শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী ছাত্র সংগঠন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী গড়ার এক চলমান পাঠশালা।
প্রিয় নেত্রী
আপনি জানেন ছাত্রলীগ মানে অজস্র আন্দোলন সংগ্রামের নাম, ছাত্রলীগের রয়েছে অনেক বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি জন্মের পর থেকে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, ৭১’র মহান স্বাধীনতা, ৮৮’র বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য, ৮৯ ও ৯০’র স্বৈরাচারী এরশাদের পতন, ২০০৭’র আপনার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনঃউদ্ধার, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ও জামাতের সব আন্দোলন, সংগ্রাম রাজপথে থেকে মোকাবেলাসহ সব আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সামনে থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের আর কোন সংগঠন সেইভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে কিনা আমার জানা নই। আজ অবধি আপনার দেখানো ২০২১, ২০৪১ সালের ভিশন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রিয় নেত্রী,
ছাত্রলীগ আছে বলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রয়েছে। আমার প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও গত ৬-৭ বছরে একটি দিনের জন্য বন্ধ হয়নি। ছাত্রলীগ না থাকলে হয়ত চিটাগাং, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত না করে জামাত শিবির তৈরির কারখানায় রূপান্তরিত করত তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রিয় নেত্রী,
শুধু আন্দোলন সংগ্রামেই না মেধা, মনন ও যোগ্যতায় কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা? প্রতিটা শিক্ষার্থী যখন হাজার হাজার লাখ লাখ প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে দেশের সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তারপর কি বলবেন এরা মেধাবী না? ক্লাসের ফলাফলের দিক দিয়ে এরা যখন প্রথম সারিতে থাকে তারপরও কি এদের শুনতে হবে এরা মেধাবী না? বিসিএস এর মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যখন শত শত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তারপরও কি বলবে ছাত্রলীগ মেধাবী না? এরপরও যখন ভাইভা বোর্ডে গিয়ে শুনতে হয় তুমি ছাত্রলীগ করে এই পর্যন্ত আসলে কি করে? আর কত অবহেলা করা হবে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের কে নিয়ে? মেধার বিকাশ কি কেবল ক্লাস রুমের চার দেয়াল আর পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ; তাহলে হয়ত রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল কে পাওয়া যেত না, বিশ্ব পেত না অনেক নামিদামি সব ব্যক্তি ও বিজ্ঞানী।
প্রিয় নেত্রী,
আপনি শুনলে অবাক হবেন, ছাত্রলীগ করার কারণে বিএনপি ও জামাতের শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষক আছেন যারা আওয়ামী লীগ পরিচয় দিতে ভালবাসেন এবং প্রগতিশীল শিক্ষকরা ক্লাসে তাদের প্রায়শ মার্ক কম দিয়ে থাকেন। এমনকি মিছিল, মিটিং বা আন্দোলন সংগ্রামের কারণে ক্লাস উপস্থিতি একটু কম থাকলে তাদেরকে অনেক সময় পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না, অথচ ছাত্রদল, ছাত্রশিবির কোনো ক্লাস, অনেক পরীক্ষা না দিয়েই দিব্যি পাস করে বের হয়ে যাচ্ছে। এদের ভিতর কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত ভাল মার্ক পেয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকও হয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় নেত্রী,
আপনি হয়ত জানেন না, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকর্মী যারা কিনা ছাত্রলীগের প্রটোকল নিতে খুব ভালবাসেন এবং মুখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ফুটান কিন্তু ছাত্রলীগ কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে বা কোনো বিষয়ে সাহায্য চাইলে তখন নৈতিকতার দোহাই দিয়ে কিছু নৈতিক বাক্য (তাদের সময় ছাত্রলীগ এই রকম ছিল না, ঐ রকম ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি) শুনিয়ে আর কিছু ফ্রি উপদেশ দিয়ে বিদায় করে দেন। অনেক নেতাই (সবাই না) আবার তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কথা চিন্তা করে ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে সুপারিশ না করে অরাজনৈতিক বা ভিন্ন মতাবলম্বীর কাউকে সুপারিশ করে থাকেন। এই কাজগুলো সব থেকে বেশি করে থাকেন সরকারি আমলারা।
প্রিয় নেত্রী,
আমার ভয় হয়, আশঙ্কা হয় এইভাবে চলতে থাকলে কোনো দিন জানি শুনতে হবে আপনার দপ্তরে এমনকি আপনার নিরাপত্তা প্রটোকলে ভিন্ন মতাবলম্বীর (যারা এখনো দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে চায়) কেউ চাকরি করছে।
প্রিয় নেত্রী,
আমাদের মত হাজারও নেতাকর্মী আছেন যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে হল রাজনীতি, ক্যাম্পাস রাজনীতি অথবা কেন্দ্রীয় রাজনীতি করেন যারা কিনা এখন বাড়ি থেকে মাস শেষে টাকা এনে নিজে চলেন ও জুনিয়র কর্মীদের পিছনে খরচ করেন। কিন্তু আমাদেরই সমসাময়িক বন্ধুরা দিব্যি প্রথম সারির চাকরি করে যেমন নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছে আবার পরিবারকে মাস শেষে টাকা পাঠাচ্ছে অথচ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তাকে মাথায় নিয়ে মাস্টার্স শেষ করে আমাদের এখনো প্রচুর পরিমাণ অর্থ বাড়ি থেকে এনে খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের কষ্টের জায়গা এইটা না, কষ্টটা হচ্ছে একজন মেধাবী ও পরিশ্রমী কর্মী যখন ছাত্ররাজনীতির সর্বোচ্চ সাফল্য নিয়ে তার বয়স শেষ করেন তখন তার না থাকে চাকরির বয়স না থাকে ব্যবসা করার মত টাকাকড়ি। আবার না পারেন এলাকার রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে কারণ এলাকায় যারা রাজনীতি করেন তারা এক একজন বট গাছ আর বট গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ হয় না, যা হয় দু' একটা তাও আবার আগাছা বানিয়ে রাখার সব ধরনের চেষ্টা অপচেষ্টা করা হয়। এখানে মেধাটাকে সব থেকে বড় অযোগ্যতা হিসাবে দেখা হয়, এই একই চিত্র ঢাকার রাজনীতিতেও।
প্রিয় নেত্রী,
তাহলে ছাত্রলীগের কর্মীরা যাবে টা কোথায়??
প্রিয় নেত্রী,
দেশ আজ আপনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এটা প্রায়শ দেখা যায় যখন কোনো দেশ উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হয় বা উন্নত দেশে রূপান্তরিত হয় সে সব দেশের নাগরিকরা সমষ্টিগত ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা পরিবারকেন্দ্রিক ধ্যানধারণা মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যান। হয়ত এই ধ্যানধারণার কারণে অথবা অদূর ভবিষ্যতেও যদি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হয় বা ১০০% অনিশ্চিয়তাকে মাথায় নিয়ে রাজনীতি করতে হয় তাহলে হয়ত অনেক যোগ্য ও মেধাবী কর্মীরা তাদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
প্রিয় নেত্রী,
আমাদের অনেক বেশি দরকার নেই চাই শুধু আত্মঅহংকার ও আত্মমর্যদাবোধ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে দল, দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে। আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু যে মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটি লাল সবুজের পতাকার জন্য জাতির পিতার নির্দেশে লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে সেই স্বাধীনতা এবং লাল সবুজের পতাকার গায়ে যাতে করে ওই পাকিস্তানি দোসররা (জামাত, বিএনপি) কোনো প্রকার আঁচড় না দিতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা সদা জীবন দিতেও প্রস্তুত। অতীতের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের ন্যায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী মুজিব আদর্শকে বুকে ধারণ করে নেত্রী আপনার দেখানো পথে এগিয়ে যাবে।
"জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।" জয়তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
লেখক: যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, মাস্টারদা' সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ
বিবার্তা/সুমন/জিয়া