পৃথিবীর বৃহত্তম শিল্পগুলোর অন্যতম পর্যটন শিল্প। স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি অন্যসব শিল্প থেকে আলাদা। বর্তমান সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ অবদানকারী শিল্পের নাম হচ্ছে পর্যটন শিল্প। এ শিল্প বেকার সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কেননা এটি হচ্ছে শ্রমঘন শিল্প।
একজন পর্যটক যখন কোনো দেশে যায় তারা শুধু পাঁচ তারকা হোটেলে খাওয়া-দাওয়া বা ঘুমাতে যায় না তারা সেদেশের আচার অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, জীবনপ্রণালী, রন্ধনপ্রণালী দেখে আর নিয়ে আসে অভিজ্ঞতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে জাতি যত ভ্রমণপিপাসু সে জাতি তত সভ্য। তাই বলা যায়, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় পর্যটনের বিকল্প নেই। তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও পর্যটনের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে অনেক দেশের অর্থনীতি পর্যটনকেন্দ্রিক। ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, বর্তমান সময়ে ১০০ কোটির বেশি পর্যটক এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে এর সংখ্যা ১৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
গবেষণায় দেখা যায়, একজন পর্যটক আসা মানে ৩০ জন লোকের কাজের সুযোগ এবং ৩০ জন লোকের হাতে অর্থ বদল হওয়া। কারণ একজন পর্যটক আসেন অর্থ ব্যয় করার জন্য, তার বিনিময়ে নিয়ে যান কিছু ভালো লাগার মুহূর্ত ও কিছু অভিজ্ঞতা।
যখন একটি দেশের অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকে তখন সে দেশকে ভাবতে হয় টেকসই পর্যটন নীতির কথা। আর তখন টেকসই পর্যটন হয়ে দাঁড়ায় টেকসই অর্থনীতির চাবিকাঠি।
টেকসই পর্যটন বলতে আমরা বলতে পারি পর্যটনের উপাদান, উপকরণ ও আকর্ষণগুলো যথাযথ ব্যবহার করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জীবনপ্রণালী ও পরিবেশের কোনো রকম ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ব্যবহার ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।
সহজ কথায় আমরা আমাদের সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, নিঝুমদ্বীপ, রাঙ্গামাটি, সিলেট, বান্দরবান ইত্যাদি আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর সৌন্দর্য শুধু নিজেরাই উপভোগ করবো না, সেগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উপকারিতার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণই হল টেকসই পর্যটনের মূল কথা।
পর্যটনকে কখনোই সম্পূর্ণরূপে টেকসই করা যাবে না। কেননা পর্যটন শিল্পে নানা রকম প্রতিকূলতা রয়েছে। তারপরও আমাদের টেকসই পর্যটনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, যাতে টেকসই পর্যটনের মাধ্যমে
টেকসই অর্থনীতি ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
লেখক : সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টার।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন