আশির দশকের কথা, তখন স্কুলে পড়ি। আমার ছোট খালারা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। ছোট মামা খবর আনলো, নানাবাড়িতে টিভি কিনে আনা হয়েছে। মামা আরও বললেন, এ সপ্তাহে সিনেমা আছে।
তখন টিভিতে মাসে একটা সিনেমা দেখানো হতো। খালারা যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেলো। আমিও সিনেমা দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। আমাদের বাড়িতে সিনেমা দেখার কোন সুযোগ ছিল না।
কারণ, আমার দাদা ছিলেন প্রখ্যাত আলেম। বাবা আর দাদা রেডিওতে বিবিসি শুনতেন। সিনেমা তো দূরের কথা, শেফালী ঘোষের গান শুনতেও তাঁদের দেখিনি।
তাই সিনেমা দেখার খবর গোপন রেখে শুভ যাত্রা করলাম।
নানাবাড়ি পৌঁছে আগে টিভি সেট দর্শন করলাম। ছোট সাদাকালো টিভি। তখন সারাদিন টিভিতে অনুষ্ঠান চলতো না। ছুটির দিনে বিকেল তিনটা থেকে এবং অন্যদিন সন্ধ্যা ছ'টা থেকে চলতো।
তিনটা বাজার সময় যখন হলো পাড়ার সবাই আসতে শুরু করল। পরিচালক (সেজ মামা) গম্ভীর মুখে বললেন, দরজা-জানালা বন্ধ কর। অন্ধকার না হলে ছবি ভালো দেখা যাবে না। কেউ কথা বললে তাকে বের করে দেয়া হবে। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ বের হলে তাকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না...
টিভি ছাড়া হলো -- শো শো শি শি পুশশশশ - শব্দসহযোগে টিভি ঝিরঝির করতে লাগলো। সবাই অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মামার ভয়ে কেউ টু শব্দটিও করছে না।
পরিচালক টিভির নব ঘোরাতে লাগলেন। পরিচালক ছাড়া আর কারো টিভির গায়ে হাত লাগানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি একজনকে এন্টেনা ঘোরানোর জন্য পাঠালেন। হাঁকডাক শুরু হলো - হইইইছে? হয় নাইইই... । অনেক কষ্টে ঠিক হলো।
শুরু হয়ে গেলো বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা। সিনেমার নাম ছিল সম্ভবত জোয়ার ভাটা। আর কিছু মনে নেই।
এখন টিভিতে কতো কতো সিনেমা হয়। মামা-খালাদের সাথে বসে সেজ মামার দুষ্টুমিভরা পরিচালনায় এমন মজা করে সিনেমা দেখার স্মৃতি এখন আমি আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে রোমন্থন করি এবং রোমাঞ্চিত হই।
আহা, দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম।
লেখক : গৃহবধু
বিবার্তা/মৌসুমী