নির্বাচন এখন আইওয়াশে পরিণত হয়েছে : জিএম কাদের

নির্বাচন এখন আইওয়াশে পরিণত হয়েছে : জিএম কাদের
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:১৪:৩৭
নির্বাচন এখন আইওয়াশে পরিণত হয়েছে : জিএম কাদের
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, কোনো দৈবদূর্বিপাক না হলে যথা সময়েই জাতীয় পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যেকোনো অবস্থায় এ সম্মেলন সফল হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন এখন আইওয়াশে পরিণত হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি না পাবে ততদিন বিরোধীদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে আগ্রহী হবে না। শুক্রবার উত্তরার বাসভবনে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।  সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক জাহিদ হোসেন বিপ্লব।
 
বিবার্তা : ইউপি নির্বাচনে জাপার প্রার্থী সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে, এর কারণ কী? আপনি কি মনে করেন আসন্ন ইউপি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে?
 
জিএম কাদের : নির্বাচনের ওপর থেকে সাধারণ মানুষ এখন আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন আইওয়াশে পরিণত হয়েছে। জনগণের ধারণা অতীতের ন্যায় ইউপি নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচনটা এখন আর প্রতিযোগিতার বিষয় থাকে না। সরকারি দলের সমর্থক হলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সহজ। তাই বিরোধীদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এটা অশুভ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। সেকারণে যতদিন পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি পাবে না ততদিন বিরোধীদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে আগ্রহী হবে না।
 
বিবার্তা : আগামি দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হতে পারে?
 
জিএম কাদের : জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে এখনও জাতীয় পর্যায়ের একটি বৃহৎ দল। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এবং সুন্দরবন থেকে বান্দরবন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির অবস্থান রয়েছে। দেশব্যাপী এ দলটির বিস্তৃতি আছে। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের দৃষ্টিতে জাতীয় পার্টি এক পাল ছাড়া নৌকা যা হাল ভাঙ্গা নৌযান। এক কথায় রাজনীতিহীন রাজনৈতিক দল বলে বিবেচিত হচ্ছে। সেকারণে বিষয়টি প্রাণহীন মানবদেহের মতো হয়ে দাড়িয়েছে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে হলে প্রথমত, রাজনীতিকে সুনির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্ট করতে হবে। জাতীয় পার্টি এখন কি করছে ভবিষ্যতে কী করতে চায় সে বিষয়ে জনগণের কাছে সুষ্ঠু ধারণা দিতে হবে এবং সে মোতাবেক কর্মকাণ্ড পরিচালনা  করে জনগণের আস্থায় আসতে হবে।
 
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে যেহেতু সরকার ও সরকারিদল ছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গণ প্রায় ফাঁকা বা শূণ্যতা বিরাজ করছে। যে কারণে জনগণের মাঝে সরকার ও সরকারবিরোধী মনোভাব ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে, যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেগুলো ধারণ করার জন্য ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ি এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথার্থ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ও নেতৃত্বদানের জন্য জাতীয় পার্টি কাজ করতে পারে। জনগণের বঞ্চনা, হতাশা, ক্ষোভ, হয়রানি, অত্যাচার, নিরাপত্তাহীনতা এসব বিষয়ে জনগণের কণ্ঠস্বর ও সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। তাহলে সরকারের বিপক্ষে সত্যিকারের কার্যকর বিরোধীদল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। একই সাথে জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে। আমরা জাতীয় পার্টিকে সে লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
 
বিবার্তা : রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এমপিরা দলে একটা বলয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তাদের মোকাবেলা বা ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কী ভাবছেন?
 
জিএম কাদের : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা কোনো রাজনৈতিক সমস্যা না। আমাদের দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখনো দল চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক। আমি আগেও বলেছি রওশন এরশাদের সাথে আমার কিংবা আমার ভাইয়ের (এরশাদের) কোনো বিরোধ নেই। পর্যায়ক্রমে এ মত পার্থক্য বিলীন হয়ে যাবে।
 
বিবার্তা : আপনাদের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কি কোনো সংশয় আছে?
 
জিএম কাদের : কোনো দৈবদূর্বিপাক সৃষ্টি না হলে অবশ্যই ১৬ এপ্রিল জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূল থেকে পর্যায়ক্রমে নেতৃত্ব ঠিক করে তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কাউন্সিল না হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। ভেন্যু প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ভেন্যু বড় কথা নয়, জাক-জমক বা চাকচিক্যও বড় কথা নয়। যে কোনো অবস্থায় এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চীন মেত্রী সম্মেলন কেন্দ্র না পেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার চেষ্টা করবো। আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাবো। এছাড়াও বিদেশি মেহমানদেরকেও আমন্ত্রণ জানাবো। তবে আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। সবদিক থেকে চিন্তা করেই সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
 
বিবার্তা : বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড  কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
 
জিএম কাদের : স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডই আমার চোখে পড়েছে। দেশের রাজনীতিতে একটি শূন্যতা বিরাজ করছে। এখানে সরকারের বাইরে অন্য কোনো দলের কর্মকাণ্ড অনুপস্থিত। আর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বলতে গেলে বলতে হয় সরকার তার রুটিন মাফিক কাজ করছে।
 
বিবার্তা : বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
 
জিএম কাদের : বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার জনপ্রিয়তা কমছে বলে আমার মনে হয় না।
 
বিবার্তা : আগামি জাতীয় নির্বাচন কী একক নাকি জোটবদ্ধভাবে করবেন?
 
জিএম কাদের : আমাদের লক্ষ্য থাকবে একক নির্বাচন করা। সে লক্ষে আমরা তিনশ আসনেই প্রার্থী ঠিক করার কাজে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি।
 
বিবার্তা :  জাতীয় পার্টির আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সাথে জোট করার সম্ভাবনা আছে কি?
 
জিএম কাদের : এটা নির্বাচনের আগে পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে। এ বিষয়ে আমাদের নীতি নির্ধারক ফোরাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে এ জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে জাতীয় পার্টি বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ। তাই আগামি জাতীয় নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিতে আর ভূল করা চলবে না।
 
বিবার্তা/বিপ্লব/মহসিন
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com