বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভাময় এক লীলাভূমি।এই দেশের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার সৌন্দর্যের সমাহার। আমাদের দেশের গ্রামগুলো ছবির মতো সাজানো আর গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর অতিথিপরায়ণতা গ্রামীণ সৌন্দর্যকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়। অন্ধকার রাতে জোনাকি পোকার শরীরের আলো গ্রামগুলোকে করে তোলে চোখ ঝাঁঝালো। গ্রীষ্মকালে প্রতিটি গ্রামে গাছে গাছে আম, কাঠাল, লিচুতে ভরপুর থাকে।নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় গ্রামগুলোতে শুরু হয় নবান্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের আমেজ।
বাংলাদেশের গ্রামগুলো হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের অপার সম্ভাবনা। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ১৯৯০ সালে ‘ওয়ান ভিলেজ ওয়ান ডেস্টিনেশন’ নামে প্রচারাভিযান করেছিল। সেই প্রচারাভিযানের আলো্কে ‘একটি গ্রাম একটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে আমরা বিদেশি পর্যটকদের কাছে আমাদের গ্রামগুলকে উপস্থাপন করতে পারি ।বাংলাদেশের ৮৬ হাজার গ্রামবাংলা ৮৬ হাজার পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র কারণ একটি গ্রাম থেকে আরেকটি গ্রাম আলাদা। কোন কোন গ্রাম নদীকেন্দ্রিক, পাহাড় কেন্দ্রিক, হাওরকেন্দ্রিক, বিলকেন্দ্রিক।
একটি গ্রাম থেকে আরেকটি গ্রামের মানুষের আচার-ব্যবহার, সংস্কৃতি, শিক্ষাদীক্ষা, প্রথা, নীতি, জীবনযাত্রা, বিবাহ-অনুষ্ঠান আলাদা।কৃষকের ধানের চারা রোপণের দৃশ্য আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় এই দৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোথও দেখা পাওয়া বিরল।মাঠের পর মাঠ সবুজ শস্যক্ষেত্গুলো দেখে যেন মনে হয় সবুজ রাজ্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে।গ্রামীণ মানুষের অতিথিপরায়ণতা যে কোন পর্যটককে বার বার ফিরে নিয়ে আসবে গ্রামগুলো ভ্রমণ করতে।
আমরা যদি গ্রামীণ পর্যটনের দিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামীন পর্যটনকে বিকশিত করতে পারি তাহলে গ্রামীণ আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, গ্রামীণ শিক্ষিত বেকারদের কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যাবে। গ্রামীণ পর্যটনের জন্য আমাদের বেশি কিছু করতে হবে না কারণ বিদেশী পর্যটকেরা গ্রামীণ পরিবেশ বেশি উপভোগ করে। তাদের জন্য নতুন করে ইটের ঘর-বাড়ি বানানোর দরকার নেই।
বিদেশী পর্যটকরা গ্রামে যায় গ্রামীণ সৌন্দর্য অবলোকন করতে, সেখানকার মানুষের সাথে মিশে তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, খাদ্য-অভ্যাস সম্বন্ধে জানতে। তারা আমাদের সাথে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার খাবে, কৃষকদের ফসল রোপণ করা দেখবে, পুকুর থেকে মাছ ধরবে, পাকা ফল গাছ থেকে পেড়ে খাবে এবং যেসব এলাকায় মাটির ঘর-বাড়ি সেখানে মাটির ঘর-বাড়িতে তারা রাতে ঘুমাবে এগুলো হবে তাদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।কারণ পর্যটকরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে এবং এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যায় অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে।
লেখক: মো. সাইফুল্লার রাব্বী. সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশন’ (ITSC)- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়
বিবার্তা/জিয়া