প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবে পাঁচ দিনের সরকারি সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি যখন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল, তখন পাইলট রানওয়েতে ধাতব বস্তু দেখতে পান। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পাইলট বিমানটি অবতরণ না করে ফের আকাশে উড্ডয়ন করেন। ধাতব বস্তুটি সরানো হলে প্রায় ২০ মিনিট পর বিমানটি অবতরণ করান তিনি।
ধরা যাক, বিমানটি সেই ধাতব বস্তুর ওপর ল্যান্ড করলো! এরপর কী হতো তা ভাবুন একবার। বিচক্ষণ পাইলট প্লেনটি ল্যান্ড না করিয়ে আবার ফ্লাই করেন। অথচ সিগন্যাল অপারেটর ঠিকই প্লেন ল্যান্ডের সিগনাল দিয়ে রেখেছেন। কন্ট্রোল রুম থেকে একেকবার একেক দিকে যেতে বলা হয়ছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বারবার পাইলটরা প্রকৃত কারণ জানতে চান। অনেক পীড়াপীড়ির পর কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয় যে রানওয়ে সাময়িক বন্ধ আছে। রানওয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে অবতরণ করে।
প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট আসার অনেক আগেই বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটির উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। প্রায় ২৮০ কিলোমিটার বেগে থাকা ওই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন থেকে বিভিন্ন ধাতব টুকরা ছিটকে রানওয়েতে পড়ে।
নিয়ম হচ্ছে এ ধরনের কোনো উড্ডয়ন বাতিল হলে রানওয়ে পরিদর্শন করা। কারণ, উচ্চগতিতে থাকা বিমান থামাতে গেলে অনেক সময় চাকা বা অন্য কোনো উপাদান ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মঙ্গলবার রানওয়ে পরিদর্শনের এই নিয়ম মানা হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ভেঙে ছিটকে পড়াটাও অস্বাভাবিক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ভেঙে ছিটকে পরার কারণ কেনো এখনো অনুসন্ধান করা হয়নি?
উড্ডয়ন বাতিল হলে রানওয়ে পরিদর্শন করার নিয়ম থাকলেও কেনো বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ভেঙে ছিটকে পরার পর সে স্থান কোনো বিমান কর্মকর্তা পরিদর্শন করেননি?
রানওয়েতে প্রধানমন্ত্রীর প্লেনের ল্যান্ডিং স্থানে কেনো সে সময় ধাতব বস্তু ছিলো? তারা কী জানতেন না প্রধানমন্ত্রী ল্যান্ড করবেন?
কেনো রানওয়ে আগে থেকে পরিষ্কার করা হয়নি?
কেনো ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে এসএসএফ সদস্যরা কোনো অপারেটর বা কর্মকর্তাকে পাননি?
কেনো কন্ট্রোল রুম থেকে একেকবার একেক দিকে বিমান নিয়ে যেতে বলা হয়ছে পাইলটদের?
তার মানে এই দাঁড়ায়, তারা ধরেই রেখেছে প্লেনটি ল্যান্ড করবে এবং অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে। তাই তারা রানওয়ে পরিষ্কার করেননি। এ সময় রানওয়ে পরিষ্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসফ সদস্যরা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক রুমে গিয়ে দায়িত্বরত কাউকে খুঁজে পাননি। এ কারণে আরো ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাগে রানওয়ে পরিষ্কার করতে।
একজন প্রধানমন্ত্রী সাথে এ কেমন রসিকতা? তিনি বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
এর জট খোলা দরকার এবং সেই সাথে এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহানকে ২০১১ সালে কর্মরত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে। এ কারণে তাকে বদলি করা হয়। কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এই ইফতেখার জাহান আবার একই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। গত ১৮ এপ্রিল যাত্রীর টাকা চুরির দায়ে তাকে সতর্ক করেছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তবে কী সেই? নাকী অন্য কোনো কুশীলব?
দায়িত্বশীলদের সাসপেন্ড বা প্রত্যাহার করাই শেষ কথা নয়। এর ঘটনার পেছনে কী কলকাঠি রয়েছে বা কার ইন্ধন রয়েছে এ রহস্যে বের করতে হবে।
তাদের উদ্দেশ্য কী ছিলো? প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে প্লেন ক্রাশ বলে চালিয়ে দেয়া??
যেই বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীর জীবনের নিরাপত্তা নেই সেখানে সাধারণ যাত্রীরা কতটুক নিরাপদ?
ব্যাগ, ল্যাগেজ নিয়ে টানাটানি থেকে শুরু করে জীবন নিয়ে পর্যন্ত বিমান বন্দরের কর্মকর্তারা টানাটানি করে৷
আল্লাহর রহমত আছে বলেই শেখ হাসিনা আবার প্রাণে বেঁচেছেন।
লেখক: ইণ্জিনিয়ার ইফতেখার উদ্দিন
সাংবাদিক ও লেখক
বিবার্তা/জিয়া