‘শেখ হাসিনার চোখের চরিত্র আমাদের চোখের চরিত্রের মতো নয়। হাসিনার চোখ দিয়ে সুখে জল বেরোয়, দুঃখে বেরোয় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতে গেলে বেরোয়। বাংলাদেশের ব্লগারদের কুপিয়ে মেরে ফেললে বেরোয় না। অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়, কুপিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাগুলোয় আদৌ তিনি দুঃখটুঃখ কিছু পান কি না’ ।------তসলিমা নাসরিন।
একমাত্র তসলিমার পক্ষেই সম্ভব এমন অশালীন তির্যক মন্তব্য করা। বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে জাহির করা তাঁর পুরনো অভ্যেস। ৯০ এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়কালে অন্যদের সাথে আমিও তাঁর ভক্ত ছিলাম। একদিন তাঁর কাছের একজন নাহিদকে সাথে নিয়ে তাঁর শান্তিনগরের বাসায় গেলাম। তাঁকে দেখে আমিতো অবাক । আমার বিস্ময়ের কারণ ছিল তাঁর সাজসজ্জা। আমি নিজেকে লুকোতে পারলাম না, বলে ফেললাম, ‘আপনি লিখেছেন মেয়েরা নিজেকে পণ্য বানানোর জন্য সাজসজ্জা করে, আমরা আপনার লেখা পড়ে প্রতিবাদী হতে শিখেছি, সাহসী হয়েছি, সাজসজ্জা ছেড়ে দিয়েছি অথচ আপনি নিজেই এখন নিজেকে পণ্য বানিয়ে উপস্থাপন করছে’। আরও বললাম, ‘আপনি পুরুষ বিদ্বেষী হলে এতবার বিয়ে করলেন কেন’?
উনি নিঃস্পৃহ ভাবে উত্তর দিলেন, ‘তার মানে তোমরা আমার থেকে বেশি ভালো। না , উনার এই মনভুলানো উত্তর আমার মনে ধরল না। বুঝলাম উনি এমন অনেক কিছুই লেখেন যা তিনি বিশ্বাস করেন না কিংবা হতে পারে বিশ্বাস করলেও নিজের জীবনে তা পালন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে বিপরীত স্রোতে গাঁ ভাসান। সব ধরনের বই পড়া আমার প্রিয় অভ্যাসগুলোর অন্যতম। তাঁর '' ফরাসী প্রেমিক'' উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এক জায়গায় এসে থমকে গেলাম। প্রেমিকের ছোট্ট আদরের কন্যার চেহারা নিয়ে আর তাঁর প্রতি বাবার ভালবাসা নিয়ে সে যে মন্তব্য করেছে তা পড়ে আমার মনে হল মমতাহীনা নারী। একজন মানুষের ভিতর যখন মমত্ব থাকে না, অপরের কোমল অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান থাকে না তখন সে সম্পূর্ণ মানুষ হয় কিভাবে! সে ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্য করার আগে একবারও চিন্তা করে না অনেক মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হানছে তাঁদেরকে কষ্ট দিচ্ছে। বরং মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করে নোংরা বক্তব্য দিয়ে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায় যা পৈশাচিকতাকেও হার মানায়।
নিজেকে পুরুষ বিদ্বেষী এবং প্রতিবাদী প্রমাণ করার জন্য যে নিজের জন্মদাতা পিতাকেও ক্ষমা করতে নারাজ। সে অন্যের দোষ খোঁজাতে এতো বেশি ব্যস্ত থাকে যে নিজের ভুল-ত্রুটি আর অক্ষমতাগুলো দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।
দেশ প্রেমিক প্রতিটি মানুষের চোখে যখন উচ্ছ্বাস আনন্দাশ্রু শেখ হাসিনার চোখের অশ্রু তখন তাঁর অসহ্য ঠেকেছে । মাঠে ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এতো ব্যস্ততার মাঝে এতোটা সময় দিলেন, গরমের কষ্ট সহ্য করে মাঠে বসে থাকলেন তা তাঁর চোখে পড়লো না। শেখ হাসিনা তাঁর মতো কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবেন না। তিনি একাধারে স্নেহধন্য কন্যা , দায়িত্বশীল বোন এবং মমতাময়ী মা। দেশ গড়ার কাজে অকুতোভয় দূরদর্শী নেতৃত্ব। তিনিই পারেন ভয়াল ১৫ই আগস্টের স্বজন হারানোর বেদনা বুকে চেপে, ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে যন্ত্রণা ধারন করে দেশের জয়ে আনন্দ্রাশ্রু ফেলতে। স্বার্থান্ধ তসলিমা কি করে জানবেন তাঁর দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, অশ্রু আর আনন্দের ইতিহাস ?
লেখক : সাবেক পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ