চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নগরবাসীর সেবায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজের ক্ষেত্রে এসেছে সফলতা, কিছু ক্ষেত্রে আছে প্রতিবন্ধকতা। নগরীর উন্নয়নে চসিকের চলমান নানা কার্যক্রম নিয়ে বিবার্তার মুখোমুখি হয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামকে ‘ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি’করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তার সবই করবো। চট্টগ্রাম শহরকে দুর্গন্ধ ও বর্জ্যমুক্ত করতে এরইমধ্যে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খ্যাতনামা প্রকৌশলী ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে এ ব্যাপারে বারবার বসে পরামর্শ করা হচ্ছে। ডাস্টবিন ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহরকে কিভাবে আবর্জনামুক্ত রাখা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা ভবনা চলছে। আমরা টার্গেট ঠিক করেছি, আবর্জনামূক্ত শহর হবে। প্রতিটি ঘরের দরজায় দরজায় গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনই সেই আবর্জনা নিয়ে আসবেন। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করে নগরের দরিদ্র পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে যাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাশ্রয় হয়।বর্জ্য থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হলে কর্পোরেশনের সেবা ও আয়ের পরিধি বাড়বে। এখান থেকে যে আয় আসবে তা দিয়ে আরো পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেয়া যাবে।
মেয়র বলেন, নগর ভবন নির্মাণের বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দেখছি। আশা করছি এক দেড় মাসের মধ্যে নগর ভবনের জন্য অর্থের সংস্থান হয়ে যাবে। বাজেট পেতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই হবে, ভবন
নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। ৩-৪ বছরের মধ্যে কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে ২৫ তলা বিশিষ্ট নান্দনিক নগর ভবন নির্মাণ করা হবে।আশা করছি আগামী মার্চ-এপ্রিলে নগর ভবনের টেন্ডার আহবান করতে পারবো।
ঘরে ঘরে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ঘরে ঘরে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করবে তাদের একটা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতিটি ঘর থেকে মাসে ১০ টাকা করে তারা নিবে। এতে যারা আবর্জনা সংগ্রহ করবে তারা উৎসাহিত হবে। যারা টাকা দিতে পারবে না (বিশেষ করে বস্তি এলাকার মানুষ) তারা নিজেরাই সহযোগিতা করবে। বাড়তি রোজগারের আশায় সেবকরা বেশি ঘর থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করবে। সেটা নিয়ে আরো চিন্তা ভাবনা চলছে। একটা আধুনিক সিটি করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব করার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এবং রাস্তা-ঘাটে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় উন্নত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কোনো পরিবেশ দূষণ না হয়। নগরবাসী যেন পরিচ্ছন্ন নগরে সুস্থ্য শরীর নিয়ে চলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে।
ফুটপাতের হকার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ফুটপাতে হকারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসতে পারবে। সেজন্য একটি পদক্ষেপ হাতে নেয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে হকার সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরো আলোচনার করা হবে। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত তারা রাস্তায় ভ্রাম্যমাণভাবে বসতে পারবে। তাদের মোবাইল ভেহিক্যাল থাকবে।
আজম নাসির বলেন, কেউ ক্ষমতা বলে ফুটপাত দখল করতে পারবে না। ফুটপাত বা রাস্তায় হকাররা কোনো মালামাল রাখতে
পারবে না।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালপত্র এনে তা আবার ওই সময়ের মধ্যেই নিয়ে যেতে হবে।ফুটপাতের হকার নেতা-কর্মীদের সাথে ইতিমধ্যে এ নিয়ে বোঝাপড়া হয়েছে। তাদের কিছু দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাস্তার পাশে লাল রঙের প্রলেপ দিয়ে হকারদের বসার স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
খেলার মাঠ রক্ষার কথাও জানালেন মেয়র।তিনি বলেন, খেলা আর মেলা একসাথে চলতে দেয়া যায় না।এমনিতেই যে কয়টি মাঠ আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দিনে দিনে খেলার মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভবিষৎ প্রজন্মের তাতে ক্ষতি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যাদের মাঠ তাদের উদ্যোগী হতে হবে। তবে নগর পিতা হিসেবে আমি তাদের পরামর্শ দিতে পারি। খেলার মাঠ দখল মুক্ত রাখা, মাঠে পার্কিংয়ের গাড়ি রাখতে না দেয়া এবং মাঠ কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ মাঠ সংস্কার করে মাঠের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের যেন মুক্ত আকাশে বিকাশ করতে পারে, মানসিক বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য কাজ করার আহ্বান জানান মেয়র ।
মেয়র আরো বলেন, নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এতোদিন চট্টগ্রাম জেলা ক্রিড়া সংস্থার (সিজেকেএস) ছিল না। গত কয়েক বছর এই নিয়ে মামলা চলছিল। সাত মাস আগে এই নিয়ে হাইকোর্ট থেকে সিজেকেএস রায় পেয়েছে। এক মাস আগে সিজেকেএস এর হাতে রায়ের কপি আসার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনো আসেনি। রায়ের কপি হাতে পেলে সিজেকেএস মাঠ বুঝে নিয়ে একে সংস্কার করে খেলাধূলার উপযোগী করে তোলা হবে। মামলার রায়ের কপি হাতে আসলে মাঠে কোনো মেলা বসাতে দেয়া হবে না।
আউটার স্টেডিয়ামকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ মাঠকে সংস্কার করার জন্য কনসালটেন্টের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। ২-১ দিনের মধ্যে কনসালটেন্ট মাঠ পরিদর্শন করবে। আউটার স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকায় নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো হবে। কিছু দিনের মধ্যেই এসব কাজ শুরু হবে। এতে শুধইু খেলাধূলার পরিবেশ থাকবে। বিদেশের স্টাইলে কিভাবে সৌন্দরভাবে মাঠকে সাজানো যায় সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
মেয়র বলেন, একটি ব্যতিক্রমি স্টেডিয়াম হবে আউটার স্টেডিয়াম। প্লেনিং সেল থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, নিচে বেসমেন্ট করে মাল্টি পারপাস ব্যবহার করার। এতে মাঠের কোনো অসুবিধা করা হবে না।
বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন খাল খননের জন্য কিস্তিতে টাকা দিতে চায় মন্ত্রণালয়। এজন্য ২০ কোটি টাকা দিতে চায়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সাথে নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের টাকা একসাথে দিতে হবে। তাই খাল খননের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা ১৯৭ কোটি টাকা একসাথে চেয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এক সাথে টাকা পাবো। এতে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা যাবে।
আ জ ম নাছির বলেন, নগরীতে খাল খনন কাজ শুরু করার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। অনেকে কাজ শুরু করেছে।যারা কাজ শুরু করেনি, তারা ১৯ তারিখ থেকে কাজ শুরু করবে বলে কথা দিয়েছে। কাজ কখন শুরু করছে সেটা বিষয় নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা গেলেই হলো। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবে বলে আমরা মনে করছি।
দখলদারদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতা নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই তালিকা নিয়ে কছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী নাকি বিএস খতিয়ান ভিত্তিক হবে তা নিরসন হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিবার্তা/জীবন মুছা/জাহিদ