ট্যুরিজম, ন্যাশনালিজম, টেররিজম এই ত্রয়ী শব্দের শেষান্তে মিল রয়েছে। প্রথমটির জন্য দ্বিতীয় যতো প্রয়োজন, তৃতীয়টি ততো ক্ষতিকর। কোনো রাষ্ট্রের জনগন যতো বেশি দেশপ্রেমিক হয় তারা ততো বেশি ট্যুরিজমের উন্নয়ন করে। ঐ দেশের প্রত্যেকটি ইঞ্চি মাটি তারা সাজিয়ে গুছিয়ে পর্যটনের আকর্ষণে রুপদান করে।
অপরপক্ষে যারা দেশকে ভালবাসে না , ভিন্নমত কায়েম করতে চায় তারা সবসময় রাষ্ট্রে ভীতিসঞ্চার করে রাখে যা পর্যটন বিকাশে হুমকিস্বরূপ। ট্যুরিজম বলতে মানুষের স্বাভাবিক বাসস্থান ও কর্মস্থলের বাহিরে যে কোনো দর্শনীয় স্থানে অবস্থানকালীন সময়েক্ষণ স্থায়ী ঘোরাফেরা, ভ্রমন, বিনোদন, ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রমসহ চাহিদাপূরণ সম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বোঝায়। জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানবসমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। ট্যুরিজমের সাথে ন্যাশনালিজমের সমানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যামান।
ন্যাশনালিজমের মাত্রা যতো বেশি বৃদ্ধি পাবে ট্যুরিজমের মাত্রা ঠিক ততখানি বাড়বে। আর ট্যুরিজ্মের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ফলে একটা দেশের জনগনের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে এবং বহির্বিশ্বে ঐ জাতির তথা রাষ্ট্রের সুনাম বাড়বে।
অপর পক্ষে সন্ত্রাসবাদ হলো যে সকল বিধ্বংসী কার্যকলাপ জনমনে ভীতির উদ্বেগ ঘটায়, ধর্মীয়-রাজনৈতিক অথবা নীতিগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃতরুচিবিরুদ্ধ কাজ। ট্যুরিজমের সাথে টেররিজমের সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক। টেররিজমের মাত্রা যতো বৃদ্ধি পাবে ট্যুরিজমের মাত্রা ততো হ্রাস পাবে।
ভ্রমন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আদিকাল থেকে মানুষ নিরাপদ ভ্রমনে অভ্যস্থ। চিত্তবিনোদনের জন্য মানুষ ঝুঁকিহীন স্থান নির্বাচন করে। ভ্রমনের জন্য পর্যটনের বিভিন্ন উপাদান অবশ্যই প্রয়োজন। পর্যটনের বিভিন্ন উপাদানগুলো হল - পরিবহন, আবাসন, খাদ্য ও পানীয় ,আকর্ষণ এবং বিনোদন। যদি এসব উপাদানগুলোর কোনোটাতে বিঘ্ন ঘটে তবে পর্যটন বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। যে দেশের যোগযোগ ব্যবস্থা যতো উন্নত ঐ দেশের পর্যটন শিল্প ততো বিকাশমান। ঠিক তেমনি কোনো দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতো শক্তিশালী ঐ দেশে ভ্রমন করা ততো বেশি আরামদায়ক। যখন কোনো সম্প্রদায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করার উদ্দেশ্যে পরিবহনখাতে হামলা করে তখন যাত্রী তথা পর্যটকের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনি কোনো হোটেল কিংবা রিসোর্টে হামলা হলে পর্যটকরা সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অধিকন্তু খাদ্যে এবং পানীয়ে যদি ভেজাল , বিষক্রিয়া মিশ্রিত করে ভীতিসঞ্চার করা যায় তবে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন জ্যামিতিক হারে কমে যাবে। এছাড়া যখন কোনো পর্যটক একটা কোনো নির্দিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমনে যায় তখন তার প্রধান অভিপ্রায় থাকে পর্যটন আকর্ষণ এবং বিনোদন। পর্যটনস্থানের সৌন্দর্য যতো বেশি পর্যটকদের বিনোদন ততো বেশি। যেখানে বিনোদন সুবিধা বেশি সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। কিন্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থার ঘাটতি বা অন্য কোনো কারণে যখন সেখানে জঙ্গিহামলার উদ্ভব হয়, তবে পর্যটকদের মনে ভীতিসঞ্চার হবে। ফলে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাবে। পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে আর রাষ্ট্র তার আয়ের উৎস হারাবে। অবশেষে পর্যটনকেন্দ্রের বিকাশ ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে এবং একদিন এই পর্যটনকেন্দ্রের অস্থিত্ত্ব হারিয়ে যাবে।
তাই পর্যটনস্থানগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে দেশপ্রেমিক হয়ে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হয়ে কাজ করতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মুলোৎপাটন করে জঙ্গিহামলার চিরবিদায় জানিয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করতে হবে। তবেই আমাদের পর্যটনের সোনালি দিনগুলো দরজায় কড়া নাড়বে।
লেখক: এম.খোরশেদ আলম, শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/মৌসুমী