এখন ডাকসু নির্বাচনের দাবিই ওঠে না: কাওছার

এখন ডাকসু নির্বাচনের দাবিই ওঠে না: কাওছার
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:০৫:৩৬
এখন ডাকসু নির্বাচনের দাবিই ওঠে না: কাওছার
হাসিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+
অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি। ১৯৬০ সালে গোপালগঞ্জ সদরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র মোল্লা কাওছার ৮০ দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তীতে ১৯৮৯-এ ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদকের দায়িত্ব পান। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কাওছার ২০০৩ সালের সম্মেলনে সহ-সভাপতি হন।
 
২০০৭-০৮ সেশনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৯ সালে কার্যকরী সভাপতি ও পরে ২০১২ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। সম্প্রতি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিবার্তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেছেন তার রাজনীতিতে আসা, ছাত্র রাজনীতি, সংগঠন ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তার সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো-
 
বিবার্তা: রাজনীতিতে আসার গল্পটা যদি বলেন.....
 
মোল্লা আবু কাওছার: আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। তখন এলাকা জুড়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ছিলেন। আমার বাবা একটি প্রথামিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ কর্মী ছিলেন। বলতে পারেন উত্তরাধিকার সূত্রেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনা ছিল। তখন তাদের যে কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস বা তথ্য পৌঁছে দেয়ার কাজ করতাম। যুদ্ধ করিনি কিন্তু নয় মাসই আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শে ছিলাম। আমাদের পরিবারের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা। 
 
বিবার্তা: আপনিতো ডাকসুর নেতা ছিলেন। অনেক দিন হলো ডাকসুর নির্বাচন হয় না। এ প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন?
 
মোল্লা আবু কাওছার: ভবিষ্যতে যে নেতৃত্ব আসবে- আমি মনে করি ডাকসু সেই নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। ডাকসুর নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই নতুন নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। এই নির্বাচন না হওয়ার জন্য প্রশাসনের কিছু বিষয় রয়েছে। ছাত্র নেতৃবৃন্দেরও জোরালো দাবি লক্ষ্য করা যায় না। কোনো এক অজানা কারণে নেতৃবৃন্দও কিন্তু এই নির্বাচনের দাবি করেন না। আমরা যারা এক সময় ছাত্র রাজনীতি করতাম তারা মনে করি ডাকসুর নির্বাচন, হল সংসদ, কলেজ সংসদের নির্বাচন হওয়া দরকার। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশর রাজনীতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে পারে।
 
বিবার্তা: আওয়ামী লীগ সরকার সর্বস্তরে ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কতটা ডিজিটাল হতে পেরেছে?
 
মোল্লা আবু কাওছার: এখন তো আমরা পুরো বাংলাদেশকেই ডিজিটাল বলতে পারি। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের নিজেদের ওয়েবসাইট আছে। আমাদের সারা দেশের সংগঠনের সকল তথ্য দেওয়া আছে। 
এখন ডাকসু নির্বাচনের দাবিই ওঠে না: কাওছার
বিবার্তা: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের সর্বশেষ কি অবস্থা?
 
মোল্লা আবু কাওছার: ২০১৩-১৪ সেশনে বেশ কিছু দিন খারাপ সময় গেছে। সম্মেলন করতে গেলে যে পরিবেশের দরকার হয় সে পরিবেশ ছিল না। এখন পরিবেশ ভাল, আমি আমাদের জেলা ও উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষ করছি। এরপর আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি আছে। আমাদের প্রতিবারের সম্মেলনের প্রধান অতিথি থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনি যখনই সময় দেবেন তখনই সম্মেলন হবে। এখানে কোনো দ্বিমত নেই।
 
বিবার্তা: আপনারা তো এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। এখন অভিযোগ করা হয়, সেই আপনারাই এরশাদের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। তারা্ বিরোধী দলে? তাদের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
 
মোল্লা আবু কাওছার: আমরা আন্দোলন করেছি একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। হত্যা ক্যুসহ যে সিস্টেমে সামরিক শাসন আসে এবং তাদের হত্যা ‌নির্যাতন ও ক্ষমতা দখলের যে সিস্টেম আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি।
 
বর্তমানে তারা বিরোধী দলে। আমি মনে করি সংসদে তারা খুব সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তায় নেমে তারা যে গাড়ি পোড়াচ্ছে না এটা যদি বিরোধী দলের ব্যর্থতা হয় তাহলে আমি বলবো, সে ধরনের বাংলাদেশের দরকার নেই। আমি বলতে চাই রাজনীতিকে জটিল ধারা থেকে সুন্দর ধারায় নিয়ে যেতে তারা কাজ করছে। তারা সফল তা বলবো না তবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
 
বিবার্তা: আপনারাও তো রাজপথে আন্দোলন করেছেন। বিএনপির অভিযোগ তাদের রাজপথে নামতে দেয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে কী বলবেন?
 
মোল্লা আবু কাওছার: রাজনৈতিক দলের গতিশীলতা আসে তখনই যখন একটি গণদাবি নিয়ে গণমানুষের জন্য কাজ করে। আর এজন্য রাজপথে থাকাই আন্দোলন। আমি যতটুকু দেখেছি আন্দোলনে গণদাবি থাকলে তা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। সরকারকে বাধ্য করেছে তা মানতে। এরশাদবিরোধী বা ৯০ পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় আপনারা দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তখন কিন্তু আন্দোলনের জন্য বাস ট্রাকে আগুন দেয়ার দরকার হয়নি। 
 
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করেছেন বা যে জন্য করেছেন সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো বিষয় ছিল না। শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য যা করার দরকার তিনি তাই করেছেন। তাদের এজেন্ডা ছিল দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে একে রুখতে হবে। এজন্যই দেশি বিদেশি অপশক্তি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এতে সাড়া দেয়নি। শুধুমাত্র অন্ধকারের শক্তি রাতের বেলায় পেট্রোল বোমা মেরেছে। দেশকে ধ্বংস করার জন্য এগুলো করেছে। এটা আন্দোলন নয়, নিছক নাশকতা।
 
বিবার্তা: সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ‍দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
 
মোল্লা আবু কাওছার: আদালতের বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। রায় নিয়ে আপনি আপনার মক্কেলের বিষয়ে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। সূতরাং কে কিভাবে বলেছেন তা আমি জানি না। তবে তারা যে পদে সে পদে থেকে এ বিষয়ে কথা বলা ‍ঠিক নয়।
 
বিবার্তা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
 
মোল্লা আবু কাওছার: বিবার্তাকেও অনেক ধন্যবাদ।
 
বিবার্তা/হাসিব/জিয়া/এমহোসেন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com