দূর অতীতে মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের একছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো এদেশের মাদ্রাসাগুলো। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে সে মাধ্যম, জঙ্গিবাদ বিস্তারের টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত কয়েক বছর বেশ কয়েকবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্লগার থাবা বাবা হত্যাকাণ্ডে আটককৃত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবর্গের কথা। ধর্মের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের বিস্তার এখন আর মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হচ্ছে না তার প্রমাণ অতীতে মিললেও সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া 'গুলশান ট্রাজেডি ' আমাদের তা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে।
জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া দেশের আনাচে কানাচে নিয়মনীতি বহির্ভূত গড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ শিক্ষাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে উচ্চ শিক্ষার সাইনবোর্ডের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। আর এসবের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে অর্থলিপ্সু এক শ্রেণির বণিক সম্প্রদায়। এর মধ্যে জামায়াত-শিবির মালিকাধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সবার শীর্ষে। এর আগে অনেক সময় অভিযোগ উঠলেও এ সমস্যা নিরসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
কিন্তু 'গুলশান ট্রাজেডি'র পর এখন আর কোনোভাবেই এ বিষয়টিকে অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই। তাই এসব ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোক অতিসত্বর সরকারি নজরদারীর আওতাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবির মালিকাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অপর একটি দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে থেকে যাওয়া বিভিন্ন অমানবিক ও বৈষম্যপূর্ণ আইনের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বর্তমান বিশ্বের প্রথম 'গণতান্ত্রিক অধিকার' রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। দেশের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার ৬৫% বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
ফলশ্রুতিতে কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আর কোনো সুযোগই শিক্ষার্থীদের থাকছে না।
অপরদিকে, জামায়াত-শিবির সেগুলোকে পরিণত করছে মৌলবাদের খোয়াড়ে। মূলত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরণের জঙ্গি কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। শুধু তাই নয়, বিগত চার বছরে শুধু ছাত্ররাজনীতি করার কারণে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ, হরণ করা হয়েছে তাদের শিক্ষা গ্রহণের মৌলিক অধিকার।
এর মধ্যে এখনো মনে দাগ কেটে আছে সাম্প্রতিক সময়ের নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি। 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ' যা কিনা বাঙালির প্রাণের স্লোগান, সেই স্লোগান দেয়ার অপরাধে রুবেল নামের এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। বাঙালির প্রাণের স্লোগান দিলে যেখানে ছাত্রত্ব হারাতে হয় সেখানেই যে উন্নতমানের জঙ্গিবাদের চাষ হচ্ছে সেটা তখন প্রমাণের আর অপেক্ষা রাখে না। এর কোনোটিই শুভ লক্ষণ নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির জন্য এক অশনি সংকেত।
পক্ষান্তরে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি অনায়াসেই ক্যাম্পাসের ভেতর চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মৌলবাদী কার্যক্রম। বর্তমানের কঠিন সময় সহজভাবে উত্তরণের এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
রাজনীতি প্রতিটি মানুষের 'গণতান্ত্রিক অধিকার'। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই অধিকার হতে বঞ্চিত থাকতে চাই না। আমাদের কথা মানবিকতার সাথে বিবেচনা করে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে জঙ্গিবাদ সমূলে উতপাটনের লক্ষ্যে 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ' হতে ছাত্ররাজনীতিকে বৈধ ঘোষণা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত করা হোক।
লেখক : হুমায়রা নাজ
গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
বিবার্তা/মৌসুমী/ইফতি