দীর্ঘদিন পরে দেশের পুঁজিবাজারে কিছুটা সুদিনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই অবস্থা বিরাজমান থাকবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টসহ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে তারা বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের চাওয়া-পাওয়া ও পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আমাদের প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের সঙ্গে আলাপ হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের। সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বিবার্তা : অনেক প্রতীক্ষার পর বর্তমানে পুঁজিবাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। অনেকে বলছেন এটা দীর্ঘমেয়াদী হবে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আবু আহমেদ: সত্যি কথা বলতে কি, বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকবে যারা এমনটি বলছেন তারা ভুল বলছেন। কারণ পুঁজিবাজার নিয়ে সঠিক কোনো ভবিষ্যতবাণী কেউ করতে পারেন না। করা উচিতও না। তবে একথা সত্যি বর্তমানে পুঁজিবাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা মুশকিল।
বিবার্তা: গত বছর পুঁজিবাজারে প্রায় ডজনখানেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। যার বেশিরভাগই অভিহিত মূল্যের তিন চার গুণ প্রিমিয়াম নিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কতটুকু উপকৃত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আবু আহমেদ: ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আইপিওর মাধ্যমে কিছুটা লোকসান পোষানোর সুযোগ পায়। কিন্তু ইস্যু মূল্য যদি বেশি হয় তবে তারা এখান থেকে তেমন কিছুই পায় না। তাই প্রিমিয়াম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরো হিসাবি হওয়া দরকার। অধিমূল্য সুখকর নয়।
বিবার্তা: বিনিয়োগকারীরা চান প্রিমিয়ামহীন আইপিও। তাদের এই চাওয়াটা কতোটা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত ?
আবু আহমেদ: পৃথিবীর সব দেশের শেয়ারবাজারে প্রিমিয়াম নেয়ার রীতি রয়েছে। তাই আমরাও এর বাইরে যেতে পারি না। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে সচেতন হতে হবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি)। প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা উচিত কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার বিবেচনায়। ভালো কোম্পানি কেন প্রিমিয়াম নেবে না ?
বিবার্তা: সম্প্রতি একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রদান করে আইপিওর অনুমোদন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিএসইসি কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে এমনটি করেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য চাইলে কী বলবেন ?
আবু আহমেদ: আমি মনে করি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ এমন ভুল করবে না। তবে সত্যি সত্যি যদি কোম্পানি এমন কিছু ঘটিয়ে থাকে তা দুঃখজনক। একটি কোম্পানির কাগজপত্র জমা দেয়ার পর বিএসইসির এটি ভালো করে যাচাই করা উচিত। আর ভুল কোনো তথ্য পেলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ হেয় করে এসব কোম্পানিকে বাজারে আসতে দেয়া উচিত নয়।
বিবার্তা: গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজার থেকে যে পরিমাণ অর্থ বের হয়ে গেছে, সে পরিমাণ অর্থ বাজারে আসেনি। যার প্রভাব এখনো বিদ্যমান। বাজার সংশ্লিষ্টরা অনেকে এমন মন্তব্য করছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আবু আহমেদ: যারা এমনটি বলছেন আমি তাদের সঙ্গে একমত। শেয়ার, বোনাস শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে বাজার থেকে অনেক টাকা বের হয়ে গেছে। কিন্তু সেই পরিমাণ অর্থ এখনো বাজারে প্রবেশ করেনি। বাজার আর একটু ভালো হলে আশা করি এই সমস্যা থাকবে না। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বিবার্তা: বিভিন্ন কারণে এখনো বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন। তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
আবু আহমেদ: একটা কথা আমি বার বার বলি, যাদের পুঁজি তাদের নিরাপদে রাখতে হবে। দেখেশুনে ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে তারা অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারেন।
মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আবু আহমেদ: তোমাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা। আশা করি এখানে বেশি বেশি পুঁজিবাজারের সংবাদ পাওয়া যাবে।
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন