আফগান ফুটবল দলকে দেখলে বড্ড হিংসে হয়। একসময় বলে কয়ে হারাতাম ওদের। আমাদের প্রথম আন্তর্জাতিক জয়টাও ওদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ওদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আমরা। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ'টা লড়াই করে এগিয়ে গেছে আর আমরা লড়াই ছাড়াই পিছিয়েছি। এক সময় আমরা র্যাঙ্কিং এ ১১০ ছিলাম। এখন ১৮১, কিছুদিন পরে হয়তো ২০০তে যাবো। একসময় আমাদের তুর্য ছিলো। যাকে উপমহাদেশের সবাই এক নামে চিনতো। ছিলো মোনেম মুন্না। যার জন্য পুরো ভারত পাগল ছিলো। তারও আগে ছিলো জাদুকর সামাদ।
একটা ছোট্ট ঘটনা বলি, সেইসময়ের ব্রিটিশ এক উচ্চপদ কর্মকর্তা তার মেয়েকে নিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেইসময় ফুটবল পায়ে বাসায় ফিরছিলেন সামাদ। গাড়ি থামিয়ে জাদুকর সামাদ'কে দেখিয়ে ব্রিটিশ সেই কর্মকর্তা তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, " পরিচয় হও বর্তমান দুনিয়ার সেরা ফুটবলারের সাথে।"
আরো এরকম অনেক ছোটখাটো ঘটনা বলা যায়। বলা যায় তুর্যের কথা। মুক্তিযুদ্ধকালীন তহবিল সংগ্রহে ভারতে গিয়েছিলেন তুর্য। ট্রেনে তাকে পিঠ চাপড়ে বিখ্যাত এক ভারতীয় ফুটবলার বলেছিলো, "ঠিকছে খেলো ছোকড়া, তুম জেসা ফর্ওয়ার্ড ইস সাফ কন্টিনেন্ট মে নেহি মিলেগা।"
আজ হয়তো এই ইতিহাস আপনাদের জন্য লিখছি। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কাদের ইতিহাস শোনাবো? তাজিকদের বিপক্ষে ৫ গোল খাওয়ার ইতিহাস ? হয়তো ওরা জিজ্ঞেসও করবে না। কারণ দেশীয় ফুটবলে তাদের হয়তো কোন আগ্রহই থাকবে না। তারা বড় হবে মেসি, নেইমার, রোনালদো, বেইলের ইতিহাস পড়ে।
১৯৭৮ সালে এক দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে চুন্নু দু:খ নিয়ে বলেছিলেন, "দেখুন মালয়েশিয়া'র সাথেই যদি আমাদের খেলার এত পার্থক্য থাকে তবে ইউরোপের দলগুলো সাথে আমাদের কি অবস্থা হবে?"
চুন্নু ৭৮রেই বুঝেছিলেন, আমরা ১৬তেও বুঝিনি।
তাই এখনো স্বপ্ন দেখি। মাঠে না খেলে কথায় ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন। আমরা বুঝতে চাইনা বিশ্বকাপ কোন আলাদীনের প্রদীপ নয়। এটা, 'দা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।' যেখানে আমাদের দর্শক হিসেবেই ভালো মানায়।
লেখক: মাহরুস হাসান প্রত্যয়
বিবার্তা/ইফতি/ডিডি