জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ ১৭ এপ্রিল একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ওই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ নিচে দেয়া হলো । মজার ব্যাপার হলো তিনি যে দলের উপদেষ্টা অথবা যে দলকে তিনি সমর্থন করেন বলে জানা যায়, সেই দলের বক্তব্য এবং তার মতামত কতটা পরস্পরবিরোধী আসুন একটু খেয়াল করি-
এক. শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী রাখতে হলে বিএনপিকে নিয়ে মন্ত্রিসভা করার পুরোনো প্রস্তাব টেবিলে নতুন করে আনতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপিকে তার গণতন্ত্রায়ণ চালাতে হবে।( তারমানে নির্দলীয় সরকার দাবি যে অকার্যকর একটি দাবি তিনি তা স্বীকার করে নিচ্ছেন )
দুই. দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপের পরে আমি লাল টেলিফোনে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করতে উৎসাহিত করেছিলাম। তিনি আমার সামনে একবার ফোনটা তুলতে উদ্যতও হয়েছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, কাল করবো। আমি বলেছিলাম, কাল আর হবে না। চাটুকারেরা তাঁকে নিবৃত্ত করেছিলেন।(তিনি স্বীকার করে নিলেন বিএনপি চাটুকার দ্বারা প্রভাবিত একটি দল এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা না বলে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ভুল করেছেন)
তিন. বঙ্গবন্ধুর পায়ের নিচে জেনারেল ওসমানী ও জিয়াকে বসিয়ে দিন। জিয়া থাকবে বঙ্গবন্ধুর পায়ের নিচে। আর এতেই জাতীয় ঐক্যটা আসবে। (জিয়া’র অবস্থান তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন কাজেই দু’জনকে এক কাতারে নেয়াটা বোকামি)
চার. বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর কটু বক্তব্যের জন্য তারেক মাফ চেয়ে নিতে পারেন। (তারেক বেয়াদবি করেছেন)
পাঁচ. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপি সরকারের একটা ব্যর্থতা ছিল। (বিএনপি স্বীকার না করলেও জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বীকার করে নিচ্ছেন বিএনপি এর দায় এড়াতে পারে না , তার স্বীকার এর মাধ্যমে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হল)
ছয়. আমি তাঁকে বলেছি, আপনার দেখা করাই উচিত ছিল। আর তখন প্রধানমন্ত্রীকে আপনি বলতে পারতেন, আপনি তারেককে দেশে আসতে দিন। আর তারেক দেশে এলে আরাফাতের জানাজায় জনতার আরও বেশি ঢল নামত, যদিও শেখ হাসিনার পক্ষে আপনার কথা রাখা সম্ভব হতো না। কিন্তু পত্রিকায় সে খবর ছাপা হলে আপনি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতেন। শুনে তিনি রাগত স্বরে বলেছিলেন, ‘আপনি পাগল হয়েছেন?’( তার মানে যে বলা হয় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন এই সব মিথ্যা)
সাত. মতিয়া চৌধুরীর কাজের প্রশংসা করি কিন্তু তাঁর সহনশীলতার অভাব আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল পুলিশ বাগে রাখতে না পারলেও খুবই সফল বলবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম তো প্রমাণ করেছেন যে চিকিৎসক স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের চেয়ে তিনি ভালো কাজে অনেক এগিয়ে আছেন। (বিএনপির অভিযোগ সরকার দেশ চালাতে অযোগ্য এই কথার আর ভিত্তি থাকলো না বরং এতদিন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে বিএনপির অভিযোগ ছিল নেতা কর্মী হয়রানি করার সেই কথা মিথ্যা প্রমাণিত হলো তার সফলতার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে )
আট. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে যখন প্রথম আলো প্রশ্ন করে শফিউল আজমদের জন্য আপনি জিয়ার মন্ত্রিসভায় যাননি আর নিজামী-মুজাহিদদের মন্ত্রী করেছেন বেগম জিয়া। প্রতিবাদ করেছেন? চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে পতাকা ওড়ানো নিয়ে বেগম জিয়ার কাছ থেকে কি একই ব্যাখ্যা পেয়েছিলেন?... তিনি উত্তরে বলেন কোনো ব্যাখ্যা পাইনি ( সহজেই অনুমেয় জামায়াত-বিএনপির প্রেমের অটুট বন্ধন)
নয়. জামায়াতের উচিত হবে তাদের একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া (যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগ যে শুধুই রাজনৈতিক তা এই উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত)
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়, একটি রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া হলে তার সমর্থক অথবা উপদেষ্টা সেই দলের সেই দলের বক্তব্য আদর্শ অথবা মূল নেতার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। সময় এসেছে বিএনপি ও তার সমর্থকদের বিষয়টি ভেবে দেখার।
লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক
বিবার্তা/মহসিন