সম্প্রতি ইনভেস্টমেন্ট করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. ইফতেখার-উজ-জামান। এর আগে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নতুন দায়িত্ব এবং পুঁজিবাজারের খুটিনাটি নিয়ে আলাপ হয় বিবার্তা প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের। বিবার্তার পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
বিবার্তা : নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় বিবার্তা পরিবার থেকে আপনার জন্য শুভ কামনা, কেমন আছেন ?
ইফতেখার-উজ-জামান : জি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছি। আমার পক্ষ থেকেও বিবার্তা পরিবারের জন্য শুভকামনা এবং ধন্যবাদ।
বিবার্তা : আপনি পূর্বে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, দায়িত্ব পেয়ে এমডি হয়েছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার অনুভূতি কীভাবে ব্যক্ত করবেন ?
ইফতেখার-উজ-জামান : আমাকে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া বা আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে। আমার প্রতি তাঁরা যে আস্থা রেখেছেন চেষ্টা করবো তার প্রতি সুবিচার করার।
বিবার্তা : প্রতিষ্ঠানে পুরাতন হলেও নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন । দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন ?
ইফতেখার-উজ-জামান : এখানে যারা দায়িত্বরত তারা সবাই আমার পরিচিত। এমডি হওয়ার পর সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সারাক্ষণ তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি। সব চেয়ে বড় কথা আমি চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়েছি ড. মজিব উদ্দীন আহমেদের মতো একজন দক্ষ লোক। তিনি যেমন কাজে দক্ষ, তেমনি তার জ্ঞানের ভাণ্ডারও অনেক সমৃদ্ধ। কোনো সমস্যা হলে কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আমি উনার সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারবো। পূর্বে আমি উনার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। আশা করছি আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বিবার্তা : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। দায়িত্ব পেয়ে আইসিবি’র জন্য আপনার করণীয় কী ?
ইফতেখার-উজ-জামান : এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছি। ফলে কাজের অভাব নেই। অনেক কাজ রয়েছে। তার মধ্যে বড় কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারীবান্ধব কিছু করা। আপনারা জানেন ২০১০ সালে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা খুব করুন হয়েছে। এখনও তাদের ক্ষত শুকায়নি। ফলে তারা নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ভাবছি কীভাবে তাদের মার্জিন ঋণের সুদ মাফ করা যায়। ৭৫ শতাংশ হলে এটা করব আমরা। আর আমাদের এখানে (আইসিবি) একটি রিচার্স টিম রয়েছে। এই টিমকে আরো দক্ষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাজার বান্ধব আরো কিছু কাজ করতে চাই।
বিবার্তা : মার্জিন ঋণ নিয়ে অনেককে সর্বস্বান্ত করে, এর জন্য কি বিনিয়োগকারী একাই দায়ী, নাকি যারা ঋণ দিচ্ছেন তাদেরও কিছু দায়ভার রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী ?
ইফতেখার-উজ-জামান : সত্যি কথা বলতে কী এর জন্য যারা ঋণ দিচ্ছেন তারাও কিছুটা দায়ী। সবাই তো ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়। সেই জন্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে ইয়াংদের গুরুত্ব বেশি দেয়া উচিত। আর ঋণের হার কেমন সেদিকেও নজর দেয়া দরকার।
বিবার্তা : অভিযোগ রয়েছে সম্প্রতি কিছু দুর্বল কোম্পানি বাজারে এসেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ধরনের কোম্পানি বাজারে আসার কারণ কী, বিএসইসি কর্তৃপক্ষ কি ঠিক ঠিক দায়িত্ব পালন করছেন না ?
ইফতেখার-উজ-জামান : আমি সেটা মনে করি না। আমি মনে করি বিএসইসি তার গুরুদায়িত্ব পালন করছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোনো ভুল তথ্য উপস্থাপন করছে কি-না সেদিকে নজর দেয়া দরকার। কারণ ভালো কোম্পানি বাজারে না আসলে বিনিয়োকরীরা বাজারে আসবে না। যে কারণে সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো হওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
বিবার্তা : সম্প্রতি পুঁজিবাজার পরিস্থিতি মন্দা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন বাজারে আবার ক্রান্তিকাল আসছে। কেউ কেউ ইঙ্গিত করছেন ২০১০ সালের দিকে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য চাইলে কী ?
ইফতেখার-উজ-জামান : যারা এমনটি বলছেন আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। ২০১০ সালে বাজারে একটি পক্ষ শেয়ার বিক্রি করেছেন আর একটি পক্ষ তা ক্রয় করেছেন। তাদের কেউ এখন বাজারে আছে বলে আমি মনে করি না। ফলে এই মার্কেট সেই সময়ের মতো হবে এমন ভাবার কারণ থাকার কথা নয়।
বিবার্তা : বিনিয়োগকারীদের একটা অভযোগ প্রায় শোনা যায় তা হচ্ছে কোম্পানির ইপিএস কারসাজি। কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভালো ইপিএস দেখিয়ে পরে ইপিএস কমিয়ে দেখান । এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ইফতেখার-উজ-জামান : কারসাজি কথাটি ঠিক নয়। তবে এটা প্রায় দেখা যায়। অনেক কোম্পানি প্রথম বা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভালো ইপিএস দেখায়। বছর শেষে তা কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। কোন সমস্যা থাকলে তা বের করার চেষ্টা করব।
বিবার্তা : সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন ?
ইফতেখার-উজ-জামান : যদি কেন, এই মার্কেটটাই বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। তাদের জন্য তো অবশ্যই বলার থাকে। তাদের উদ্দেশে একটি কথা বলব। তারা যেন বুঝে শুনে বিনিয়োগ করেন। কারো কথায় বা গুজবে নয়। কোম্পানির সার্বিক অবস্থা দেখে। আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন স্বল্প মেয়াদি। এটা ঠিক নয়। বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদি। এখন মানি মার্কেটের যে অবস্থা তাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার থেকে বেশি প্রফিট করা সম্ভব।
বিবার্তা : পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে সবার আগে কী দরকার বলে আপনি মনে করেন ?
ইফতেখার-উজ-জামান : সবার আগে দরকার ভালো কোম্পানি বাজারে আসা সেই সঙ্গে ভালো বিনিয়োগকারী। যারা ইনভেস্ট করতে চায়। স্বল্পমেয়াদি ব্যবসা নয়।
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন