সমসাময়িক মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা একটি সতর্কবার্তার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথমে বিরক্তিবোধ হলেও একটা সময় এই বার্তা শুনে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন অনেকে। আবার খুব জরুরী সময়ে অসহ্য বিরক্তি আসলেও আমার মতন অনেকেই বাধ্য লোকের মতন তা শুনছেন।
৩০ এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আপনার সিম/রিম’র নিবন্ধন না করলে আপনার সংযোগটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফ্রি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে আজই আপনার সিম/রিম এবং এনআইডি নিয়ে নিকটস্থ রি-রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টে আসুন ...
এই ধরনের ভয়েস বা এসএমএস একেবারেই যে সুখকর তা কিন্তু নয়। আর খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এই ধরনের সতর্ক বার্তাগুলো। অসহ্য বিরক্তিকরও মনে হয়।
হত্যার হুমকি-ধামকিসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সহায়ক হিসেবে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করে সিম/রিম’র সংযোগের মোবাইল ফোনটি। যার বিস্তারিত আমাদের সকলেরই কমবেশী জানা।
কিন্তু এই নিবদ্ধন পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সব শঙ্কাই যে ভিত্তিহীন তা কিন্তু নয়। কিছুটা যৌক্তিকতাও আছে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে, ‘‘গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিয়ে যে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কোনোভাবে এটি অপব্যবহার করা না হয়।’’
আবার নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ এবং একই সঙ্গে যদি কোনো গ্রাহকের আঙুলের ছাপের অপব্যবহার হয় তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে রায়ে।
৭১’র সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই দেশে এখনো দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যহত রয়েছে। নতুন নতুন কৌশলে ষড়যন্ত্র এগিয়ে নিচ্ছে।
এত নিরাপত্তা থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনাটিতে অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। রীতিমত দেশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়েছিরো। মাঠ পর্যায়ে নানান মানুষের নানান উদ্বেগের কথা শোনা গেছে। তার উপর আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের অর্বাচিন মন্তব্য মানুষকে আরও আশাহত করেছে।
বাস্তব চিত্র একেবারেই যে সুখের তা মোটেও নয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম/রিম’র নিবন্ধন না করলে যে সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে- সে কথা বার বার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বললেও বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া ১৩ কোটি ১০ লাখ সিম ও রিমের সক্রিয় ৮ কোটির মধ্যে ৬ কোটি ৩৫ লাখেরও বেশি সিমের পুনঃনিবন্ধন হয়েছে।অন্যদিকে ৬২ লাখেরও বেশি গ্রাহকের আঙুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে না মেলায় আতঙ্কে আছেন তারাও।
আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ এবং ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের অনেকের তথ্য নিয়ে তাঁদের এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র না দেয়ায় তাঁদের সিমগুলো কীভাবে পুনঃনিবন্ধিত হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছুও বলতে পারছে না অপারেটরগুলো।
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর “বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকদের সংযোগ রেজিস্ট্রেশন/ভেরিফিকেশন/রি-অ্যাক্টিভেশন/রি-রেজিস্ট্রেশন/রিপ্লেসমেন্ট/ডি-অ্যাক্টিভেশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার অপরিহার্য উল্লেখ করে মোবাইল অপারেটরগুলোকে চিঠি দেয় বিটিআরসি।”
“তবে যুক্তিগ্রাহ্য কারণে কোনো গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্ত না হয়ে থাকলে তাঁকে পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/জন্ম নিবন্ধন সনদের বিপরীতে ৬ মাসের জন্য সংযোগ দেওয়া যেতে পারে” একথা বলা হলেও বায়োমেট্রিক মেশিনে এনআইডির তথ্য ছাড়া অন্য কোনো অপশন না থাকায় এজেন্ট ফিরিয়ে দিচ্ছে এনআইডি না থাকা গ্রাহকদের।সেই সাথে কোনো কোনো এজেন্ট গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাও।
জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাতের খবর অত্যন্ত তিক্ত। টাকা ছাড়া একটি অক্ষরও পরিবর্তন হয় না। এমনকি এই ধরনের প্রতিবেদন করতে গিয়ে কিছু সাংবাদিক অপমানিতও হয়েছে। ইতোমধ্যেই আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) প্রকল্পের সহকারী পরিচালক (মুদ্রণ) মোস্তফা হাসান ইমাম এবং টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মো. মাহমুদ হাসানকে ‘নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে’ ‘অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের’ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে।
আমি মনেকরি, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাধবাধ্যকতা তৈরি না করে আরো কিছুটা সময় বর্ধিত করার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম/রিম পুনঃনিবন্ধনে হুমকি-ধামকি ও বিতর্কিত বা অর্বাচিন মন্তব্য না করে আরো ক্যাম্পেইন, আরো জনসচেতনা বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরী। সেই সাথে প্রাইভেসি বা নিরাপত্তার ব্যাপারে দেশের জনগণকে আশ্বস্থ করা। খুব সহজ ও দ্রুততার সহিত এনআইডি হালনাগাত করার ব্যবস্থা এবং কতিপয় এজেন্ট কর্তৃক গ্রাহক থেকে রি-রেজিস্ট্রেশন ফ্রি নেওয়া বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে সিম/রিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যেতে পারে।
কবীর চৌধুরী তন্ময়
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ অ্যান্ড ব্যাংকিং এসোসিয়েশন
বিবার্তা/ইফতি