জবির আবাসন সংকট ও কিউট বিপ্লবীদের আন্দোলন

জবির আবাসন সংকট ও কিউট বিপ্লবীদের আন্দোলন
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৬, ১৭:০৬:৩৩
জবির আবাসন সংকট ও কিউট বিপ্লবীদের আন্দোলন
রেজা আকাশ
প্রিন্ট অ-অ+
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যেদিন কয়েদীদের স্থানান্তর করা শুরু হলো তার কয়েকদিনের মধ্যেই ফেসবুকে এক ধরনের দাবি দেখলাম যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আবাসিক সংকট নিরসনে আপাত পরিত্যক্ত জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ দিতে হবে। এরপর দাবির পক্ষে ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হল। দুয়েকদিন পর সে দাবির স্বপক্ষে শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে যথারীতি আমাদের কিউট বিপ্লবী ভাইদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলন শুরু হল। হুট করে নতুন এই আন্দোলন কেন?
 
কেন্দ্রীয় কারাগার সরানোর প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের বিষয় ছিল। কই তখন তো পরিত্যক্ত জমি নেয়ার জন্য সেরকম কোনো্ উচ্চবাচ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মুখে শুনিনি। বরং পুরান ঢাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনের অভাব মেটানেরা জন্য সেখানে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাই অনেক আগে থেকে শুনেছি। বিষয়টি সেভাবেই সেটেল ছিল। 
 
জানা মতে, এই কারাগারের ১৮ একর জমিতে করা হবে পার্ক, জাদুঘর, কনভেনশন সেন্টার, উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ ও প্রচুর খোলা জায়গা থাকবে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকবারই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, পুরান ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে, রুক্ষ নগরীর বুকে সবুজায়ন করতে কারাগারের ওই জায়গা তিনি পুরান ঢাকা নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। সেখানে থাকবে খেলার মাঠ। আমার আশঙ্কা, ঢাকায় যে পরিমান বড় বড় ভূমিদস্যূ আছে তাদের বিপক্ষে একজন মেয়র কি-বা করতে পারবে। তবুও তাঁর কথাগুলো শুনে আমার ভালো লেগেছিল। সে যাই হোক সবকিছু ঠিকমতই চলছিল। তাই মনে হয় বিষয়টি আমাদের কিউট বিপ্লবী ভাইদের ভালো লাগেনি। 
 
পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় জ্ঞান দিয়ে, মেট্রোরেল হলে ঢাবির ল্যান্ডস্কেপ নষ্ট হওয়ার আওয়াজ তুলে, সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় রামপাল প্রকল্প বন্ধ করতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও তারা পুরান ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের এই পদক্ষেপকে কিন্তু স্বাগত জানায়নি। বরং ওই জমি দখল করতে তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করছে। যেটা আমার কাছে আপাতদৃষ্টিতে আরো একটা খামাকা ইস্যু ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। এই আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই কিউট বিপ্লবী ভাইদের ভিন্ন কোনো মতলব আছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবাসিক হল সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। নানা কারণে আবাসিক হলবিহীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দু:খ শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা বর্ণণাতীত। কিন্তু সরকার তো তাদের সে কথা মাথায় রাখছে। 
 
মেয়েদের আবাসিক সমস্যা নিরসনে ২০ তলাবিশিষ্ট আধুনিক বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব নামে একটি হল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। যেখানে এক হাজার ছাত্রী অবস্থান করতে পারবেন। পুরো উদ্যমে এই হলের নির্মাণকাজ চলছে। সরকারের সহযোগিতায় এবং হল পুনরুদ্ধার কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে বেদখল হওয়া কয়েকটি ছাত্রাবাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেগুলোর বর্তমান স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। জায়গা কম হওয়ায় সেখানে পূর্ণাঙ্গ হল হবে না। কাজেই এগুলোর বিকল্প ব্যবহারের পথ খোঁজা শুরু হয়েছে।
 
সেই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেটা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। চলতি জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকটি মিটিং করে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। এখন সেটি একনেকে যাবে। আড়াইশ কোটি টাকার এই প্রকল্প একনেকে পাস হলে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পথে বড় ধরনের মাইলফলক হবে। এই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পে দুই বড় কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি বিশ তলা দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ। বর্তমানে বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ভবনটি ভেঙে সেখানে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আর একটি হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের জন্য একটি হল নির্মাণ। হল নির্মাণের জন্য ঢাকা কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত জেলখানার বিপরীত দিকে ঢাকা মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২৩ বিঘা জমি ইতোমধ্যেই ক্রয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আশপাশের আরো কিছু সরকারি জায়গা মিলে সেখানে প্রায় ২৫ বিঘা জায়গা আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
 
চলতি বছরেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন, শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে পূর্বাচল সিটিতে ৫০ একর জমির জন্য আবেদন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। সরকারের বিজ্ঞাপন অনুসারে সেই আবেদন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জমি বরাদ্দ করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে জমি পাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে। তাহলে হুট করে কিউট বিপ্লবীদের নাজিমউদ্দীন রোডের জমির দিকে নজর গেল ভাববার বিষয়!
 
লেখক : সাংবাদিক
 
বিবার্তা/মৌসুমী
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com