সুজন মৃধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নিঃসন্দেহে সে মেধাবী। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যই শোকাহত। প্রতিবাদীও নিশ্চয়ই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই। এই পর্যন্ত আমার কোন অনিশ্চিয়তা বা সংকুচিত মনোভাব নাই।
আমার সমস্যা কিন্তু অন্য যায়গায়। সেটা হলো সুজনকে ছাত্রলীগ বানানো হচ্ছে। অনেকেই সুজন ছাত্রলীগ করতো, মিছিল-মিটিং-এ নিয়মিত অংশ নিতো এসব বলছে ও লিখছে। খোদ ছাত্রলীগের বড় বড় নেতারাই এসব লিখছে। সাবেক-বর্তমান, কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়, হল সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এই মিছিলে শামিল হয়েছেন। সেলুকাস!
সুজন ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং-এ যোগ দিতো এটাও মেনে নিলাম। প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষে পড়া ও হলে থাকা প্রায় সকলেই অনাবাসিক হয়েও হলে ওঠার বদৌলতে মিছিল-মিটিং করে। এটা নব্বইয়ের পর সব সরকারের আমলের কমন চিত্র। আবার উল্টোটাও আছে, ক্ষমতায় থাকার আগেরদিন-
পরেরদিনের ব্যবধানে একপক্ষের মিছিলের মাথাসংখ্যা কমে আরেকপক্ষের মিছিলে বেড়ে যায়। এসব কথা বলা লাগতো না, যদি সুজনকে ছাত্রলীগ বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু না হতো।
যতটুকু জানি তার বাড়ি মাদারীপুর। মার্কেটিং বিভাগের ২০ তম ব্যাচ এর ছাত্র। বাবা একজন ট্যাক্সি চালক। বঙ্গবন্ধু হলে এটাচ ছিল সে। এত অভাবের মধ্যেও সে থাকত ম্যাচে। কেন? মাদারীপুরে বাড়ি ছাত্রলীগের কেউ কি ছিল না সুজনকে একটা সিট ম্যানেজ করে দিতে। জিয়া হলে কিছু দিন সে থেকেছে এটাও শুনেছি। এত কিসের টানাপোড়ন!
আমার বিবেচনায় সুজন জ্ঞাতসারেই ছাত্রলীগের কেউ ছিলেন না। সুজনের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে যে কেউ তার স্ট্যাটাস ও শেয়ারগুলো চেক করে দেখতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে ‘ইসলাম গেলো’ ‘ইসলাম গেলো’ এহেন অপপ্রচারের সঙ্গে সুজনের জড়িত থাকার প্রমাণ তার স্ট্যাটাস-শেয়ারগুলোই ফেসবুকে দিচ্ছে। তাহলে তাকে কেনো ছাত্রলীগ বানানোর পায়তারা?
একজন সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তো বিচার দাবি করা যায়, তাই না? সোহাগী জাহান তনুর ঘটনা কি তাই প্রমাণ করে না? তাহলে সুজনের ঘটনায় ছাত্রলীগ বানিয়ে বিচার চাইতে হবে কেন? সে এদেশের একজন নাগরিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এটুকু পরিচয়ই কি যথেষ্ট নয়?
আরেকটি দুঃখজনক বিষয় খেয়াল করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের নিকট থেকে সুজনের ক্রেস্ট গ্রহণের একটি ছবি ফেসবুকের নিউজফিডে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই শেয়ার দিয়ে সুজন হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এমন মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে আফসোস করছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো এই ক্রেস্ট গ্রহণকারী ছেলেটি সুজন নয়। এটা তারিক মোহাম্মদ নামের একজন ছাত্রের। ফেসবুকে যার Virat Tarique নামে একটি আইডিও আছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই তারিক মোহাম্মদ উরফে Virat Tarique বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ছাত্রদল-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এস এম হল থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। শোনা যায় এরপরে সে এফ এইচ হলেও কিছুদিন ছিল। এখন কোথায় থাকে সেটা অজানা। কিছুক্ষণ আগেই তারিক মোহাম্মদ তার কভার ফটোটি বদলে ফেলেছেন। ষড়যন্ত্র এখানেও আছে কিন্তু!
তারিক মোহাম্মদ উরফে Virat
রেজা আকাশ