এই বইটা জাফর ইকবাল স্যারের স্কুলজীবনের স্মৃতি। ‘আধ ডজন স্কুল’ নামের বইটা যখন আমি প্রথম পড়ি, তখন সবে আমার হাতেখড়ি হয়েছে। স্কুলজীবন তখন মাত্র শুরু করেছি, তাই তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি স্কুলজীবনটা আসলে কীরকম হয়।
তারপর আরো অসংখ্যবার বইটা পড়ে আমি আমার স্কুলজীবনটা নিয়ে ভেবেছি।
স্যারের স্কুলের প্রথম দিনের ঘটনাটি ইন্টারেস্টিং, আবার একই সঙ্গে দুঃখজনকও। স্যারের প্রথম স্কুলের নাম কিশোরী মোহন পাঠশালা। স্যারের ভাষ্যমতে, একটু হাবাগোবা গোছের ছিলেন বলেই হয়তোবা তাকে বড় বোন শেফুর সাথে এক ক্লাসে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু স্কুলের প্রথম দিনটিতেই স্যার শিক্ষকের হাতে জীবনের প্রথম মারটি খেয়েছিলেন, তাও সম্পূর্ণ বিনা কারণে।
তবে সবচেয়ে মজার অংশ যেটা, সেটা হলো স্কুল ছুটি ঘোষণার দিন শিক্ষকের জন্য জাফর ইকবাল স্যার ফুলের মালার বদলে বিস্কুটের মালা নিয়ে গিয়েছিলেন। সব ফুল শেষ হয়ে যাওয়ায় স্যার বিস্কুটের মালা নিয়ে যান। আর এই চমকপ্রদ আইডিয়াটি ছিল স্যারের বাবার ! ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে না পেরে স্যার তাঁর শিক্ষকের দিকে বিস্কুটের মালাটি দূর থেকে ছুঁড়ে মারেন, আর সেটা গিয়ে পড়ে শিক্ষকের কানে!
আরো কত মজার মজার স্মৃতি! পুরো বইটাতে স্যার তাঁর স্কুলজীবনের এরকম অসংখ্য স্মৃতি বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর কোনোটা মজার, কোনোটা হাস্যকর আবার কোনোটা রোমাঞ্চকর। কিন্তু স্কুলজীবন যে কতটা বৈচিত্র্যময় হতে পারে, এই বইটা না পড়লে হয়তো সেটা বুঝতেই পারতাম না।
পড়তে পড়তে হঠাৎ আমার নিজের স্কুলটার কথা মনে পড়ল। আমি ঢাকা শহরের একটা মোটামুটি নামকরা একটি স্কুলে পড়েছি। চমৎকার একটা স্কুল ছিল সেটা। স্কুলজীবন শেষ করেছি খুব বেশি দিন হয়নি, জীবনটা খুব একটা খারাপ ছিল, সেটাও বলা যাবে না। কিন্তু এই বইটা পড়ে সত্যিই আমার খুব আফসোস হয়েছে। স্যার যেরকম স্কুলজীবন পেয়েছেন, সেরকম হয়তো আমার মতো অনেকেই পায়নি। এত দুষ্টুমি, এত আনন্দ, রোমাঞ্চ হয়তো এখনকার যুগে, অন্তত ঢাকা শহরের স্কুলে পাওয়া খুব-একটা সহজ নয়।
আসলে আনন্দ খুঁজে পেতে বোধহয় খুব বিখ্যাত স্কুলে পড়া লাগে না। কিন্তু সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল, তারপর কোচিং, এসব থেকে নির্দোষ আনন্দ খুঁজে বের করে আনাটা খুব কঠিনই বলা চলে।
বইয়ের শেষ অংশে স্যার চমৎকার একটা স্কুলে পড়া ছোট্ট একটা মেয়েকে তাঁর স্কুলের গল্প শোনানোর কথা লিখেছেন। গল্পগুলো শুনে মেয়েটি বিষণ্ন হয়ে স্যারকে বলে, ‘ইশ! কি মজাই না হতো তোমাদের স্কুলে! আমি যদি কোথাও পেতাম তোমাদের মতো একটা স্কুল!’
আজ অনেকদিন পর ওই বইটা আবার পড়ে আমারও মনে হলো, আমিও যদি কোথাও পেতাম এরকম একটা স্কুল!
লেখক : শিক্ষার্থী, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বিবার্তা/মৌসুমী