পড়ালেখার মাঝখানে কি যে হলো? প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে, কাউকে কিছু না জানিয়েই বিয়েটা করে ফেললাম। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিলো। সমস্যা শুরু হলো বড় মেয়েটা হওয়ার পর। সংসার, মেয়ের দেখভাল করে আর লেখাপড়া করা যাচ্ছে না। আসল কথা হলো, পরিবারের সহযোগীতা পাচ্ছিলাম না। তার ওপরে মেয়েটা পেটে থাকার সময় আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা ছিল।
ক্লাস, ক্লাস টেস্ট কিছুই ঠিকমতো করতে পারিনি। যার কারণে যা হবার তাই হলো। রেজাল্ট বেরুলে দেখা গেল কয়েক সাবজেক্ট-এ ফেল। পারিবারিক অসহযোগিতা, রাগ, দু:খ, সব কিছু মিলিয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। যা আছে কপালে। সংসার যেহেতু সামলাতে হবে। আগে সামলাই, পরে বাকিটা দেখা যাবে। জীবনটা চলছিল আর আট দশটা বাঙালি মেয়ের মতই। সংসার সামলাও আর বাচ্চা দেখ। ঘোরাঘুরি হত অনেক জায়গায়। একবার ঈদ এর কেনা কাটা করতে আর ঘুরতে গেলাম জামালপুর। যেখানে হ্যান্ডিক্রাফটস এর বিশাল সমাহার। এক একটা বাড়ি এক একটা কুটির শিল্প। একেকটা কারখানা। সাহেবের অনুমতিক্রমে নিজেদের জিনিসপাতির পাশাপাশি কিছু বাড়তি জিনিসও কিনলাম।
প্রথম ধাক্কায় প্রায় লাখ খানেকের জিনিস। সেসব জিনিসপত্র বিসমিল্লাহ বলে দুটো শপিং মল-এ দিলাম। যে টাকায় মালপত্র কিনেছিলাম, তা থেকে নামমাত্র লাভ রেখে বিক্রয়ের জন্য দিলাম। সারা পেলাম অভাবনীয়। হাতের কাজের জিনিসপত্রের খুব চাহিদা আসলে ঢাকায়। তাই চলছিলও ভাল। এরপর যেখানেই যাই, সেখান থেকেই জিনিসপত্র যোগাড় করতে লাগলাম। এনে খালি শপিং মলগুলোতে দেয়া। যেহেতু আমি বাসার বাইরে যেতে পারি না। অনেক বাধ্যবাধকতা, তাই এভাবেই কাজ করতে লাগলাম। আস্তে আস্তে ট্রেড লাইসেন্সও করিয়ে ফেললাম। এসব আসলে বেশি দিনের কাজ না। কিন্তু আমার বেলায় অনেক সময় লেগেছে, যার কারণ অনেক। আস্তে আস্তে হয়ে গেলাম খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা। সাথে নিজের কিছু ডিজাইন বের করা। এভাবেই চলছিল। সব ভালোই ছিল।
হঠাৎ সব বন্ধ হয়ে গেল। কি আর করা। কিছুই করার নাই। সব কিছু ঘর ওয়ালার হাতে। চুপচাপ থাকলাম। এরপর সাহেবের চাকরির সুবাদে চলে আসলাম ঢাকার বাইরে। এখানেও কিছুদিন বসে থাকা। মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সুবাদে হাতের কাজ করে এমন একটি সংস্থার খোঁজ পেলাম। ব্যস, আবার কাজ শুরু আমার। একেবারে পুরোদমে। পুরোদমে হওয়ার কারণও আছে। জেলা পুলিশের নারি কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী হওয়ার কারণে কাজ করা আরো সহজ হয়ে গেল। চলছে কাজ, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না।
নিজের ব্র্যান্ড আর পুনাক। এই দুইভাবেই চলছে কাজ। আমার ব্র্যান্ড সিমিলিয়াস হ্যান্ডিক্রাফটস। স্থানীয় ডিজাইন, নিজের ডিজাইন, সব কিছু মিলিয়ে এখন রমরমা অবস্থা। সারাদেশ, এমনকি কোলকাতা, বশির হাট থেকেও আসছে প্রোডাক্ট। বাসায় আছে ছোটখাটো স্টক। আর ঢাকার তিনটি শপিং মল-এ রেগুলার সাপ্লাই দিচ্ছি। হোম ডেলিভারিও চালু করেছি। ঢাকার মধ্যে দেলিভারি ফ্রি। অর্ডার নিচ্ছি অনলাইন ও ফোনে।
ফেসবুক-এ একটা পেজও খুলে ফেলেছি। নাম সিমিলিয়াস হ্যান্ডিক্রাফটস। আমার কাছে এখন পাওয়া যাবে ৩পিস লেহেঙ্গা, শাড়ি, ১পিস বেড শিট, কাথা, কুশন কভার, ছোট পারস, খেজুর পাতার বিভিন্ন সামগ্রী। সবকিছু খুচরা ও পাইকারি রেটে বিক্রি হচ্ছে। অর্ডারও আসছে। ভালোই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। খুব ইচ্ছে ঢাকায় একটি শো রুম করার।তারপর দেশের বাইরে। স্বপ্নের কোনো সীমানা থাকে না। আমারও নেই কোনো সীমানা। হয়তো আবার সব বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু থামতে রাজি নই আমি। সেই সাথে লেখা পড়াটাও শেষ করবো। নিজের পরিচয় আমি নিজেই।
বিবার্তা/মহসিন