বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান খন্দকারের সঙ্গে পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে কথা হয় বিবার্তা প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের। আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বিবার্তা : কেমন আছেন? বিবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম।
ওয়াহিদুজ্জামান : ভালো আছি। ডিবিবিএল এবং আমার পক্ষ থেকে বিবার্তা পরিবারের সবারপ্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বিবার্তা: পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে মন্দা পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমার পাশাপাশি কমছে সূচক ও বাজারমূলধন। অনেকে বলছেন সবমিলে বাজার পরিস্থিতি ভালো নেই। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী ?
ওয়াহিদুজ্জামান: কিছুদিন যাবত বাজার কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে একথা সত্যি। তবে বাজার পরিস্থিতি ভালো নয় একথার সঙ্গে আমি একমত নই। আমি মনে করি বর্তমান বাজার পরিস্থিতি খারাপ নয়। এখন বাজারে অতিমুল্যায়িত শেয়ার নেই। ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরও হাতের নাগালে। টানা দর পতনও নেই। এ অবস্থায় বাজারকে খারাপ বলা যায় না। তবে একটা কথা না বললেই নয়, তা হচ্ছে আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যকম। তারা তিন দিনেই ব্যবসা করতে চান। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেটা না হলে তাদের চোখে সব সময় বাজারে মন্দা পরিবেশই থাকবে। পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে।
বিবার্তা: বর্তমানে মানি মার্কেটের অবস্থা নাজুক। আমানতে সুদের হারও অনেক কম। এ সময় সাধারণ জনগণের পুঁজিবাজারে আসার কথা। কিন্তু তারপরও বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ কম। এমন কেন হচ্ছে ?
ওয়াহিদুজ্জামান : ২০১০ সালের ধসে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের লোকসান দিতে হয়েছে। সে কারণে এখনো তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় রয়েছে। এটা আগ্রহ কম থাকার একটি কারণ হতে পারে। তবে বর্তমানে মানি মার্কেটের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অনেক লাভজনক। কেউ যদি পূঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে তবে বছর শেষে এখান থেকে ব্যাংকের চেয়ে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। তবে বিনিয়োগ করতে হবে বুঝেশুনে ভালো কোম্পানিতে।
বিবার্তা : এবার একটু আইসিবি প্রসঙ্গে আসি। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে আইসিবির ভূমিকা কতটুকু ?
ওয়াহিদুজ্জামান : পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য যেসকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এরমধ্যে প্রধান হচ্ছে আইসিবি। আইসিবির জন্মই হয়েছে পুঁজিবাজারের স্বার্থে। মার্কেটকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। প্রতিষ্ঠানটি সবসময় মার্কেট মেকারের কাজ করে। আইসিবির কাছে প্রচুর পরিমাণে শেয়ার থাকে। বাজারে কখনো শেয়ারের সংকট পড়লে তারা শেয়ার বিক্রি করে বাজারকে সাপোর্ট দেয়। আবার কখনো আইসিবি কর্তৃপক্ষ ক্রেতার ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ফান্ডের মতো ফান্ড গঠনেও প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে পুঁজিবাজারের ক্রান্তিলগ্নে সব সময় পাশে থাকে আইসিবি।
বিবার্তা : সম্প্রতি আইসিবিতে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা নতুন এমডির হাত ধরে আইসিবি’র পুর্নগঠন হবে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী ?
ওয়াহিদুজ্জামান : প্রথমেই আইসিবির নতুন এমডিকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি মনে করি সঠিক লোকের কাছেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। বহু বছর ধরে তিনি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সুদক্ষভাবে পালন করে আসছেন। আইসিবি’র মতো বড় প্রতিষ্ঠানে এরকম জানা বোঝা লোক দরকার। তাছাড়া এমডির পাশাপাশি আইসিবিতে রয়েছেন ক্যাপিটাল মার্কেট জানা বোঝা একজন চেয়ারম্যান ড. মজিব উদ্দিন আহমেদ। এমডি চাইলেই যেকোনো বিষয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। আইসিবিতে একটি রিসার্চ টিম রয়েছে। আমার মনে হয় টিমটাকে আরো প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। কারণ শেখার তো কোনো শেষ নেই। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতো আমি আশা করি নতুন এমডির হাত ধরে আইসিবি নতুন রূপ পাবে।
বিবার্তা : পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে আইসিবির বোর্ডে কিছু অযোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে আপনি কী বলবেন?
ওয়াহিদুজ্জামান : যারা এমন বলেন আমি তাদের মতের বিরুদ্ধে। আমি মনে করি না যে এখানে কোনো অযোগ্য লোক রয়েছেন। আমি মনে করি বোর্ডে যারা রয়েছেন তারা সবাই পুঁজিবাজারের এক একটি নক্ষত্র। ফলে তাদের নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। উনারা সবাই যোগ্য। নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলে।
বিবার্তা : অভিযোগ রয়েছে ভুল তথ্য প্রদান করে অনেক কোম্পানি বাজারে তালিকাভূক্ত হয়। আর এক্ষেত্রে বিএসইসির কোনো নজরদারি নেই। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী ?
ওয়াহিদুজ্জামান : এমন ঘটছে কী না তা বিএসইসি কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। তবে সবার আগে ধরা উচিত অডিটফার্মগুলোকে। কারণ তারাই এ তথ্যগুলো প্রদান করে। কোনো সমস্যা থাকলে তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া দরকার।
বিবার্তা : বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কিছু বলুন ?
ওয়াহিদুজ্জামান : বিনিয়োগকারীদের বলবো তাদের ভয়ের কিছু নেই। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে নন ব্যাংকিং ফিন্যানসিয়াল প্রতিষ্ঠানসমূহ বড় ভূমিকা পালন করছে। এরমধ্যে রয়েছে আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক সমূহ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, সিকিউরিটিজ কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। কাজেই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ থাকার কথা নয়। তাদের মনে রাখতে হবে পুঁজিবাজার ভালো হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, শিল্পায়ন হবে, কর্মসংস্থান হবে। তাই বিনিয়োগকারীদের এদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন