আমি নৈরাশ্যবাদী নই; আমি আশাবাদী মানুষ। যদি বলি স্বাধীনতা অর্জনের এতো বছর পরেও কিছুই পাইনি, তবে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যে। অনেক কিছুই পেয়েছি। স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি, লাল-সবুজ পতাকা পেয়েছি, আবার মা বলে প্রাণভরে ডাকার অধিকার পেয়েছি।
নিজের ভূমিতে নিজেই ফসল ফলাতে পারছি। অধিকার বঞ্চিত হলে দরাজকণ্ঠে রাজপথে স্লোগান তুলতে পারছি। আরো অনেক কিছু পারছি— যা পরাধীন দেশে সম্ভব ছিল না।
গোলটেবিল বৈঠকে নয়, আর কারো দয়ার বদৌলতেও নয়...! ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানো লাল-সবুজের পতাকা ওড়ে সার্বভৌম বাংলায়, আমার বাংলাদেশের আকাশে...।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পেয়েছি বলেই আমার আকাশে লাল-সবুজ পতাকা ওঠে। পৃথিবীর মানচিত্রে অংকিত হয়েছে নতুন রাষ্ট্রের সীমানা। পেয়েছি এ ভূখণ্ডকে নিজের মতো করে সাজাবার স্বাধীনতা। পেয়েছি অকপটে কথা বলার স্বাধীনতা...। পেটে দানা-পানি থাকুক বা না থাকুক, বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠি সর্বাধিকারে। মুক্ত কণ্ঠে বলে উঠি- এ আমার দেশ, এ আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এটাইতো সবচেয়ে বড় অর্জন। অনেক চড়া মূল্যে এ বিজয়কে কিনতে হয়েছে। তাই আমাদের প্রাপ্তির অংকটা বেশ বড়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছিল।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারো দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় উন্নতির পথে চলমান রয়েছে।
কিন্তু এদেশের নিন্দুকেরা তা সহ্য করতে পারছে না। তাঁরা কখনোই সেটা সহ্য করতে পারেনি, তার প্রমাণ তো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। তাঁরা তখন স্বাধীনতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল, মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিশ্ব জয়ের পথে, তখন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আবারও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মত অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল।
আর এঁরাই স্বাধীনতাবিরোধী। এঁরাই রাজাকার। এঁরাই মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তাঁদের সহযোগীদের নিয়ে বাংলাদেশকে অভিভাবকশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষদের শাসন-শোষণ করেছিল।
যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পরবর্তী প্রজন্মই ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়ে এখনো দেশবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এদেশের সাধারণ মানুষদের পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই স্বাধীনতাবিরোধী ও তাঁদের সহযোগীরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লবিস্ট নিয়োগর মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্যস্ত। তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা করেছে বিগত সময়ে। ইসলামের দোহাই দিয়ে এদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে ষড়যন্ত্র করছে।
এ দেশের মেধাবী সন্তানদের একের পর এক হত্যা করার মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
কিন্তু সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ নতুন প্রজন্মদের নিয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। জাতির জনক ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার মতো পাকিস্তানের দোসরদের সর্বদিক দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে বর্তমান প্রজন্ম।
যুদ্ধাপরাধীদের স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে একের পর এক ফাঁসির রায় কার্যকর যেন দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য নতুন প্রজন্মের সংগ্রামের একেকটি স্লোগান। বর্তমান প্রজন্ম আজ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তাঁদের জীবনকে আরো উন্নত করার প্রচেষ্টায় এবং দেশকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আর এ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম মডেল। এ প্রজন্মকে নিয়ে সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিঁনি। নিন্দুকের মনগড়া কথায় এখন আর বর্তমান প্রজন্ম হোঁচট খায় না। তাঁরা এখন সর্বোচ্চ সচেতনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে দেশকে কীভাবে বিশ্বের সামনে আরো প্রজ্জ্বলিত করবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত।
এ প্রজন্ম তাদের পূর্ব পুরুষদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশ, মা-মাটি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত।
দেশ এখন তথ্য প্রযুক্তির ধারায় চলছে, এককথায় ডিজিটাল দেশ আমাদের। মানবতারিবোধীরা চাইলেও এদেশকে ১৯৭১ বা ২০০১ সালের মতো ধ্বংসযজ্ঞের সাম্রাজ্য বানাতে পারবে না। এ প্রজন্ম তা কখনোই হতে দেবে না। পাশে থাকবে বর্তমান প্রজন্ম। যেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্যান্য দেশের জন্য কৌতূহল, সেখানে রাজাকার ও তাঁদের দোসর যতই ষড়যন্ত্র করুক, শেখ হাসিনার পাশে থেকে নতুন প্রজন্ম তা প্রতিহত করবে এবং আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সেই ধ্বংসযজ্ঞ সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখবে।
আজ শুধু নতুন প্রজন্ম নয়, এদেশের সাধারণ মানুষ রাজাকার, আলবদর, আলশামস, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তাঁদের সহযোগীদের প্রতি মুহূর্তে ধিক্কার জানায়, ঘৃণা করে। তাইতো তাঁদের কুখ্যাত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা মিষ্টি বিতরণ করে, জয়বাংলা স্লোগান তোলে, আনন্দ-উল্লাস করে।
অন্য সবার মতন এ প্রজন্মের আমারও আনন্দে মন ভরে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বাঙালি জাতির জন্য অনেক বড় পাওয়া, অশুভ ছায়া কলঙ্ক থেকে মুক্তি অর্জন।
এ প্রজন্ম প্রত্যেকটি সময়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এদেশের সেই সাহসী সন্তান, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের। তাঁদের বীরত্বগাঁথা ও সাহসী চেতনাকে বুকে ধারণ করেই এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সাহসী চিত্তে শেখ হাসিনার পাশে আছে, পাশে থাকবে বর্তমান প্রজন্ম।
লেখক : প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
বিবার্তা/ইফতি/কাফী