জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে প্রায় সকলেরই একটা সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে মাদ্রাসা কিংবা স্বল্পশিক্ষিত দারিদ্র্যপীড়িতরাই এই আফিমে মজ্জিত।
কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে আজ ধীরে ধীরে এটা উন্মোচিত হয়েছে যে, শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরাই নয়, বরং উত্তরাধুনিক সমাজের সন্তানেরাও এই মানববিধ্বংসী খেলায় ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছে।
জরিপ কিংবা পরিসংখ্যানগত তথ্যাদি থেকে প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায়, জঙ্গি নামক অমানবিক তৎপরতায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, বাবা-মার রক্ত-ঘামে উপার্জিত কাড়ি কাড়ি টাকায় এরা মেতে চলেছে এই ঘৃণ্য নেশায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন এই জঙ্গিবাদের শয়তানি আখড়া গড়ে উঠছে ? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার পূর্বেই অবশ্য বিজ্ঞ জ্যোতিষীরা বিভিন্ন উক্তি-প্রত্যুক্তির খেলায় মেতে উঠেছেন এবং নোংরা হলেও সত্য, রঙচং মাখানো খবর প্রকাশে কিছু মিডিয়ারও তারিফ না করলেও হয়তো তাদের অপমানই করা হবে ।
আমরা জানি, অভিভাবকহীন রাষ্ট্র, গোষ্ঠী কিংবা এককথায় বললে মানবসমাজের সুস্থভাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। অন্তত সৃষ্টির ইতিহাস তাই-ই বলে। সেই অভিভাবকহীন বেহাল দশাই আজ আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।
প্রাপ্ত হদিস অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৭৯ টি । তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এর মাঝে প্রায় ২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কোনো ভিসি নেই এবং ৪৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো
কোষাধ্যক্ষ নেই !
অনেকে হয়তো এও বলতে পারেন, রাজনৈতিক চর্চা না থাকায় এই ধরণের ক্রিয়ায় মত্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে কিন্তু পাল্টা জবাব আসতে পারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তো রাজনীতির চর্চা হয়, তারপরও কেন
সেখানকার একজন শিক্ষক জঙ্গি ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছিলেন।
বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিসন্ধি নেই সত্য, তবে মরচে পড়া মস্তিষ্কমেশিনে একটু তা দেবার ইচ্ছে সত্যিই আছে। সেই ইচ্ছে নিয়ে বলছি, সত্যিকার অর্থে এখন প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অধিক নজর দেয়া এবং সেই সাথে বাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। কেননা, এই সহজিয়া বাংলার সহজ সংস্কৃতিতে কখনই কোনো বিদ্বেষ ছিল না, ঘৃণা ছিল না। ছিল প্রেম এবং অপার ভ্রাতৃত্ববোধ।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রলীগ
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন