রাজনীতি ভোগ-বিলাস নয়, চ্যালেঞ্জ : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

রাজনীতি ভোগ-বিলাস নয়, চ্যালেঞ্জ : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৬, ২৩:২২:১৩
রাজনীতি ভোগ-বিলাস নয়, চ্যালেঞ্জ : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
হাসিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, রাজনীতিতে প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ্য থাকে। আজ থেকে ৫০ বছর পরে যে চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, তার প্রস্তুতিও আওয়ামী লীগের আছে। বর্তমানটাও আছে। 
 
অতীতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি তাও সঙ্গে আছে। কাজেই আওয়ামী লীগ রাজনীতিটাকে ভোগ-বিলাস হিসেবে দেখে না। মানুষের সেবা ও অধিকার আদায়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখে।
 
জাতীয় সংসদ ভবনের নিজ অফিসে বসে বিবার্তাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের কাউন্সিল, দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির রাজনীতিসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো-
 
বিবার্তা : সামনে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়ানোর একটা গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে। এটার সত্যতা কতটুকু?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমাদের আসলে নতুন অনেকগুলো সাংগঠনিক বিভাগ হয়ে গেছে। সেখানে সাংগঠনিক সম্পাদকদের আকার বাড়তে পারে। এটা ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে সাংঠনিক কাঠামো কী হবে তা কাউন্সিল অধিবেশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। কারণ কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই এটা পরিবর্তন হতে পারে। এটা আগে সেখানে প্রস্তবনা আকারে আসতে হবে। তার আগে কথা বলার সুযোগ নেই। আমাদের গঠনতন্ত্র সাব কমিটি আছে। তারা বিষয়গুলো আলোচনা করে প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। সুতরাং কাউন্সিল ছাড়া আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। 
 
বিবার্তা : এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা কি বাড়বে?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী :  আমাদের যে এরপিও আছে, সেখানেই বলা আছে- শতকরা ৩০ ভাগ নারী থাকবেন। সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই বিষয়টা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। বর্তমান সরকারও নারীর উন্নয়নে কাজ করছে। দলের মধ্যেও সেটা থাকবে। নারী নেতৃত্বের প্রধান্য অবশ্যই থাকবে। আপনারা সরকারের কেবিনেটেও সেটা দেখছেন।
 
বিবার্তা : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াচ্ছে। এটা কেন?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এবারই প্রথম দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে এত তৃণমূল পর্যন্ত দলীয়ভাবে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। দলীয় প্রতীকে যে নির্বাচন করছি, এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। কাজেই সেখানে কিছু ক্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবে আমরা খুবই আশাবাদী যে, স্থানীয় পর্যাায়ে আমাদের যে সভাগুলো হচ্ছে, কোরামের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াগুলো কিন্তু আমাদের দলকে অনেক গতিশীল করছে। নিজেদের মধ্যে এই সংযোগ স্থাপন, এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। 
 
এবার হয় তো আমাদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু এটা যখন প্র্যাকটিসের মধ্যে আসবে, তখন কিন্তু অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখন যত কঠিন মনে হচ্ছে, আগামী ৫ বছর পরে যে নির্বাচনটা হবে, সেটা কিন্তু সহজ হয়ে যাবে।
 
বিবার্তা : দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলের কাছ থেকে যে অভিযোগগুলো আসছে সেগুলোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কী হবে?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : যারা মনোনয়ন পায়নি অনেক ক্ষেত্রে তারাই অভিযোগগুলো করছে। তারা বলছে...এই ভাবে করা হয়েছে...বাদ দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো আমরা যে আমলে নিচ্ছি না, তা নয়। আমরা আমলে নিচ্ছি, পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কাজ করছি। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এই ধরনের অভিযোগের সত্যতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভূয়া মনে হয়েছে।
 
বিবার্তা : আমরা জেনেছি স্বাধীনতাবিরোধী-রাজাকারের ছেলে বা বিএনপি জামায়াতের লোকজনদের নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে...
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী :  স্বাধীনতার পরে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে একটা জেনারেল মার্সি করেছিলেন। যাদের বিরুদ্ধে চিহ্নিত কতগুলো অভিযোগ ছিল না, তাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছিল। আর চিহ্নিতদের দালাল আইনে বিচার হচ্ছিল। 
 
অনেকই আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান ছিল; কিন্তু এই ধরনের অপরাধের অভিযোগ ছিল না। এখন যেহেতু নির্বাচনের বিষয়টি এসেছে, সুতরাং খুব সহজেই যারা ওই অংশটাকে ত্যাগ করে হয়তো আমাদের দলের সঙ্গে আছেন। বা মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারায় ফিরে এসেছেন। তখন হয়তো তাদের পূর্ব পুরুষদের এই ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল। এখন যখন তারা আমাদের কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন, তখন অপজিশনে যারা পারছে না তারা বলছে যে, অমুকের বাবা এই ছিল...দাদা ওই ছিল। 
 
তারপরও আমরা এগুলো শুনছি। যেগুলো আমাদের গঠনতন্ত্র বা ঘোষণাপত্রবিরোধী সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেগুলো গঠনতন্ত্র বা ঘোষণাপত্রের নিয়ম মেনেই চলছে, স্বাধীনতা ও দেশের প্রতি আনুগত্য আছে, তারা আছেন।
 
বিবার্তা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার সংসদে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের কি লোকজন কমে গেছে যে বিএনপি জামায়াতের লোক আনতে হবে’...
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : না না এটা বিএনপি জামায়াতের প্রশ্ন নয়। এ রকম পরিবারের অনেকই আছেন যারা দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগ করছেন। মনে করেন, হয় তো আমার বাবা পিস কমিটির মেম্বর বা চেয়ারম্যান ছিল। কিন্তু আমার ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল না। তার ছেলে হিসেবে আমি পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসেছি। হয়তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছি। কিন্তু যখন আমি এরকম একটা জায়গায় আসছি, তখন আমার প্রতিযোগী যিনি ছিলেন তিনি অভিযোগ করছেন তার বাবা তো পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। 
 
কিন্তু দেখা যাচ্ছে পিস কমিটির চেয়ারম্যান থাকলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন না। একটা সিদ্ধান্তে সবাইকে পিস কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল। এটাতো জায়গায় জায়গায় গিয়ে আলাদা আলাদা করে কমিটি করা হয়নি। এটা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হয়। সবাই পিস কমিটির মেম্বর-চেয়ারম্যান। ওই সময় তাদের মধ্যেও অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনীতিটাকে এতো বেশি জটিল করে দেয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান, খালেদা, এরশাদ সাহেবেরা রাজনীতিটাতে এত বেশি জটিল করে ফেলেছেন যে, এই ধরনের একটা বিভক্তির মধ্যে রয়ে গেছে। তারা যখন যাদের যেভাবে দরকার সেই ভাবে ব্যবহার করছে। সুতরাং সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
 
বিবার্তা : সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে? ইতোমধ্যে অনেকের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। রায়ও কার্যকর হয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার একটি আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এটা তো আলাদতের বিষয়। তবে আমি মনে করি অবশ্যই তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হওয়া উচিত। আদালত থেকে এমন একটি রায় আমরাও প্রত্যাশা করি।
 
বিবার্তা : আর জামায়াত নিষিদ্ধে বিষয়ে কী বলবেন?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : জামায়াত কে তো দেশের মানুষ ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করেই দিয়েছে। এখন আইনগতভাবে বাকি আছে। আমি মনে করি, জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
 
বিবার্তা : সম্প্রতি আদালত নিয়ে সরকারের দুইজন মন্ত্রী ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করেছেন। এই বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : কিছু কিছু জায়গা আছে, যা নিয়ে আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি না করি- তাহলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। সুতরাং দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ ও দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলা উচিত। না হলে জনগণের ক্ষেত্রে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। আমি আশা করি, যারা এই ধরনের সম্মানিত প্রতিষ্ঠান ও জায়গাগুলো নিয়ে কথা বলেন তা ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।
 
বিবার্তা : বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমার কাছে অভিনব মনে হয়েছে। যেখানে একটি দলের কাউন্সিল হয়, কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে কাউন্সিলরদের মতমত না দিয়েই তারা দুইজনকে নির্বাচিত করে দিলো। আমি জানি না তাদের গঠনতন্ত্রে কী আছে। তবে এটা সারা দেশের মানুষের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে।
 
বিএনপি যে দুর্নীতি ও দেশের মূল স্পিডের বাইরের একটি দল, তা এইভাবে এই ধরনের দুইজন মানুষকে নির্বাচিত করে আবার প্রমাণ করলো। তারা প্রমাণ করলো, তারা আসলে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চায় না। সুস্থ ধারার রাজনীতি করলে তাদের সিদ্ধান্তগুলো সুস্থ ধারায় থাকতো। সুস্থ চিন্তা ভাবনার মানুষকে নেতৃত্বে দিতো। দুইজন অপরাধীকে নেতৃত্বের চেয়ারে বসিয়ে দিত না। তাদের কাছ থেকে দেশবাসীর কিছু পাওয়ার নেই; বরং আতঙ্ক রয়েছে।
 
বিবার্তা : এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : রাজনীতিতে আসলে ‘এই মুহূর্ত’ বলে কিছু নেই। প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জের। আমরা যে কাজটা করছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা স্বাধীনতার মূল্যবোধ ঠিক জায়গায় নিয়ে যাওয়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে স্বপ্নটা ছিল সেটা বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের কাজ। এই কাজটা করতে গিয়ে আমরা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। 
 
এই সংগ্রামের কোনো শেষ নেই। এটা চলতেই থাকবে। আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হবো, ধনী দেশ হবো। তখন কিন্তু আমাদের চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাবে না। এর পরেও আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকবে। আজ থেকে ৫০ বছর পরে যে চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, তার প্রস্তুতিও কিন্তু আমাদের আছে। বর্তমানটাও আছে। অতীতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, তাও কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই আওয়ামী লীগ রাজনীতিকে ভোগ-বিলাস হিসেবে দেখে না। রাজনীতিটাকে মানুষের সেবা ও অধিকার আদায়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখে।
 
বিবার্তা/ হাসিব/কাফী
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com