‘পৌনে দুই কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব পাই’

‘পৌনে দুই কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব পাই’
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:১১:১০
‘পৌনে দুই কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব পাই’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার আহসান উদ্দিন নোমান। ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ পেয়েছেন তিনি। মার্কেটপ্লেসে সফলভাবে আউটসোর্সিং কাজ করছেন এই সফল ফ্রিল্যান্সার। প্রথমে একা কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে গিয়ে পড়েন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। পরবর্তীতে ‘কুইক টিম’ নামের একটি সেবামূলক আউটসোর্সিং সংগঠন তৈরি করে সেই চ্যালেঞ্জকেই রুপান্তরিত করেন অফুরন্ত সম্ভাবনায়।
 
ফ্রিল্যান্সার আহসান উদ্দিন নোমান টিম নিয়ে আউটসোর্সিং করার নানা অভিজ্ঞতার ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলেছেন বিবার্তা২৪.নেট-এর প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজের সঙ্গে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: ‘কুইক টিমে’র শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
 
আহসান উদ্দিন নোমান: আসলে কুইক টিমের শুরুটা হয়েছে একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। আমার ফ্রিল্যান্সিং লাইফের প্রথমে একা কাজ করতাম। হঠাৎ একদিন আমেরিকান এক ক্লায়েন্ট আমাকে একটি বড় কাজের প্রস্তাব দেন। যার বাজেট ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। কাজটির সময় ছিল মাত্র ছয় মাস। কিন্তু ওই কাজটি আমার একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি।
 
ক্লায়েন্ট আমার জন্য এক মাস অপেক্ষাও করেছিলেন তারপরও আমি ক্লায়েন্টকে সহযোগিতা করতে পারিনি। তাই একদিন মন খারাপ নিয়ে মাঠে বসেছিলাম। ভাবছিলাম কীভাবে ক্লায়েন্টদের সহযোগিতা করা যায়। মাঠে বসেই একটি  টিম বানানোর পরিকল্পনা করলাম। টিমের নাম রাখলাম ‘কুইক টিম’। ‘কুইক টিম’নামটি এজন্যই রাখলাম যেন ক্লায়েন্ট দেখেই বুঝতে পারেন যে আমরা খুব দ্রুত সার্ভিস দিতে পারি। ২০১২ সালে মাত্র দুইজনকে দিয়ে আমার টিমের কাজ শুরু করি। ২০১৬ সালে এসে টিমের সদস্য সংখ্যা দুই শতাধিক। আজকে  আমরা টিমের মাধ্যমে বড় বড় কাজগুলো খুব সহজেই ক্লায়েন্টকে ডেলিভারি দিতে পারি।
 
‘পৌনে দুই কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব পাই’
বিবার্তা২৪.নেট: ‘কুইক টিমে’র কার্যক্রমগুলো কী?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাজের চাহিদাও অনেক বাড়ছে। কাজ করে শেষ করতে পারছি না। তাই এখন আমরা বেশ কয়টা বিষয় নিয়ে কাজ করি। যেমন- Graphics Design, Web Design, Web Devlopment SEO, Marketing, Softwer Devloment ইত্যাদি।
 
বিবার্তা২৪.নেট: কিভাবে এই টিমের কার্যক্রম পরিচালিত হয়?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: কার্যক্রমগুলো আমাদের টিমের মধ্য থেকে একটি ‘কোর টিমে’র মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আমাদের ‘কুইক টিম’এর প্রতিটা ক্যাটাগরিতে একজন করে দলনেতার মাধ্যমে কাজগুলো পরিচালনা করা হয়। যা খুব সহজেই সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: এই কাজে মাসে আপনাদের আয় কত?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করার উপর আয় নির্ভর করে। ডিসেম্বর মাসে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ একটু কম থাকে। কাজ কম থাকার পরেও আমার টিম ১৫ হাজার ডলার আয় করেছে। গড়ে আমার টিমের ২০০ জন সদস্যের মাসিক আয় ২৫/৩০ হাজার ডলার।
 
বিবার্তা২৪.নেট: টিমগতভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে কী কী রয়েছে?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: টিমের মাধ্যমে কাজ করলে সহজে কোনো বড় কাজ ক্লায়েন্টকে সুন্দরভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দেয়া যায়। ক্লায়েন্টের ৫ দিনের কাজ আমরা ১/২ দিনেই ডেলিভারি দিতে পারি। এতে আমাদের এবং ক্লায়েন্টের উভয়েরই সময় অপচয় রোধ হয়।
 
বিবার্তা২৪.নেট: আর কোনো অসুবিধা?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: টিম  থাকলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি পাওয়া যায়।
 
বিবার্তা২৪.নেট: জেলা পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে আপনাদের কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: জেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় ইন্টারনেট সেবা নিয়ে। ঢাকার তুলনায় তিনগুণ টাকা বেশি দিয়ে ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করতে হয়। তাও আবার রাজধানীর মতো দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাই না।
 
বিবার্তা২৪.নেট: সরকারের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’প্রকল্প দেশের ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: সরকারের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নি’ প্রকল্প একটি মহত উদ্যোগ। কিন্তু আমরা এটির সঠিক ব্যবহার করতে পারছি না। বর্তমানে এই ট্রেনিংয়ের আওতায় যেসব ট্রেইনার আছেন, তাদের অধিকাংশই অদক্ষ। অদক্ষ এই জন্যই বলছি কারণ তারা নিজেরাই ফ্রিল্যান্সার নন। সরকার এই প্রজেক্টের মাধ্যমে যদি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে চায়, তাহলে অবশ্যই স্বীকৃতপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা সম্ভব হবে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: কী করলে দেশে ফ্রিলন্সারের সংখ্যা বাড়ানো যাবে?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: দেশের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বাড়াতে হলে সরকারকে অবশ্যই স্বীকৃতপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সার দিয়ে প্রকল্পগুলোকে সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং পরিচালনার ব্যাবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি যারা নিঃস্বার্থভাবে দেশে ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: ‘কুইক টিম’নিয়ে আপনাদের ভবিষৎপরিকল্পনা কী?
 
আহসান উদ্দিন নোমান: Quick Team নিয়ে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে, যা আমরা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করছি। আমাদের চিন্তাধারা হলো- আমরা নিজেরা কাজ করছি। পাশাপাশি যেন অন্যরাও আমাদের কাছে কাজ শিখে আমাদের মতো করে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করছি। ২০১৫ সালে আমরা Quick Team এর পক্ষথেকে ২০০ জনকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বর্তমানে যারা সবাই কাজ করছেন এবং আয় করছেন। আমরা ২০১৬ সালের  মধ্যে আরো ৩০০ জনকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
 
বিবার্তা/উজ্জ্বল/জাহিদ/কাফী
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com