শাড়ির প্রতি নারীর প্রেম শাশ্বত চিরন্তন। বাঙালি নারী মাত্রই শাড়ি প্রীতি, অন্ধ আবেগে থর থর হৃদয় স্পন্দন। সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার নিজের আলমারি থেকে অনেক মূল্যবান শাড়ি নারী নেত্রীদের মাঝে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। নারী নেত্রীরা বেজায় খুশী। সবার মনেই আজ উৎসবের আমেজ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী কেবল একজন নারী নন, তিনি একাধারে আমাদের অভিভাবক, আমাদের বড় বোনের অবয়ব, মমতাময়ী মায়ের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। তার শাড়িগুলো যেমন দৃষ্টি নন্দন তেমনই আধুনিকতা এবং রুচি শীলতার মিশেল। শাড়ি যেমনই হোক, যত সুন্দর কিংবা দামিই হোক শাড়ির সৌন্দর্য তখনই প্রকট হয় যখন যে পড়েছে তার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলে যায়।
আমাদের নেত্রীর প্রত্যেকটি শাড়ি আর তার সাদামাটা সাজসজ্জা যেন বলে দেয় তিনি আমাদেরই কেউ, বড় আপনজন, বড় বেশি কাছের মানুষ। হয়ত খুব সাধারণ একটি তাতের শাড়ি, কিন্তু তার পড়ার কারণে এটির মাধুর্য আর সৌন্দর্য যেনো হাজার গুণ বেড়ে যায়।
আর তাই তার প্রতিটি শাড়িই মহামূল্যবান। প্রতিটি শাড়ির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে তার অপার স্নেহ, মায়া, মমতা ও আন্তরিকতা। প্রতিটি শাড়িই যেন কথা কয়। যেন বলে, ‘আমি তোমাদের অনেক বেশি ভালবাসি।’ সত্যিইতো ৭৫ পরবর্তী এই দেশের সাধারণ মানুষরাইতো তার আত্মীয়। নেত্রী নিজের জীবন বাজি রেখে যাদের আপন ভেবেছেন, গভীর মমতায় বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন, আত্মার বাঁধনে বেঁধেছেন।
নেত্রীর কাছের মানুষ মাত্রই জানেন তার রন্ধন প্রিয়তার কথা। নিজ হাতে রান্না করে অন্যকে খাওয়ানোর অভ্যাসটি বোধ হয় পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন। কতদিন আপন জনের মতন আমাদের উপদেশ দিয়েছেন, ‘সব সময় স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেতে চেষ্টা করবে, ছোট মাছ, সবজি, ঘি আর করল্লা খাবে।’
দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, বাঙালিত্ত তার প্রতিটি শিরায় শিরায়। খেলার মাঠে গিয়ে গভীর মগ্নতায় খেলা দেখতে দেখতে একাত্ম হয়ে জান তিনি। শিশু সুলভ সরলতায় আনমনেই হাততালি দিয়ে উঠেন, হেরে গেলে কষ্ট পান। অবোধ শিশুদের অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য নিমিষেই কোলে তুলে নেন, অসহায় নারীদের বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন, যথাসাধ্য সাহায্য ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন।
এমন নারীবান্ধব নেত্রী আমাদের দেশে আর আসেনি কখনো। তার সময়ে সেনা বাহিনীসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অগ্রাধিকার। সংসদে স্পিকার নারী, মন্ত্রী নারী, বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য নারী। ব্যবসা বাণিজ্যেও বিকাশমান নারী। আজ তারই অনুপ্রেরণায় বাঙালি নারী প্রমাণ করতে পেরেছে সুযোগ পেলে তারাও নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
বেগম রোকেয়ার পরে নারী উন্নয়নে এবং নারীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনের অগ্রদূত আমাদের এই শেখ হাসিনা। বাঙালি নারীদের অগ্রসরের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। নারী নির্যাতন কিংবা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তিনি আপোষহীন। বেগম মুজিবও আটপৌরে একজন নারী ছিলেন। মানুষের সেবা, আন্তরিকতা, বিপদে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোকে যে তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে মনে করতেন।
চিকন পাড়ের হালকা রঙের তাঁতের শাড়ি সাথে পান খেয়ে লাল ঠোঁট এই ছিল তার সাজসজ্জা, তার চাহিদা, তার বাহুল্যটুকু। তারই ধারাবাহিকতায় পরিবারের শিক্ষা, ঐতিহ্য এবং পিতার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য আজকের শেখ হাসিনা। সাহিত্যের ছাএী, রবীন্দ্র নজরুল অনুরাগী বলে খানিকটা বুঝি বেশীই আবেগ প্রবণ!
আগে প্রতি প্রত্যুষে নামাজ কোরআন তেলাওয়াত শেষ করে পত্রিকায় চোখ বুলানোর সাথে হালকা লয়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত তার ভীষণ প্রিয় ছিল। তুলা রাশির জাতিকা মানেই চির সৌন্দর্য পিয়াসু। তুলা রাশির জাতিকা শেখ হাসিনাও এর বেতিক্রম নন। তার প্রতিটি শাড়ি একেকটি চিত্র কল্প, একেকটি ছোট গল্প, একেকটি উপন্যাস।
একদিন নেত্রী আমাদের বলছিলেন, ‘তোমাদের দেয়া প্রতিটি উপহার তা যাই হোক না কেনো আমায় আনন্দিত করে। কারণ প্রতিটি উপহারের সাথে থাকে তোমাদের শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর সম্মান।’ নেত্রী আমরাও আপনার এই শাড়িগুলো স্যুভেনির করে রাখবো, পরি আর নাই পরি, এ স্বীকৃতির চিহ্ন। শত ব্যাস্ততায় আপনি আপনার কর্মীদের ভোলেননি বরং পরম ভালবাসায় সিক্ত করেছেন, গভীর মমতায় আমাদের পাশে রেখেছেন, অসীম কৃতজ্ঞতায় আমাদের সবাইকে ঋদ্ধ করেছেন। আমরাও আপনাকে অনেক বেশী ভালবাসি।
বিবার্তা/যুথি