এবকো ওভারসিজ কর্পোরেশন লিমিটেডের সিস্টার কনসার্ন এবকো আইটি’র চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভুঁইয়া। বেসিস ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সদস্য, কুয়েত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল, কো-চেয়ারম্যান, ল’ অ্যান্ড অর্ডার, অ্যান্টি-স্মাগলিং স্ট্যান্ডিং কমিটি, এফবিসিসিআই, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (আটাব) ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, হজ্জ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সদস্য, এফবিসিসিআই এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি কো-চেয়ারম্যান, ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)’র সদস্য।
এবারের বেসিস নির্বাচনে আব্দুল মতিন ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি বিবার্তার মুখোমুখি হন। জানান বেসিস নির্বাচনের হালচাল নিয়ে গঠনমূলক ও আশাবাদী নানান কথা। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা: বেসিস নির্বাচন নিয়ে আপনি কী ভাবছেন ?
আব্দুল মতিন ভুঁইয়া: আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের সুযোগ এবং সম্ভাবনার ব্যাপকতা এবারের বেসিস নির্বাচনে সকল সদস্যকে প্রচণ্ড আগ্রহী করে তুলেছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এতো প্রার্থীর অংশগ্রহণ এবারই প্রথম। সদস্যদের মধ্যেও যাচাইবাছাই করে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করার আকাঙ্ক্ষা লক্ষ্য করছি। আমার ধারণা যে প্রার্থী বেসিসকে সদস্যবান্ধব সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সরকারের দেয়া সুবিধার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পারবেন, প্রবীণ, প্রতিষ্ঠিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও তরুণ মেধাবী সদস্যদের আগ্রহের সমন্বয় ঘটিয়ে সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে পারবেন, সর্বোপরি বাংলদেশে সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, সে সব প্রার্থীকেই এবার সদস্যরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। এ সকল বিষয়ে অবদান রাখার ক্ষেত্রে আমার সক্ষমতা রয়েছে। তাই নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
বিবার্তা: এবারের নির্বাচন বেসিসের গতিশীলতার জন্য কেন জরুরি ?
মতিন ভুঁইয়া: আসলে কোনো সংগঠন গতিশীল না হলে সদস্যদের কল্যাণ করা খুবই দুরূহ। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশীয় সফওয়্যার ব্যবহারে প্রাধান্য দেয়া, রফতানি আয় বাড়ানো, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বেসিসকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। রুগ্ন কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হলে অ্যাসোসিয়েশনের সাথে সদস্যদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ৪৮% সদস্যের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবর্তে সব সদস্যের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করার উদ্যোগ থাকতে হবে। আমি আশা করি, এই নির্বাচনকে ঘিরে বেসিস একটি গতিশীল সংগঠনে পরিণত হবে। গতিশীল সংগঠনে পরিণত করতে না পারলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিবার্তা: নির্বাচিত হলে বেসিস সদস্যদের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী ?
মতিন ভুঁইয়া: আমি নির্বাচিত হলে যেসব কাজ করবো তা হলো -
১. বেসিস কার্যালয়ে সব সদস্যের সম্মান নিশ্চিত করবো। বেসিস সেক্রেটরিয়েট থেকে সদস্যদের ব্যবসার সুযোগ সংক্রান্ত সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সব সদস্যকে প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবো। হোটেল লবিতে ব্যবসায়িক আলোচনার পরিবর্তে বেসিসকে সদস্যদের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করবো। সব কোম্পানির প্রোডাক্টের তথ্য বেসিস কার্যালয়ে আপডেট থাকবে।
২. সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের নীতিমালায় ও আইনে বলা আছে পাবলিক প্রকিউরমেন্টের ৫০% দেশীয় কোম্পানি দিয়ে কাজ করাতে হবে। আমাদের দেশে বিদেশী অর্থায়নে সরকারি আইসিটি প্রকিউরমেন্টে বিদেশী দাতা সংস্থাগুলো এমনসব কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়, যা শুধু বিদেশী কোম্পানিগুলোর অংশ গ্রহণে সহায়তা করে এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো অংশ গ্রহণে ব্যর্থ হয়। ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো কাজ পাওয়ার সুযোগ না থাকায় পুরো টাকাটাই বিদেশে চলে যায়। এটা দেশীয় শিল্পের বিকাশে বড় বাধা। তাই সরকারের সাথে অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কথা বলে পাবলিক প্রকিউরমেন্টে দেশীয় কোম্পানিগুলোর ৫০% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখার আন্তরিক চেষ্টা করবো।
৩. বিশ্ব ব্যাংক বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ১৭ দেশের মধ্যে রেখেছে। আমাদের সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করছে। বিদেশী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুক এটা আমরা চাই, তবে সেক্ষত্রে বিদেশী কোম্পানিগুলো দেশীয় কোম্পানিগুলোর সাথে ৫০% অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করবে এই নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সরকারকে সম্মত করানের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবো।
৪. প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণ, উৎসাহী, মেধাবী সদস্যদের আগ্রহ-উদ্দীপনার সমন্বয় ঘটিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে আন্তরিক ভূমিকা রাখবো। যেখানে কম-বেশি সব সদস্য ব্যবসার সুযোগ পাবে।
৫. আমরা আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে সফওয়্যার রফতানির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সেজন্য তথ্যপ্রযু্ক্তি ইন্ডাস্ট্রিকে বাংলাদেশে আরো মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করানোর লক্ষে ট্যাক্স-ভ্যাটের অযাচিত চাপ থেকে আপাতত অব্যহতি দেয়ার জন্য সরকারকে সম্মত করতে কাজ করবো।
৬. টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের অনাকাঙ্ক্ষিত চাকুরী বদল অনেক কোম্পানিকে অনেক সময় পথে বসিয়ে দেয়, ব্যবসায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোম্পানিগুলো এ সমস্যা সমাধানে একটি আচরণবিধি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
৭. বেসিসের সাথে তথ্য প্রযুক্তিখাতের সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনের সাথে সমন্বয় সাধন করে ঐক্যবদ্ধভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
বিবার্তা: সদস্যরা আপনাকে কেন ভোট দেবে ?
মতিন ভুঁইয়া: সদস্যদের ব্যবসায়িক কল্যাণে এবং সফটওয়্যার শিল্পে তরুণ উদ্যোক্তাদের ইমোশনকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সদস্যদের কল্যাণ যেখানে নিহিত থাকবে আমি সেখানেই থাকবো। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার সামর্থ্ আমার আছে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। তাই বেসিসের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ আমাকে নির্বাচিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিবার্তা: নির্বাচিত হলে বেসিসকে কোন স্তরে দেখতে চান ?
মতিন ভুঁইয়া: যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকে বেসিসকে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বের জায়গায় নিয়ে এসেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এটুকুই শুধু বলতে চাই, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকাকে ঘূর্ণায়মান চাকায় পরিণত করার ক্ষেত্রে বেসিসই একমাত্র সংগঠন হিসেবে অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বিবার্তা: নির্বাচন উপলক্ষে বেসিস সদস্যদের কিছু বলুন ।
মতিন ভুঁইয়া: বেসিসের সম্মানিত সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই, নির্বাচনের আগে প্যানেলের নামে ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি না করে প্রার্থীদের সক্ষমতা, দক্ষতা, যোগ্যতা দেখে আপনার মূল্যবান ভোট প্রদান করুন। কারণ নির্বাচনের আগে দলাদলি, কাদা ছোড়াছুড়ি বৈরিতা তৈরি করে। পরে সেটি শত্রুতায় পরিণত হয়। নির্বচিত হওয়ার পর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশন বাধাগ্রস্ত হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করার সুযোগ দিন। আপনারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি নির্বাচনে বিজয়ী হলে নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের সাথে থাকবো, বিজয়ী না হলেও আপনাদের সাথে থাকবো। আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ আমার পাথেয় হয়ে থাকবে।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/মৌসুমী/হুমায়ুন