মস্তিস্ক যখন চুলার ওপর ভাতের মতো ফুটতে আরম্ভ করে, মন তখন রাখঢাক ছেড়ে জমানো কথাগুলোকে সরাসরি উগরে দেয়। তলানিশূন্য তথ্য নিয়ে শুধুমাত্র বিতর্কের ইন্ধন যোগানোর তাগিদে যারা বুলি ছোঁড়েন তাদের একটা ছোট্ট গল্প বলি।
এক ব্যক্তির দুই রুমের একটি বাসার এক রুম কোনো কারণে অগ্নিদগ্ধ বা বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেটাকে মেরামত করে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লেগেছিল প্রায় ২১০ দিন (সাত মাস)।
১৯৭২ সালে সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাঁধে ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যার সমস্ত অবকাঠামোই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে গিয়েছিল। আর এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্যে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন মাত্র ১,৩১৪ দিন। বিধ্বস্ত প্রায় ৪৩ লাখ ঘরবাড়ি, ৯০০ কলেজ, ১৮ হাজার প্রাইমারী স্কুল, ১৯ হাজার গ্রাম এবং রাস্তাঘাটসহ কিছুই অবশিষ্ট ছিল না আমাদের।
এই স্বল্প সময়ে অভ্যন্তরীণ খাদ্যচাহিদা, জনগণের পুনর্বাসন এবং বৈদেশিক স্বীকৃতি ছাড়াও আরো একটি বিষয় তাকে বেশ ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। তা হল অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চক্রান্ত। একদিকে বঙ্গবন্ধু তার বিধ্বস্ত বঙ্গমাতাকে পুনর্গঠনে সমস্ত শক্তি নিয়ে মহাব্যস্ত, অন্যদিকে চলছিল বঙ্গমাতাকে বিক্রির পাঁয়তারা। যার ফলস্বরূপ দেশের অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো ভাঙার উদ্দেশ্যে সেই পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা ১৯৭৪ সালে ঘোড়াশাল সারকারখানায় হামলা চালিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন সমমূল্যের ক্ষতিসাধন করেছিল। এতেই ক্ষান্ত ছিল না ওরা। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার জনগণ যখন স্বাধীনতার তৃতীয় বছর পালনে উন্মুখ, তখন তেহরিক-ই-ইসলামী, নেজামে ইসলামী নামক সংগঠনগুলো পাকিস্তানের কাছে সহায়তা চেয়ে তিনটি বার্তা পাঠিয়েছিল। অর্থ, বেতার ও অস্ত্র - এই তিনটি সহায়তা পেলে তারা নাকি পুনরায় এদেশকে পাকিস্তান করে ফেলবে, এই অঙ্গীকারনামা পাঠায়।
এছাড়াও আরো অজস্র সমস্যা এবং সংকট তো ছিলই। অন্যদিকে ৭৪'এর বন্যায় বিদেশি চক্রান্তে দেশে চলছিল দুর্ভিক্ষ। তবুও কি মানুষটা কি বসে ছিলেন? না। দেশ ও মানুষের ভাগ্য বদলের জন্যে অনবরত দেশের এবং বিশ্বের এমাথা থেকে ওমাথা চষে বেড়িয়েছেন। মানুষের মুক্তির কথা বলতে গিয়ে জীবনের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় পার করেছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
এরপরও তার প্রতি যারা নিন্দার তীর ছোঁড়ে, তাদের প্রতি ভর্ৎসনা নয়, রইল অনন্তকালের অভিশাপ।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন