১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশী-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা ও সৈনিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা করে। বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এসময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে অবস্থান করায় ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পান। পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেই দীর্ঘদিন বিদেশে নির্বাসিত ছিলেন শেখ হাসিনা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে। দিনটির জন্য বাঙালি জাতি অপেক্ষা করেছে ছয়টি বছর। এ দিনটিতে সব বাধা উপেক্ষা করে বাঙালিকে আত্মার বাঁধনে বাঁধতে বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যে দিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সে দিন স্বজন হারাবার কথা ভুলে গিয়ে লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে এক নজর দেখার জন্য।
একইভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য বাংলার মুক্তিকামী মানুষ অপেক্ষা করছিল। দিনটি ছিল রবিবার। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়া গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিল। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকার বঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়।
ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কোলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার জবাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।
১৯৮১ সালের ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, জীবনের ঝুঁকি আছে, এটা জেনেই তিনি বাংলাদেশে যাচ্ছেন।
জাতির বিশেষ এক সংকটকালে ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে নেতৃত্ব গ্রহণ করার সোচ্চার দাবি জানানো হয়।
সেদিন থেকে আজ অবধি বাংলার গণমানুষের মুক্তির ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ের নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুধু প্রাণসঞ্চারের জন্য নয়, আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
আজ বিশ্বের বুকে ক্রমেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রজয়ী ও সীমান্তজয়ী কন্যা শেখ হাসিনার সাফল্যগাথা। অন্যদিকে এই ছত্রিশ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে একরকম মোকাবেলা করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
বিবার্তা/কাফী