রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে : অপু উকিল

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে : অপু উকিল
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৩৪:৫৬
রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে : অপু উকিল
হাসিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+
যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা অপু উকিল। জন্ম ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলায়। ছোট বেলা থেকেই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েই যুক্ত হন সক্রিয় রাজনীতিতে। বদরুন্নেসায় অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময় প্রথমে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর সিটি ছাত্রলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার দ্বায়িত্ব পালনের পরে ছাত্রলীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন।
 
অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা অপু উকিল শিক্ষা জীবন শেষে তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে দ্বায়িত্ব দেন যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে। পরে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এখনো নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দ্বায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
 
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বসে রাজনীতিতে আসা, রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বসহ সংগঠন ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেট-এর সঙ্গে। তার সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো- সাক্ষাতকার নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক হাসিবুল হাসান। 
 
বিবার্তা: কীভাবে রাজনীতিতে এলেন?
 
অপু উকিল : আমি পদ্মা পাড়ের মেয়ে। আমার বাড়ি শরীয়তপুর। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। আমার শৈশব বা কৈশরে আমি দেখতাম আমার যারা খেলার সাথী তারা স্কুলে যেতে পারছে না। ঠিকমতো তিন বেলা খেতে পায় না। তাদের যে বঞ্চনা, তাদের নূন্যতম যে চাওয়া-পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া। এই বিষয়গুলো তখনই আমাকে ভাবায়। আমি খেতে পারছি, স্কুলে যেতে পারছি। কিন্তু আমার খেলার সাথী পারে না। আমার বাড়ির পাশে কৃর্তিনাশা নদী। সেখানে বেদেরা থাকতো। আমি সেই বেদে পল্লীতে গিয়ে দেখি তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তখনই আমি ভেবেছি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে তারা কেন বঞ্চিত থাকবে? তখনই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলে আমার খেলার সাথীরাও খেতে পেত, স্কুলে যেতে পারতো আর বেদেরাও স্থায়ী ঠিকানা পেত। এই অসম সমাজ ব্যবস্থাই আমাকে ছাত্র জীবনে ছাত্ররাজনীতে টেনে এনেছে।
 
‘আমি লেখালেখি করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি। তখন আমার দুটি বই বের হয়েছে। একটি কবিতার (ধূসর পান্ডুলিপি) আরেকটি গল্পের (সোনাদি)।’
 
বিবার্তা : রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান কার?
 
অপু উকিল : আমার রাজনীতে আসার পেছনে কাদের ভাইয়ের (আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের) অনেক অবদান রয়েছে। তিনিই আমার রাজনৈতিক গুরু। আমি যখন ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে পড়তাম তখন বাংলার বাণীতে লেখা জমা দিতে আসতাম। কাদের ভাইও তখন লিখতেন। প্রতি শনিবার লেখা বের হতো।
 
বিবার্তা : প্রতিষ্ঠার পর যুব মহিলা লীগ রাজনৈতিক অঙ্গণে সব চেয়ে আলোচিত সংগঠন ছিল। কিন্তু বর্তমানে  তেমন কোনো কর্মসূচি বা অ্যাকটিভি চোখে পড়ে না কেন?
 
অপু উকিল : বিএনপি-জামায়াতের সময়ে ২০০২ থেকে ২০০৬ পর‌্যন্ত আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনগুলোর চেয়ে যুব মহিলা লীগ সবচেয়ে বেশি রাজপথে ছিল। জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছে। নারী শক্তির কাছে বিএনপি-জামায়াতের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী তখন পরাজিত হয়েছে। আমাদের সেই সাহসের সঙ্গে পরবর্তীতে সকল সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সম্পৃক্ত হয়। ১/১১ এর সময় যুব মহিলা লীগই প্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে। এরপর শুরু করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু হ্যা...আপনি যেটা বলেছেন তাও সত্য বর্তমানে আমাদের কর্মসূচি অনেক কমে গেছে।
 
বিবার্তা : তাহলে কি যুব মহিলা লীগের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে?
 
অপু উকিল : না। আসলে বিষয়টা তেমন নয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে যুব মহিলা লীগের ২৫০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ‍দুটি জেলায় ভারপ্রাপ্ত ও একটি জেলায় (রংপুর সদর) সরাসরি চেয়ারম্যান পদে যুব মহিলা লীগের নেত্রী জয়লাভ করেছেন। কাউন্সিলর ও মেম্বর পদে অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। এরা আস্তে আস্তে ওপরে আসবে।
 
বিবার্তা : রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় কীভাবে?
 
অপু উকিল : আমার মতে দুইভাবে নারী নেতৃত্ব তৈরী হবে। এক. তৃণমূল থেকে। এজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংরক্ষিত আসন সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে অটোমেটিক নারী নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে। সেখান থেকে আর কাউকে ফেরাতে পারবে না।
 
দুই. ছাত্র রাজনীতি। এর মধ্য দিয়ে যারা আসবে তারাই কেন্দ্রীয় রাজনীতির নেতৃত্ব দেবেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যাই বলেন বেশিরভাগ জায়গাতেই কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করা, এমনকি আমাদের মানণীয় প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করা। সমস্যা হলো ছাত্র রাজনীতি করা নারীদের আমরা ধরে রাখতে পারি না। তারা হারিয়ে যায়। বিয়ের পরে, চাকুরি ক্ষেত্রে গিয়ে তারা ঝড়ে যায়। আবার এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক টিকে থাকে। যাদের বাবা বা স্বামী রাজনীতিতে আছেন। এই রকম মুষ্টিমেয় নারী রাজনীতিবিদ রাজনীতিতে ঠিক থাকতে পারেন। সে কারণে আমাদের ছাত্র রাজনীতির যে প্রোডাক্ট, যারা ভবিষ্যতে আমাদের কেন্দ্রীয় রাজনীতিটাকে লিড করবে, সেটা সঠিকভাবে তৈরী হচ্ছে না। এটার জন্য আমাদেরকে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
 
আমাদের সঙ্গে যারা ছাত্র রাজনীতি করতো তাদের কাউকে কিন্তু আমি আজ আর খুঁজে পাই না। কেউ চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত, কেউ সংসার ধর্ম পালনে ব্যস্ত। কেউবা শ্বশুর বাড়ির বাধার জন্য, স্বামীর বাধার জন্য রাজনীতি করতে পারছে না। এই বাধাগুলো অবশ্যই আমাদের অতিক্রম করে রাজনীতিতে নারীদের নামাতে হবে। সমপর্যায়ে নারী পুরুষ যদি রাজনীতিতে না আসে তাহলে আমরা রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে পারবো না।
 
বিবার্তা : রাষ্ট্র ধর্ম নিয়ে করা একটি রিট আদালত খারিজ করে দিয়েছে এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?
 
অপু উকিল : জেনারেল জিয়া ও এরশাদ ৭২ এর সংবিধানের মূল স্তম্ভ ধর্ম নিরপেক্ষতা তুলে দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম দিয়েছিলেন। এর ফলে দেশে ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। হিন্দু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশের সকল ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্ম পালনের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার। এটিই আমার চাওয়া।
 
বিবার্তা : তনু হত্যায় এখনো দোষিদের ধরতে পারেনি পুলিশ......
 
অপু উকিল : এটা নিয়ে যেহেতু সকল গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, তাই আমি মনে করি আর কিছুটা সময় দিলে এটা সম্ভব। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে এটা অবশ্যই ভাল দিক। তবে ফেসবুকে আমি দেখেছি একটা গ্রুপ এটাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে।
 
বিবার্তা : ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলেন...
 
অপু উকিল : আমি কাজ করি মানুষের জন্য। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। আমার স্বামীর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া-আটপাড়া। এখন সেখানকার জনগণকে নিয়েই কাজ করছি। সুখে দুখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তাদের ভালবাসা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে নির্বাচন করলে সেখান থেকেই করবো।
 
বিবার্তা : আপনাকে ধন্যবাদ...
 
অপু উকিল : বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।
 
বিবার্তা/হাসিব/মহসিন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com