শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া এই সংগঠনটির অবদান মিশে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের পরতে পরতে। যখনই দেশ কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে, এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির যেকোনো দুর্যোগের সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছে দেশের জন্য।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬’র শাসনতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭০’র নির্বাচনে অপরিসীম অবদান রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার আপামর জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ১৭ হাজারের বেশি নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন।
ছাত্রলীগ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবসময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রম পালন করে আসছে। সমাজের যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রলীগ সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশের পুনর্গঠনে কাজ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের কাজ করেছে। যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বহু রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃনির্মাণ করেছে ছাত্রলীগ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দমে পড়েনি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে গিয়েছে। জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছে।
৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাস। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ছাত্রলীগ সবসময় সমাজের কথা ভেবেছে, সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করেছে। দেশে শিক্ষার প্রসার ও নিরক্ষরতা দূর করার জন্য বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ পথশিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বয়স্ক নিরক্ষর ব্যক্তিদের সাক্ষরতা শিখিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে। শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ২০১৫ সালে যখন নেপালে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে সাহায্য তুলে নেপালে পাঠিয়েছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “ক্লিন ক্যাম্পাস সেফ ক্যাম্পাস” নামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। যার উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসের পরিবেশকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখা।
কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা বাংলাদেশে ১০ লাখ গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে “গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস” এ নাম লেখাবে। শুধু গিনেজ বুকে নাম লেখানোর জন্য নয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই কাজটি করছে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ঝড়, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকিতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে দুই মেরুর বরফ গলে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেভাবে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গপোসাগরের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই।
উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে বনায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে অনেকাংশে বাংলাদেশকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সারা দেশে ১০ লাখ গাছের চারা রোপণের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করে সুখী, সমৃদ্ধ, ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারা দেশে বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণ করল এদেশের উন্নয়নের জন্য তারা কতটা নিবেদিত প্রাণ। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে এই উদ্যোগ স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
লেখক: ইসতিয়াক আহমেদ, সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
বিবার্তা/নিশি