খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। গত ১৮ মার্চ, ২০১৫ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ তিন সিটিতে একই দিনে নির্বাচনের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণা করেন। তারপর ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়।
সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সকল রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের মনোনয়পত্র জমা দেন। ২৯ মার্চ সমাপ্ত হয় তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব।
ঢাকা উত্তরে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন এবং চট্টগ্রামে আ জ ম নাসির উদ্দিনকে সমর্থন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
২৭ মার্চ, ২০১৫ রাতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
তিনি দলীয় নেতাদের সামনে আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে দল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সব ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দেন।
তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরাও তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। খিলক্ষেতস্থ লোটাস কামাল টাওয়ারে উত্তরের নির্বাচিত প্রার্থী আমাদের নিয়ে নির্বাচনী আলোচনারও আয়োজন করেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণার দিক নির্দেশনা দেন।
যার ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরা দিন রাত তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল আবারও ওই লোটাস কামাল টাওয়ারে আমাদেরকে নির্বাচনের দিন এজেন্ট হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
২৮ এপ্রিল আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। সেই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। গত ২৮ জানুয়ারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র জনাব আনিসুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এর নেতা-কর্মীরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেয়।
তখন জনাব আনিসুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের রাজনীতির অনুমতি আছে কি না জিজ্ঞেস করলে চেয়ারম্যান মহোদয় নাকি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। এ কারণে ৭ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছাত্র আরিফ হোসেন জয় এবং ৯ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছাত্র রুবেল হোসেন এর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য তাদেরকে আজকের কার্যদিবস পর্যন্ত সময় প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১। এখন মেয়র সাহেবের কাছে প্রথম প্রশ্ন হল, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রাণের স্লোগান, বাঙালির সকল আন্দোলনের সাথে এই স্লোগান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জামায়াত, বিএনপি অধ্যুষিত নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটা রাজনৈতিক স্লোগান মনে হতেই পারে। কিন্তু আপনার মত রাজনীতি সচেতন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন ব্যক্তির কাছে এটা রাজনৈতিক স্লোগান মনে হল কিভাবে? যার জন্য আপনি চেয়ারম্যানের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাজনীতির অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন?
২। মেয়র সাহেবের কাছে দ্বিতীয় প্রশ্ন, জনাব, একটি বছরও তো গত হল না, এরই মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর নাম, আপনার নির্বাচনের সময় তাদের অবদানের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন? এখন আপনার কৌতূহল হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির অনুমোদন আছে কি না তা জানার। অথচ এরাই নির্বাচনে আপনার জন্য কাজ করেছে। যে সময় নির্বাচনী কাজ করিয়েছেন তখন এই কৌতূহল কোথায় ছিল? আপনার এই কৌতূহলের বলি দুই ছাত্রকে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার বা অন্য কোন শাস্তি প্রদান করে তাহলে তাদের সারাজীবনে কষ্টার্জিত লেখাপড়া নষ্ট হওয়ার দায়িত্ব কে নিবে? আপনি?
মেয়র মহোদয় আপনি কি এতো সহজেই ভুলে গেলেন???
আসলেই বাঙালি স্মৃতিভ্রষ্ট জাতি!
লেখক : উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।