পারবে। প্রথমে একটু কম রেটে কাজ করতে হতে পারে কিন্তু ধীরে ধীরে রেট বাড়ানো সম্ভব। একজন ভালো লেখক যদি মন দিয়ে লেখে, তার পক্ষে অনেক ভালো রেটে কাজ করা অবশ্যই সম্ভব।
বিবার্তা২৪.নেট: একজন ক্লায়েন্টকে ধরে রাখতে কি করতে হয়?
রিজওয়ানা মির্জা: ক্লায়েন্টকে ধরে রাখার জন্য ভালো কাজের থেকে বড় কিছুই নেই। আমি যদি আমার ক্লায়েন্টকে ১০০টা আর্টিকেল জমা দেই। তার মধ্যে ১০০টাই আমার সব থেকে ভালো কাজ হতে হবে। কোনো জায়গায় অলস হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে আমি ক্লায়েন্ট হারাবো। আমি যদি আমার ১০০% প্রচেষ্টা দেই, ক্লায়েন্ট পরেরবার আমাকেই খুঁজে বের করবে।
বিবার্তা২৪.নেট: আর্টিকেল লিখে একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে কত টাকা আয় করতে পারে?
রিজওয়ানা মির্জা: শুরুর দিকে প্রতি ১০০ শব্দে $১ হলো সাধারণ মান। সেটা বেড়ে প্রতি ১০০ শব্দে $৫/৬ হওয়া সম্ভব। একটা ৫ হাজার শব্দের ই-বুক/আর্টিকেলের জন্য একজন ভালো লেখক $১০০-$১২০ পেতে পারে। ৫০০ শব্দের আর্টিকেলের জন্য $১০-$১৫ পেতে পারে। আয় হবে এটা আসলে নির্ভর করে একজন লেখক দিনে কতটা লিখতে পারেন। তবে হ্যাঁ, রেগুলার কাজ থাকলে আর দিনে অনেকক্ষণ কাজ করলে একজন লেখক খুব সহজেই মাসে $৮০০-$১০০০ ডলার, বা তার থেকে বেশি আয় করতে পারে।
বিবার্তা২৪.নেট: বাংলাদেশে মানসম্পন্ন আর্টিকেল রাইটারের সংখ্যা খুবই কম। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
রিজওয়ানা মির্জা: বাংলাদেশিদের ভাষা যেহেতু ইংলিশ নয়, তাই এটাই স্বাভাবিক যে আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে অনেকেই ইংলিশ লেখায় একটু কাঁচা। তাছাড়া, ভালো ইংলিশ জানলেই যে ভালো লেখক হওয়া যায় তা কিন্তু নয়। লেখালেখি এমন একটা বিষয় যা শেখা যায় না, ভেতর থেকে আসতে হয়। যারা অনেক বেশি বই পরে তারা লিখতে পারে, এটাও হয়। লেখালেখি এমন জিনিস যে আপনি হয় পারবেন, নয় পারবেন না। বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ লেখার ক্ষেত্রে। নেটিভ স্পিকাররা যে সবাই খুব ভালো লিখে তা না। তাদের অনেকেরই লেখার হাত অসম্ভব খারাপ। একজন ভালো লেখক হতে পারা সম্পূর্ণ নিজের ব্যাপার, যে কেউ ভালো লেখক হতে পারেন। এর সাথে বাংলাদেশি বা বিদেশির কোনো সম্পর্ক নেই।
বিবার্তা২৪.নেট: বাংলাদেশে আর্টিকেল লিখে বৈদাশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভবনা কেমন?
রিজওয়ানা মির্জা: আমি বলব বাংলাদেশে আর্টিকেল লিখে আয় করার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। প্রতি মিনিটে মিনিটে মার্কেটপ্লেসগুলোতে নতুন নতুন কাজ আসছে। সব ধরনের লেখকদের জন্য কাজ আছে। যদি ইংলিশে ভালো হন এবং ভালো লিখতে জানেন তাহলে মার্কেটপ্লেসে আপনার জন্য অনেক কাজ অপেক্ষা করে আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিবার্তা/প্লাবন/জাহিদ