মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোনিয়া বশির কবির বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেক এন্টারপ্রাইজ মাইক্রোসফটের কান্ট্রি হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ডেল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ডেল বাংলাদেশ গঠিত হলে তিনি কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন।
সোনিয়া বশির বাংলাদেশ ওমেন ইন আইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আইটি ফার্ম সিনটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এই কর্মকর্তা আমরা টেকনোলজিসের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আগামী ২৫ জুন অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০১৬-১৯ সেশনের নির্বাচনে প্রযুক্তি সেক্টরে ‘চেইঞ্জ মেকার্স’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে বিবার্তা২৪ডটনেটের প্রতিবেদকের সঙ্গে বেসিস নির্বাচনের হালচাল এবং প্রযুক্তি খাতের নানা দিক নিয়ে কথা হয় তাঁর। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪.নেটের প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা: বাংলাদেশে মাইক্রোসফট কী করছে?
সোনিয়া বশির কবির: মাইক্রোসফটকে আগে মানুষ মনে করতো শুধু অপারেটিং সিস্টেম আর অফিস। কিন্তু মাইক্রোসফট নিজেকে রি-ইনভেন্ট করে অনেক কিছু করেছে। আমাদের ক্লাউড কম্পিউটিং একটি ফোকাস। আরেকটি দিকে আমরা ফোকাস দিচ্ছি তা হলো, প্রযুক্তিকে প্রত্যেকটা মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া। সেলফোন তার বড় উদাহরণ। মাইক্রোসফটের মাধ্যমে যেন মানুষকে প্রযুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারি। তাই আমরা মানুষকে কম্পিউটার ট্রেনিংও দিচ্ছি। আমরা ফ্রি ট্রেনিং দিচ্ছি। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানাচ্ছি। ইন্টার্ন বানাচ্ছি। একটা ব্র্যান্ডকে যদি মানুষের মনের মতো করা যায় তবে সেটার ব্র্যান্ডিং আর লাগে না।
বিবার্তা: বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
সোনিয়া: আমার শিক্ষাজীবন কেটেছে সিলিকন ভ্যালিতে। ওখানে আমি দেখেছি প্রযুক্তি মানুষকে এবং দেশকে কত দূর নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রযুক্তির ভূমিকা অনেক কম। আমার সামনে পথটা একদম ক্লিয়ার যে ওখানে কিভাবে যেতে হবে। এই ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১২ কোটি ফোন আছে। এদেশের মানুষ কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যম ফোনটা পাগলের মতো গ্রহণ করলো। আমরা এদের প্রযুক্তি ব্যবহারের শিক্ষা দেইনি। এই ১২ কোটি মানুষ কিছু নেয়ার জন্য বসে আছে। আমার ইচ্ছা, প্রত্যেকটি মানুষের কাছে প্রযুক্তির শিক্ষা পৌঁছে দেয়া। এটা যদি আমি কোনভাবে সুযোগ পাই তাহলে করবো। আমাদের দেশের ড্রাইভার, ভুয়া সবাই তিন/চার মাস পরপরই ফোন বদলায়। ওরা চায় নতুন মডেল। ওদেরকে আমাদের অনেক কিছু দিতে হবে। আমাদের দেশ তখন এগিয়ে যাবে। আমার মনে হয় পথ হাঁটার এখনও অনেক বাকি আছে।
বিবার্তা: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর উপরে ওঠার পেছনে কী কী প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করেছেন, আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে বলুন।
সোনিয়া: আমার কথা শুনলে বাংলাদেশের অনেক নারীই হয়তো রেগে যাবেন। আমেরিকায় দীর্ঘ দিন কাজ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে যে বাংলাদেশের পুরুষরা নারীদের অনেক সম্মান করে। আমার মনে হয় আমাদের দেশে যখন সরকার নানা সুযোগ দিচ্ছে আর পুরুষরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি নারীদের সম্মান করছে- এমন সুন্দর পরিবেশে নারীরাই নিজেদেরকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। সমাজ কিন্তু কাজ করার জায়গা করে দিয়েছে। সরকারও নানাভাবে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। বাধা আসবেই। তারপরও সেগুলোকে নিজের মনের শক্তি দিয়ে জয় করতে হবে। নারীকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে যে আমি প্রযুক্তিতে যোগ দেবো। এটা ভেতর থেকে আসতে হবে।
বিবার্তা: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্যে কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
সোনিয়া: আমি বলবো আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান আর ভয়কে জয় করো। যদি রিস্ক না নেই তাহলে আমরা কিন্তু কিছু পাবো না। গ্রামের নারীরা সব সময়ই আগুন নিয়ে খেলা করে। কাঠের চুলা, কেরোসিন চুলা সবই আগুন। যে দেশের নারীরা আগুন নিয়ে খেলা করতে পারে আর বিদেশি নারীরা আগুন দেখে ভয় পায়, সে দেশের নারীরা কি অন্য কিছু করতে পারবে না? সেই সুযোগ কি তাদের দিয়েছি আমি? তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। আমাদের নারীদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। বলতে হবে, তুমি পারবে। সে সাথে পরিবেশও তৈরি করে দিতে হবে। যেমন গার্মেন্টসের পরিস্থিতি দেখেন। নারীরা কি গার্মেন্টসে যায় না? যায় তো ঠিকই। এভাবে টেকনোলজিতে যদি সুযোগ করে দেই তাহলে নারীরা আসবে। এভাবে সবাইকে নারীদের উৎসাহ, সাহস দিতে হবে।
বিবার্তা: বাংলাদেশের নারীদের জন্য আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?
সোনিয়া: আমার একটা ইচ্ছা প্রত্যেক গ্রামে একজন করে নারী কম্পিউটার সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে চাই। তারা বাসায় বসে কম্পিউটার ঠিক করবে। স্থানীয়ভাবে কল সেন্টারের সাথে কানেক্টেড থাকবে। আমি চাই এবছর পাঁচ হাজার কম্পিউটার সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করবো।
বিবার্তা: এবার অন্য প্রসঙ্গ। বেসিসের নির্বাচনে আপনি লড়ছেন। আপনি নির্বাচিত হলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
সোনিয়া: বেসিসের এক হাজার মেম্বার আছে। ভোটার ৩৬৮ জন। আমি যদি আসি এক হাজার মেম্বারের জন্য এক হাজার ঘন্টা ব্যয় করবো। প্রত্যেককে আমি এক ঘন্টা দিতে চাই। আমি যদি এক হাজার মেম্বারকে খুশি রাখি তাহলে প্রতিষ্ঠান ভালভাবে চলবে। সদস্যরা ভালো থাকলেই বেসিস ভালো থাকবে। সবাই ভাল কিছু করবে। আমি বেসিস সদস্যদের জন্য কাজ করতে চাই, তাদের যোগ্য করে তৈরি করতে চাই। আমি কিভাবে সব মেম্বারকে তুলে আমার সিলিকন ভ্যালির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারি এটাই আমার আশা। আমার আর কিছু চাওয়ার নাই।
বিবার্তা: বেসিস ভোটারদের উদ্দেশে আপনার বিশেষ কোনো বার্তা…
সোনিয়া: আমার ম্যাসেজ হবে, ভাই আমাকে একটা সুযোগ দেন। দেখেন আপনার স্বপ্নের সাথে আমার স্বপ্ন মিলিয়ে বেসিসকে কত দূর নিয়ে যেতে পারি।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/মৌসুমী/হুমায়ুন