‘র‌্যাবের প্রতি মানুষ এখনো আস্থা রাখে’

‘র‌্যাবের প্রতি মানুষ এখনো আস্থা রাখে’
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০১৬, ১৯:৩৭:৫৭
‘র‌্যাবের প্রতি মানুষ এখনো আস্থা রাখে’
মাহমুদা ডলি
প্রিন্ট অ-অ+
এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেছেন, র‌্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের এখনো আস্থা রয়েছে।
 
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে, র‌্যাব সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখবে। অপরদিকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতির উন্নতি হোক, এদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার না ঘটুক, দেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে চলুক তা পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ চায় না। ফলে র‌্যাবের কর্মকাণ্ড ভালোভাবে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ না করেই অনেকে সমালোচনা করে থাকে।
 
রবিবার র‌্যাব সদর দপ্তরে বিবার্তার সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে এ বাহিনীর নানা কার্যক্রম ও লক্ষ্য নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেন কর্নেল জিয়াউল আহসান। 
 
তিনি বলেন, দেশে জঙ্গি রয়েছে। তবে র‌্যাব চায় না কোনো সাধারণ মানুষকে ধরেই জঙ্গি বানাতে। কেউ জঙ্গি কিনা সেব্যাপারে শতভাগ তথ্য প্রমাণাদি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কাউকে জঙ্গি বলতে পারি না। অপরদিকে পুলিশের ক্ষমতা আছে তারা যে কাউকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এটা র‌্যাব পারে না। 
 
তবে র‌্যাব এভাবে যে কাউকে ধরে জঙ্গি বানিয়ে হাসির খোরাক হতে চায় না। বিএনপির ডাক সাইটের দুই শীর্ষ নেতা এম ইলিয়াস আলী এবং সালাহ উদ্দিন আহমেদকে র‌্যাব গুম করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
 
জিয়াউল আহসান বলেন, র‌্যাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সাধারণ মানুষের মধ্যে র‌্যাবকে নিয়ে যে ভীতি ও অনাস্থা তৈরি হয়েছে খুব শিগগিরই তা তারা ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।  
 
চতুর্থবারের মতো ‘পুলিশ পদক’ পেয়েছেন র‌্যাব’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্) কর্নেল জিয়াউল আহসান। 
 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে পাওয়া এ পুরস্কারের জন্য তিনি কতটা যোগ্য বা রাজনৈতিক বিবেচনায় তা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। 
 
উত্তরে তিনি বলেন, কারান্তরীণ হরকাতুল জিহাদ আল বাংলাদেশের (হুজিবি) শীর্ষ নেতারা উপমহাদেশে আল-কায়েদার বিস্তারের লক্ষ্যে ‘একিউআইএস’-এ যোগদানের জন্য ভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন— আমার কাছে আসা এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অভিযান চালিয়ে এর বিস্তার রুখতে সমর্থ হন। 
 
ওই অবদানের কারণেই তাকে রাষ্ট্রপতি পদক দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 
 
তিনি এসময় আরও বলেন, গত বছর রোজার ঈদের পর রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার জন্য খুলনা থেকে রেলপথে ও বরিশাল থেকে নৌপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় জঙ্গিরা। ১ জুলাই ভোর ৫টার দিকে আমার নেতৃত্বে একটি টিম সদরঘাট এলাকায় অপারেশন চালিয়ে একটি গ্রুপকে গ্রেফতার করি। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এর এক ঘণ্টা পরই বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে অন্য একটি জঙ্গি গ্রুপকে গ্রেফতার করা হয়। 
 
ভয়ঙ্কর নাশকতা ছাড়াও তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মাওলানা মাঈন উদ্দীন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহসহ অন্যান্য হুজি নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরের ড্রেনের রড কেটে মুক্ত করা। পরে একইভাবে কাশিমপুর কারাগারে থাকা তাদের নেতাদের মুক্ত করার পরিকল্পনাও ছিল। 
 
এর আগে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের  ‘তাণ্ডব’ থেকে দেশকে রক্ষার স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ পদক পান বলেও জানান কর্নেল জিয়া।
 
২০১০ সালে নোয়াখালীর হাতিয়ার চরে শীর্ষ জলদস্যু বাশার মাঝি গ্রুপের সঙ্গে মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পান তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান। 
 
ওই সময় তিনি ‘বীর’ উপাধিতে ভূষিত হন। এ ছাড়া ২০১১ সালে সুন্দরবনের জল কটকাতে জলদস্যুদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম, সাহসিকতা) পান। এছাড়াও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশব্যাপী আবাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন বলে দাবি করেন জিয়া।
 
জঙ্গি আছে, জঙ্গি নেই- এমন বিতর্কের ব্যাপারে কর্নেল জিয়া বলেন, দেশে জঙ্গি রয়েছে। তবে কে জঙ্গি, আর কে জঙ্গি নয় সে বিষয় জনস্বার্থেই আমাদের নিখুতভাবে তথ্যপ্রমাণাদি দিয়ে দেখতে হবে। যেন এমন না হয়, যে কাউকে ধরে নিজেদের স্বার্থে জঙ্গি সাজিয়ে প্রেস কনফারেন্স ডাকলাম। এসব বিষয় নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। আমাদের উচিত জনগণের কাছে বাস্তবটা তুলে ধরা।
 
জাতিসংঘ ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে র‌্যাবের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত এক বছরে পুলিশের এনকাউন্টারে ৯৪ জন নিহত হয়েছে। আর র‌্যাবের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে ৫৩ জন। যার মধ্যে জলদস্যু শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রয়েছে।
 
কর্নেল জিয়া বলন, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কারো কোনো বক্তব্য নেই। সব দোষ র‌্যাবের। র‌্যাব অপরাধীদের ধরছে, সাধারণ মানুষকে নয়। পশ্চিমা দেশগুলো র‌্যাব চায় না। কারণ তারা চায় না বাংলাদেশের উন্নতি হোক।
 
বিবার্তা/ডলি/মহসিন/কাফী
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com