১৫ আগস্ট ১৯৭৫, ২১ আগস্ট ২০০৪ এক ও অভিন্ন। দুটো হামলাই চালানো হয়েছিলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে। ৭৫ এ তারা সফল হয়েছিল, তাদের মিশন সম্পন্ন হয়েছিল জেলহত্যার মাধ্যমে। ২০০৪ এ তারা সফল হয়নি। যদি সফল হতো তাহলে আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেমন অবস্থায় দাঁড়াত? ঘাতকদের লক্ষ্যবস্তু ছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলেই দেশকে আওয়ামীশুন্য করার কাজটি সমাধা হয়ে যেতো। দুটো ন্যক্কারজনক হত্যা মিশনের কুশীলব ও তার শিকার কেবল উত্তরাধিকার।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সবচেয়ে বড় বেনিফেসিয়ারি ছিল জিয়া। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে তার সবচেয়ে বড় বেনিফেসিয়ারি হতো তারেক। জিয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা জানতেন। হত্যার পরে হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছিলেন। তারেক ২১ আগস্ট হত্যা মিশনের কথা জানতেন এবং ঘটনার পরে হত্যাকারীদের বাঁচিয়েছেন। কত মিল! বাপ কা বেটা, সিপাহী কা ঘোড়া, কুছ নেহীতো থোড়া থোড়া। কিন্তু এক্ষেত্রে সুন্দর মিল।
শেখ হাসিনাকে হুজি চারবার হত্যার চেষ্টা করেছে, আর সরকারের সরাসরি মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সবচে বড় ধরনের হামলাটি চালাতে সক্ষম হয়েছে ২১ আগস্ট ২০০৪। ২১ আগস্টের হামলার পরে তৎকালীন সরকারের কার্যকলাপ ও বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ওই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় জড়িত ছিল।
রাষ্ট্রে জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে ওই সময়ের সরকার এবং সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার মানসে যে কূট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তার সরল প্রকাশ এই হত্যাকাণ্ড। ওই সময়ে দেশে ছিলো অবারিত জঙ্গিবাদ।
তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যায় জড়িত ছিল আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারই সন্তান তারেক রহমান জড়িত। তারেক রহমানই হাওয়া ভবনে বসে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই। অন্যদিকে ২১ গ্রেনেড হামলার জন্য তারেক রহমানের বিচার চাই।
১৫ আগস্টের মতো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হওয়া দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি। দেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার যে প্রত্যয়ে রয়েছে তাতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত অপরাধী এবং হুকুমের আসামিদের যথোপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জাতিকে আশান্বিত করবে। দেশবাসী আশ্বস্ত হবে এই ভেবে যে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, অপরাধী যতোই শক্তিশালী হোক বিচার তার হবেই।
ঘৃণ্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ১১ বছর পূর্তিতে নিহত ও আহতের প্রতি সমবেদনা জানাই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কখনই উগ্র ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হতে পারে না। কোনো অশুভ প্রেতাত্মা বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করুক, তা কারো কাম্য নয়। উগ্রতা এবং জঙ্গি অপতৎপরতাকে রুখতে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
সারা বিশ্ব আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, আমাদেরও এদের বিরুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। রাষ্ট্রীয় মদদে এদেশে যেন আর সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করা না হয়ে সেদিকেও সকলকে নজর রাখতে হবে।
লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জামালপুর জেলা শাখা
বিবার্তা/জিয়া